চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের নজিরবিহীন সংঘর্ষে প্রায় ৫০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা শঙ্কাসহ বিভিন্ন কারণে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।

তবে মহরম আলী রুবেল নামে এক রিকশাচালক সেদিন আহত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে পৌঁছে দেন বিনামূল্যে। ভয়াল সেই সময়ে এভাবে এগিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

‘ব্যালট ও ভোট গণনার মেশিন কেনায় পক্ষপাতিত্ব ছিল না’

কিছু অসঙ্গতি আছে, ভোট সুষ্ঠু হলে জিতব: শিবিরের ভিপি প্রার্থী

রিকশাচালক রুবেল থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায়। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায়। ১৩ বছর ধরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিকশা চালান।

সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন ৩১ আগস্ট শুরু থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় শিক্ষার্থীরা আহত হতে থাকলে তাদের বিনামূল্যে নিজ গাড়িতে মেডিকেল সেন্টারে পৌঁছে দেন। অনেক আহত শিক্ষার্থীকে তিনি নিজে রিকশায় উঠিয়েছেন। তার গাড়িতে এখনো লেগে আছে আহতদের রক্তের লাল চিহ্ন।

এ বিষয়ে রুবেলের সঙ্গে কথা হয় রাইজিংবিডি ডটকমের। তিনি বলেন, “সেদিন যখন দেখেছি শিক্ষার্থীরা দেদারসে আহত হচ্ছে, তখন আমি তাদের মেডিকেলে পৌঁছাতে তৎপর হয়ে উঠি। শিক্ষার্থীদের যেভাবে আহত করা হচ্ছিল, সেটা কোনোভাবেই আমার সহ্য হচ্ছিল না। ৯০ জনের মতো আহত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। এজন্য আমি কোনো টাকা নেইনি। মানবিকতার দিক দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।”

তিনি বলেন, “এর মধ্যে কিছু আহত শিক্ষার্থীকে আমি নিজে রিকশায় উঠিয়েছি। আমার জামায় রক্তের দাগ লেগেছিল। এখনো রিকশার কয়েক জায়গায় রক্তের দাগ লেগে আছে, যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি এই দাগ মুছিনি।”

সেদিন শিক্ষার্থীদের পাশে এভাবে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় কিছু চালক ও বাসিন্দার কাছ থেকে পরবর্তীতে তিনি হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এজন্য অবশ্য ভয় পাচ্ছেন না তিনি।

রুবেল বলেন, “আহত শিক্ষার্থীদের সেদিন মেডিকেলে নেওয়ায় স্থানীয় ১০-১২ জন আমাকে হুমকিও দিয়েছে। তারা বলছে, আমি কেন শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে নিয়েছি। আমি তাদের বলেছি, পেট চালাতে ভাড়া মেরেছি। তারা (শিক্ষার্থীরা) আমাকে টাকা দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রক্টর অফিসে জানিয়েছি। আমি ভয় করছি না। আমি তো কোনো অন্যায় কাজ করিনি।”

স্থানীয়দের হামলার সেই কঠিন সময়ে এভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার জন্য রুবেলের প্রশংসা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহাদ সায়েম ফেসবুকে লেখেন, “৩১ আগস্ট সন্ত্রাসী হামলায় যখন আমাদের একের পর এক ভাই আহত হচ্ছিলেন, তখন এই মামা সাহসের সাথে তার রিকশা নিয়ে স্পটে আসেন এবং অধিকাংশ আহত ভাইদের হসপিটালে নিয়ে যান এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবা তিনি দিয়েছিলেন।”

তিনি বলেন, “সেই সময়টাতে রিকশা-সিএনজি একদম কমে গিয়েছিল। সে কঠিন সময়ে এই মামা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সাহায্য করেছিলেন। সত্যিই এটা বিরাট প্রশংসনীয় কাজ। তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মো.

আবু তাহের ফেসবুকে লেখেন, “উনাকে সেদিন কোনো টাকাই দিতে পারিনি। আমি নিজে মেইন স্পট থেকে কমপক্ষে ৫০-৬০জন আহত শিক্ষার্থীদের উনার রিকশায় করে মেডিকেল নিয়ে আসছি “

তিনি বলেন, “যেকোনোভাবেই হোক উনাকে আর্থিক সহায়তা করার জন্য অনুরোধ রইলো। রক্তক্ষয়ী সেই সময়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আগেও জেনেছি, তিনি অনেক ভালো একজন মানুষ। সেলুট তাকে।”

এদিকে রুবেলের মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের জন্য বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) তাকে পুরস্কৃত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এ সময় তার হাতে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, “চিন্তায় ও মননে পুরাদস্তুর মানবিক একজন মানুষ রুবেল। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় ৮৩ জন আহত শিক্ষার্থীকে চবি মেডিকেল সেন্টারে বিনাভাড়ায় নিজের রিক্সায় যাত্রী হিসেবে সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। প্রক্টরিয়াল টিমের পক্ষ থেকে রুবেলকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তার সরলতা, সততা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের জন্য এই পুরস্কার।”

রবেলের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, “সেদিন আহত শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কয়েকজন তাকে হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি তিনি প্রক্টর অফিসে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে চালক সমিতির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আমরা এ ব্যাপারে কথা বলেছি। ”

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ানের চড়-থাপ্পড়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের চলে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ধারালো বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। এতে শতাধিক গুরুতর ও আশঙ্কাজনকসহ প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী-শিক্ষক আহত হন।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত শ ক ষ র থ দ র আহত শ ক ষ র থ ক ন আহত শ ক ষ র থ আম দ র ম নব ক স ঘর ষ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ