যোহরের নামাজে ফরজ শেষে সুন্নত না পড়ার কারণে মাদরাসার এক শিশু শিক্ষার্থীর মুখে টুপি গুজে দিয়ে বেধড়ক পিটুনির অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নির্মম মারধরের শিকার ওই মাদ্রাসা ছাত্র বর্তমানে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। শিশুটির পুরো শরীর জুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন। 

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় অভিযুক্ত শিক্ষকসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলার এজহার জমা দিয়েছেন ওই ছাত্রের বাবা।

এরআগে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় জেলা শহরের লিচুতলা এলাকার আত-তাক্বওয়া ওয়াসসুন্নাহ হিফজ্ মাদ্রাসায়। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম হাফেজ মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সাব্বির হোসেন নাসির (১২)। তার বাড়ি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকায়। স্বর্ণকার বেলাল হোসেন ও গৃহিনী ইয়াসমিন আক্তারের একমাত্র ছেলে নাসির মাদরাসাটিতে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছে।

নসিরের বাবা বেলাল হোসেন জানান, গত তিন মাস আগে মাদরাসাটিতে হেফজ বিভাগে ভর্তি করা হয় নাসিরকে। ভর্তির কিছুদিন পরেই একবার মারধরের শিকার হয় সে। সেসময় বাড়িতে চলে গেলেও ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানাতে হবে এমন দৃঢ়চিত্তে আবারও মাদরাসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

নাসির জানায়, মারধরের এক পর্যায়ে শিক্ষক তার মুখে মাথার টুপি গুঁজে দিয়ে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে গলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে তার মুখের তালু কয়েক স্থানে ছিলে যায়। তবুও থামেননি ওই শিক্ষক। সেসময় কয়েকজন ছাত্র তার দুই হাত ধরে থাকেন আর শিক্ষক দুই হাত, ঘাড়, গলাসহ কোমরের নিচে বেধড়ক পিটাতে থাকেন। পালিয়ে বাঁচতে চাইলে ওই ছাত্ররা আবারো তাকে ধরে নিয়ে শিক্ষকের সামনে আনে।

ভুক্তভোগীর বাবা বেলাল হোসেন বলেন, “আমার ছেলেকে এর আগেও নির্যাতন করা হয়েছে। তবে এদিন যেভাবে মুখে টুপি গুঁজে দিয়ে মারধর করা হয়েছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। কোন সুস্থ মানুষ একটা শিশুটিকে এভাবে মারধর করতে পারে! আমার ছেলেকে তারা মেরে ফেলতে চেয়েছিল। সে কোনমতে পালিয়ে বেঁচে গেছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই।”

এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক। মন্তব্য পাওয়া যায়নি মাদ্রাসার অন্য কোন শিক্ষকেরও।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) রহিমুল ইসলাম বলেন, “শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে সে হাসপাতালেই ভর্তি আছে। আমরা তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি।”

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, “শিশু নির্যাতনের অভিযোগে তার বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন। অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/নাঈম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দর স ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ

নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।

আরো পড়ুন:

ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু

মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক

কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।

এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ