উপকূলের নারীদের সংগ্রাম কি নীতিনির্ধারকের কানে পৌঁছাচ্ছে
Published: 16th, September 2025 GMT
বাংলাদেশের উপকূল বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ড। একদিকে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য আর অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির মিতালি। নির্মল এই ছবির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক নীরব অভিশাপ। তার নাম লবণাক্ততা।
সমুদ্রের লোনাজল আজ শুধু পানিতে সীমাবদ্ধ নেই। এটি মিশে গেছে এই অঞ্চলের মানুষের রক্ত, ঘাম আর প্রতিদিনের সংগ্রামে। সেই সংগ্রামের অগ্রভাগে রয়েছেন অদম্য নারীরা। জলবায়ু পরিবর্তন আর মানবসৃষ্ট সংকটকে সঙ্গী করে তাঁরা কীভাবে টিকে থাকেন, সেই গল্পগাথাই আজ আমাদের উপজীব্য।
আশির দশকে চিংড়িকে ‘ব্লু গোল্ড’ বা ‘সোনালি সম্ভাবনার’ স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রণোদনা আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার হেক্টর ধানখেত রূপান্তরিত হয়েছিল চিংড়ির ঘেরে। রপ্তানি আয় বাড়ার এই লোভনীয় হাতছানিতে লবণাক্ত পানি সচেতনভাবে প্রবেশ করানো হয় মিঠাপানির অঞ্চলে।
স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় কৃষকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন চলতে থাকে। যে জমিতে একসময় সোনার ধান ফলত, তা ধীরে ধীরে বন্ধ্যা হয়ে পড়ে। এর সামাজিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ক্ষমতা আর অর্থের জোরে কৃষকের জমি দখল হয় এবং একটি ভূমিহীন শ্রেণির জন্ম হয়। এই সামাজিক ভাঙনের প্রথম ও সবচেয়ে বড় শিকার হন নারী ও শিশুরা। যে চিংড়িকে ভাবা হয়েছিল আশীর্বাদ, তা-ই যেন আজ উপকূলের জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি অভিশাপের নাম। এই পরিবর্তিত বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে নারীদের।
উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র অভাব। একটি ওয়াটার ট্যাংক হয়তো একটি গ্রামের পানির চাহিদা মেটাতে পারে, কিন্তু যখন পুরো একটি অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে যায়, তখন প্রয়োজন হয় সমন্বিত ও বৃহৎ আকারের পরিকল্পনার। যার অভাবে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হয় নারীদের। কারণ, এখানকার প্রায় সব পরিবারের খাওয়ার পানি নারীদেরই সংগ্রহ করতে হয়।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ফাতেমা বেগমের কথাই ধরা যাক। তাঁর দিন শুরু হয় ভোরের আলো ফোটার আগে। পরিবারের সবাই যখন ঘুমে, তাঁকে ছুটতে হয় নিরাপদ পানির সন্ধানে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের একটি পুকুর থেকে তাঁকে পানি বয়ে আনতে হয়। লবণাক্ততার কারণে গ্রামের বেশির ভাগ নলকূপ আর পুকুর এখন ব্যবহারের অযোগ্য। কাঁখে ভারী কলসি আর পায়ে কাদা মেখে এই পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর প্রতিদিনের রুটিন। তাঁর এই যাত্রায় সঙ্গী হয় গ্রামের অন্যান্য বাড়ির নারীরা।
পানি এনেই শেষ নয়, এখানকার অনেক নারীকেই ছুটতে হয় নদীতে অথবা চিংড়ির ঘেরে। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোনাপানিতে চিংড়ির পোনা ধরে সেগুলো ঘেরে ছাড়া বা মাছের খাবার দেওয়ার কাজ করতে হয়। পায়ের আঙুলের ফাঁকে লবণাক্ত পানির কারণে ঘা হয় অনেকেরই। এ ছাড়া অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তো লেগেই থাকে। তীব্র যন্ত্রণা হলেও কাজ থামানোর উপায় নেই। কারণ, তাঁদের আয়ের ওপর সংসারের অনেকটা নির্ভর করে। দিন শেষে বাড়ি ফিরে আবার রান্নাবান্না আর সংসারের হাজারো কাজ। নিজের শরীরের দিকে তাকানোর ফুরসতটুকুও তাঁর মেলে না। এই গল্প কোনো বিচ্ছিন্ন গ্রামের ঘটনা নয়, এটিই উপকূলের অনেক গ্রামের হাজারো নারীর প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।
উপকূলীয় নারীর জীবন এক অনন্ত সংগ্রামের নাম। দিনের বড় একটি সময় তাঁদের লবণাক্ত পানিতে নেমে কাজ করতে হয়, যা তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। লবণাক্ত পানির আগ্রাসন শুধু মাটির গভীরে নয়, নারীর শরীরের গভীরেও পৌঁছেছে। দীর্ঘক্ষণ লোনাপানিতে কাজ করার ফলে নারীদের মধ্যে চর্মরোগ, খোসপাঁচড়া ও চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর চেয়েও ভয়াবহ হলো জরায়ুর সংক্রমণ। অপরিষ্কার ও লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে বহু নারী মাসিকের সময় জটিলতায় ভোগেন এবং জরায়ুর ইনফেকশনসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হন। সামাজিক লজ্জা ও দারিদ্র্যের কারণে তাঁরা সহজে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না।
এই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অপ্রতুলতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফলে একটি নিরাময়যোগ্য রোগও দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই শারীরিক সংকট কেবল নারীদের একার নয়, এটি প্রভাব ফেলে পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও। অসুস্থ মায়েদের সন্তানেরা প্রায়ই অপুষ্টি আর নানা জটিলতা নিয়ে জন্মায়।
তবে উপকূলের এসব নারী শুধু পরিস্থিতির শিকার হয়ে বসে থাকেননি। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কাজের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমালে সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে নারীর ওপর, যা তাঁদের জীবনসংগ্রামকে আরও কঠিন করে তোলে। তাঁরা এই লবণাক্ততাকে সঙ্গী করেই খুঁজে নিয়েছেন নতুন পথের দিশা। প্রতিকূলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে তাঁরা হয়ে উঠেছেন একেকজন সফল উদ্যোক্তা।
যে লবণাক্ততা তাঁদের ধান চাষ কেড়ে নিয়েছে, সেই লোনাজলেই তাঁরা শুরু করেছেন কাঁকড়া চাষ। পরিবারের পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এসব নারী কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পরিবারের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। ফাতেমার মতো নারীরাও এখন চিংড়ি ঘেরের কাজের পাশাপাশি বাড়ির উঠানে ছোট খাঁচায় কাঁকড়া চাষ করছেন।
এর পাশাপাশি গৃহস্থালির সার্বিক দায়িত্বও তাঁরা সামলান। বাড়ির উঠানে হাঁস-মুরগি পালন কিংবা গবাদিপশু চরানো তাঁদের দৈনন্দিন কাজের অংশ। এসব থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে সন্তানের পড়াশোনার খরচ বা পরিবারের ছোটখাটো চাহিদা মেটানো হয়। অনেকে আবার হস্তশিল্পের মতো সৃজনশীল কাজেও নিজেদের যুক্ত করেছেন। নকশিকাঁথা বোনা বা স্থানীয় উপকরণ দিয়ে শোপিস তৈরি করে তাঁরা বাড়তি আয়ের সংস্থান করছেন। এই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা তাঁদের শুধু আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে না, পরিবারে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে নারী আগে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারতেন না, তিনিই আজ পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তপ্রণেতা।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকটে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বড় ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। লবণাক্ততা-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন ও তা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিভিন্ন এনজিও নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে সেলাই ও অনেক বিকল্প পেশার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এসব উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল। উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া প্রকল্পগুলো অনেক সময়ই সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায় না অথবা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হয় না। নারীদের জন্য নেওয়া প্রশিক্ষণগুলোও অনেক সময় বাজারজাতকরণের অভাবে পুরোপুরি সফল হতে পারে না। ফলে এসব নারীর টিকে থাকতে হয় মূলত নিজেদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করেই।
এসব নারীর এই সংগ্রাম কেবল বেঁচে থাকার জন্য নয়। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার লড়াই। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন, কীভাবে লবণ-সহনশীল সবজির চাষ করতে হয়। বাড়ির পাশে ছোট্ট এক টুকরা জমিতে তাঁরা পুঁইশাক, লাউ বা ঢ্যাঁড়সের মতো সবজি ফলিয়ে পরিবারের পুষ্টির জোগান দেন।
উপকূলের এসব হার না–মানা নারী শুধু টিকে থাকার যোদ্ধা নন, তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সম্মুখসারির পথিকৃৎ। তাঁদের জীবনগাথা কেবল বঞ্চনা আর কষ্টের নয়; বরং সাহস আর ঘুরে দাঁড়ানোর এক জীবন্ত দলিল। বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যখন জলবায়ু ন্যায্যতা নিয়ে আলোচনা হয়, তখন উপকূলের এসব নারী তাঁদের দৈনন্দিন সংগ্রামের মাধ্যমে সেই ন্যায়ের বাস্তব রূপটি দেখিয়ে দেন।
একেকটি নতুন দিন তাঁদের জন্য নিয়ে আসে একেকটি নতুন লড়াইয়ের আহ্বান। আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করেন, জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, সংগ্রামের মাধ্যমে জয়ী হওয়া সম্ভব। তাঁদের এই অদম্য মানসিকতা আর অভিযোজনের ক্ষমতা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য এক অশেষ অনুপ্রেরণার উৎস।
আল শাহারিয়া
শিক্ষার্থী
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
মেইল: [email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লবণ ক ত প ন পর ব র র র জন য ন উপক ল র এসব ন র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত