স্থাপত্য বিষয়ে কিউবইনসাইড ডিজাইন লিমিটেডের তিন দিনব্যাপী ওপেন স্টুডিও প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ‘লার্নিং আনলার্নিং’ শীর্ষক প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত।

রাজধানীর বনানীর কিউবইনসাইড স্টুডিওতে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে দর্শকেরা স্থাপত্যকে কেবল একটি ভবন হিসেবে নয়, বরং এর পেছনের দীর্ঘ গবেষণা, সংগ্রাম ও নান্দনিক ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

কিউবইনসাইড ডিজাইন লিমিটেড ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের স্থাপত্যচর্চায় এক ভিন্ন ধারা তৈরি করেছে। তাদের মূল দর্শন হলো, স্থাপত্য কোনো স্থিতিশীল বিষয় নয়, বরং এটি নিরন্তর পরিবর্তনশীল। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা তাদের দীর্ঘ পথচলায় অর্জিত জ্ঞান এবং সেই জ্ঞানকে নতুন প্রেক্ষাপটে পুনরায় যাচাই করার প্রক্রিয়াকে তুলে ধরেছেন। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের নিজস্ব সমাজ, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক বাস্তবতার সঙ্গে বৈশ্বিক স্থাপত্যরীতির মেলবন্ধন কীভাবে ঘটানো হয়, তার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রদর্শনীতে দর্শকেরা স্টুডিওর ভেতরের কাজ, চলমান প্রকল্পের নানা দিক এবং স্থাপত্য নির্মাণের পেছনের জটিল ও সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারছেন।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এটি স্থাপত্যকে কেবল একটি বস্তু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা নয়, বরং নির্মিত পরিবেশকে গভীরভাবে দেখার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। এই আয়োজন স্থাপত্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও স্থাপত্য ও নকশা সম্পর্কে নতুন আগ্রহ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বনানীর রোড-১৫, ব্লক ‘সি’র ৬২ নম্বর বাড়ির লেভেল ৫ ও ৬-এ অবস্থিত কিউবইনসাইডের স্টুডিওতে চলমান এ প্রদর্শনী বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ