গরুর সাহায্যে চলাফেরা করা অন্ধ কাজেম আলীর গল্প
Published: 29th, August 2025 GMT
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৬০ বছর বয়সী কাজেম আলী। ছোটবেলায় চোখে দেখতে পেলেও যুবক বয়সে হারান দৃষ্টিশক্তি। অনেক চিকিৎসার পরেও ফিরে পাননি চোখের আলো। তবে, দমে না গিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন গরু পালনের।
শুনেতে অবাক লাগলেও, পাঁচ বছর আগে পালন করতে আনা গরুই এখন কাজেম আলীর বন্ধু ও ভরসা। গরুর দেখানো পথ ধরেই হাঁটেন তিনি। এই প্রাণীটিকে খাবার খাওয়ানো, গোসল করানো, মাঠে নিয়ে চড়ানো থেকে সব কিছুই নিজের হাতে করেন কাজেম আলী। সুস্থ মানুষ যেখানে চলাফেরায় সমস্যায় পড়েন, সেখানে গরুর সাহায্যে কাজেম আলীর নির্ভুল চলাফেরা অবাক করে স্থানীয়দের।
আরো পড়ুন:
রুবেল দেখিয়েছেন সাফল্য শুধু চাকরিতে নয়, ঘাস থেকেও পাওয়া যায়
পুরাতন আসবাবপত্রের প্রাণকেন্দ্র কালীগঞ্জের নয়াবাজার
এলাকাবাসী জানান, নবাবগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খোকার ছেলে কাজেম আলী অন্ধ হওয়ার পর জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে গরু পালনের সিদ্ধান্ত নেন। পাঁচ বছর আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ছোট একটি গরু আদি (লালন-পালনের জন্য) নেন তিনি। পরম যত্নে পালন করতে শুরু করেন গরুটি। গোসল করানো থেকে শুরু করে খাবার খাওয়ানোর কাজ নিজ হাতে করতে থাকেন। দিনের অধিকাংশ সময় গরুটির পেছনে ব্যায় করতেন। এ ভাবেই গরুটির সঙ্গে কাজেম আলীর গড়ে ওঠে অদ্ভুত এক সম্পর্ক। এক পর্যায়ে এই গরু পথ দেখিয়ে কাজেম আলীকে মাঠে ও বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে শুরু করে।
গ্রামবাসী আজিজার রহমান বলেন, “চোখ থাকলেও আমরা অনেক সময় ভুল করি। তবে, কাজেম আলী গরুর সহায়তায় এতটা নির্ভুলভাবে চলাফেরা করেন যে আমরা অবাক হই। সমাজের সামর্থবান ব্যক্তিরা যদি তাকে একটি গরু কিনে দেন, তবে তার সংসার অনেকটাই স্বচ্ছল হবে।”
এলাকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, “অন্ধ হয়েও কারো কাছে হাত না পেতে কাজ করে খাচ্ছেন কাজেম আলী। আমরা সবাই যদি সামান্য সহযোগিতা করি, তাহলে তার জীবনে অনেক পরিবর্তন আসবে।”
গ্রামবাসী শফিকুর ইসলাম বলেন, “অন্ধ হলেও পরিশ্রম করে জীবনযাপন করা কাজেম আলী সমাজের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। নিজের শক্তি আর এক টুকরো দৃঢ় মনোবল নিয়েই তিনি লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। তার পাশে সমাজ ও সামর্থবান ব্যক্তিরা দাঁড়ালে তার সংগ্রামী জীবন আরো সহজ হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।”
কাজেম আলী বলেন, “আমি কারো কাছে হাত পাততে চাই না। আমার গরুই আমার সহায়। ওই আমাকে মাঠে নিয়ে যায়, আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। আমি গরুকে খাওয়াই, গোসল করাই, নিজের সন্তানের মতোই তাকে দেখি। গরুটি অন্যের, যদি নিজের একটি গরু থাকতো তাহলে জীবন কিছুটা হলেও সুখে কাটতো।”
নবাবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শুভ্র প্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, “কাজেম আলীকে ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া সমাজসেবার অধীনে থাকা অন্যান্য সুবিধাও পর্যায়ক্রমে তাকে দেওয়া হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই কাজেম আলীর মতো সংগ্রামী মানুষ যেন আরো ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। সমাজসেবার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।”
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত গর ক জ ম আল র
এছাড়াও পড়ুন:
বাহরাইনের প্রতি বাংলাদেশিদের জন্যে ভিসা চালুর অনুরোধ
ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকসহ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করতে বাহরাইনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
উপদেষ্টা দু’দেশের জনগণের সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ভিসা পুনরায় চালুর এ অনুরোধ জানান।
বাহরাইনে ২১তম আইআইএসএস মানামা সংলাপের ফাঁকে শনিবার (১ নভেম্বর) দেশটির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন খালিফা আল ফাদেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এ সময়ে ভিসা পুনরায় চালুর অনুরোধটি জানান উপদেষ্টা।
রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে তৌহিদ হোসেন কমিউনিটির কল্যাণ নিশ্চিত এবং সামাজিক সম্পর্ক মজবুতের লক্ষ্যে বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘ফ্যামিলি ভিসা’ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করারও অনুরোধ জানান।
বাহরাইনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির অর্থনীতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, তার দেশের সরকার ধাপে ধাপে ভিসা সুবিধা পুনরায় চালুর জন্য কাজ করছে।
বৈঠকে উভয়ে দু’দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তরে একটি চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
তৌহিদ হোসেন ২১তম মানামা সংলাপের অধিবেশনের পাশপাশি আরো কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এসব আয়োজনে বিশ্ব নেতা, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নীতি নির্ধারকরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবেন।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইভা