সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর রেল অবরোধ তুলে নিলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
Published: 2nd, September 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রেলপথ থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি পূবালী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দেওয়া তালাও খুলে দিয়েছেন তারা। তবে কোষাধ্যক্ষ ভবন এখনো তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশ্বাসে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই অবরোধ তুলে নেন তারা।
আরো পড়ুন:
রাবিতে দেরিতে হলে প্রবেশ করায় ৯১ ছাত্রীকে তলব, সমালোচনার পর প্রত্যাহার
চবিতে সংঘর্ষে ৪২১ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত
এদিকে, অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা বলেছিলেন, তাদের এ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য। যতদিন না তাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে, ততদিন এই ভবনগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকবে।
এর আগে, কম্বাইন্ড (সমন্বিত) ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিতে দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
এরপর বেলা ১টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ভবনে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি–সংলগ্ন পূবালী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেন।
আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, “কম্বাইন্ড ডিগ্রি নিয়ে চলমান এই আন্দোলন সমাধানের জন্য আমরা নিঃশর্তভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে রাজি হয়েছি। ঠিক ওই সময় পর্যন্ত এই অবরোধ প্রত্যাহার করেছি। আমরা চাই না ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক খারাপ হোক। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে গত ১ মাস ধরে আমরা যে যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি, আমরা চাই সেটির ফলপ্রসূ সমাদান হোক।”
রেল অবরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, “জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়, সেভাবে আমরা যৌক্তিক আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমরাও চাই, এই আন্দোলন আরো দীর্ঘ না হোক। তাই আলোচনায় বসতে রাজী হয়েছি। তবে আলোচনা যদি ফলপ্রসূ না হয়, তাহলে আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলমান থাকবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য চলমান এই আন্দোলন যৌক্তিক।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর ধ ত ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা
‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা।
গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা।
রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”
আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”
আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”
আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
সুচরিতা/শাহেদ