বন্দরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিজয় র‌্যালি ও মিছিলে যুবলীগ নেতার প্রথম সাড়িতে ব্যানার ধরার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

বেশ কয়েকজন নেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন সেই যুবলীগ নেতা মোমেনকে ব্যানার ধরার মত সুযোগ কে বা কারা করে দিলো। তা নিয়ে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এবার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসলো সেই যুবলীগ নেতাকে বিএনপিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া বিএনপি নেতার নাম। তিনি হলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন মিয়া।

শাহীনের হাত ধরেই যুবলীগ নেতা মোমেন মিয়া মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এর ব্যক্তিগত কার্যালয় পর্যন্ত পৌছে। গত ২২ আগস্ট ছিল অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের জন্মদিন।

ওই দিন তার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৃতীয় তলায় মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লোকজন নিয়ে সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিনের কেক কাটতে যান। সাথে করে নিয়ে যান যুবলীগ নেতা মোমেন মিয়াকে।

একটি ফেসবুক পেইজে সেই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা গেছে। সেখানে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এর বাম পাশে ছিলেন শাহিন মিয়া এবং দুজনের মাঝখানের ফাঁকাতেই দেখা গেছে মোমেন মিয়াকে।

এ সময় সাখাওয়াত হোসেন খান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নেতাকর্মীদের চাওয়া থাকে। তারা চায় গত ১৫ বছর যারা মাঠে ছিল, আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, মামলা হামলার স্বীকার হয়েছে। দলের জন্য কাজ করেছে, তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয় এটাই জনগণ চায়।

একজন যুবলীগ নেতাকে পাশে নিয়ে সাখাওয়াত হোসেন খান এর এমন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।

এদিকে ১ সেপ্টেম্বর সকালে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে চাষাঢ়া, ২নং রেল গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালির শুরুতে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা যখন ব্যানার নিয়ে র‌্যালি শুরু করেন তখন শীর্ষ নেতাদের সাথে প্রথম সারিতেই দাঁড়িয়ে ব্যানার ধরেছে যুবলীগের ওই নেতা মোমেন মিয়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর মোমেনকে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ এই মোমেন মিয়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালীন সময় মদনপুরের যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামানের মাধ্যমে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.

এ রশিদের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

এরপর তিনি দীর্ঘ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ভোগ করে। যুবলীগ নেতা অহিদের সাথে মিলে ব্যবসা বাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে জুলুম নির্যাতন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন মোমেন। এমনকি ৪ আগস্ট মদনপুরে ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রতিহত করে যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদের নেতৃত্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থাান নিয়ে ছিলেন মোমেন।

সেই মোমেন ৫ আগস্টের পর থেকে ফের বিএনপি নেতা বেেন গেছেন। নিজেকে যুবদলের ত্যাগী কর্মী হিসেবে উপস্থাাপন করতে একটি গুজামিলের সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন।

মোমেন বিষয়ে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন জানান, মোমেন নামের একজন আওয়ামী লীগ করতো তার অনেক ছবি ফেসবুকে দেখেছি। সে কবে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করলো, কবে বিএনপিতে জয়েন করলো, কোন নেতা তাকে জয়েন করালো, কার নেতৃত্বে বিএনপি করে আমার জানা নাই।

সম্প্রতি বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ করেছিলেন মোমেন মিয়া। তিনি বিগত বছর গুলোতে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও এখন তিনি কিভাবে বিএনপির সদস্য ফরম পেলো। কে তাকে এসব ফরম বিতরণ করতে বললো এ নিয়েও প্রশ্ন উঠে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেনি।

যুবলীগ নেতা মোমেন সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রমাণ রয়েছে আর শাহিন তাকে সাখাওয়াত হোসেন চেম্বার পযন্ত নিয়ে গিয়ে কেক কেটেছে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাা নিবেন কিনা

এ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আল ইউসুফ খান টিপু জানান, আমি মোমেনকে চিনি না, বিএনপি করে কি না তাও জানি না। সে যদি কেক কাটে এ ব্যাপারে তারা বুঝবে। আমি এ বিষয়ে আমি আহ্বায়কের সাথে কথা বলবো।

মোমেন তো যুবলীগ নেতা ছিল, তাকে কিভাবে সাখাওয়াত হোসেন পর্যন্ত নিয়ে গেলেন আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম সাড়িতে ব্যানার ধরালেন এমন প্রশ্নে অস্বীকার করে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন মিয়া, বলেন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কে কখন কার মিছিলে যায় কেউ তো বলতে পারবে না। তাছাড়া আমি কেন মোমেনকে নিয়ে যাবো।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র জন ত ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন ত কর ম দ র য বল গ ন ত কর ছ ল ন র সদস য ন ব এনপ আগস ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ