বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ২৬ সেপ্টেম্বর পালিত হয় ‘বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস’। দিবসটি পালনের লক্ষ্য গর্ভনিরোধের প্রয়োজনীয়তা, বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং সবার জন্য নিরাপদ ও কার্যকর একটি গর্ভনিরোধ পদ্ধতি নিশ্চিত করা। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিষয়ই নয়, বরং নারীর অধিকার, শিশুর সুস্থ ভবিষ্যৎ, পরিবার পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও এটি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।

মনে রাখতে হবে গর্ভনিরোধ কেবল জন্মনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার নয়, এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্য, অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতীক। বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য সমাজের প্রতিটি স্তরে গর্ভনিরোধের সঠিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে প্রত্যেকেই তাঁর নিজের পছন্দ ও শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২১ কোটি ৮০ লাখ নারী গর্ভনিরোধের প্রয়োজন অনুভব করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ নারী কোনো নিরাপদ গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন না। এর ফলে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ, ঝুঁকিপূর্ণ প্রসব ও মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস এই বৈষম্য দূর করতে এবং সবাইকে সমান সুযোগ প্রদানের আহ্বান জানায়।

গর্ভনিরোধের যত পদ্ধতি

গর্ভনিরোধের বহু বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ওরাল পিল অর্থাৎ মুখে খাওয়ার বড়ি, কনডম, ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্ট, আইইউডি, নির্বীজন অস্ত্র ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য পেশাদারদের ভূমিকা

গর্ভনিরোধ ও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে চিকিৎসক, প্রসূতিবিশেষজ্ঞ, কাউন্সেলর ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান অপরিসীম। তাঁরা শুধু ওষুধ বা যন্ত্র সরবরাহ করেন না, বরং সঠিক তথ্য, মানসিক সমর্থন ও নিরাপদ পরামর্শের মাধ্যমে মানুষকে সক্ষম করেন। বিশেষ করে গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় এই ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা ও সচেতনতা

অনেক সময় ভুল ধারণা, সামাজিক কুসংস্কার বা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মানুষ গর্ভনিরোধ নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। স্কুল-কলেজে যৌনবিষয়ক শিক্ষা, গণমাধ্যমে প্রচার এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়।

শেষ কথা

বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস কেবল একটি প্রচারণা নয়, এটি একটি আহ্বান। সমাজ, সরকার ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান। প্রত্যেক মানুষ বিশেষ করে নারীরা যেন তাঁর নিজের শরীর ও জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন, সেই আহ্বান জানানো হয় এর মাধ্যমে। গর্ভনিরোধ মানে শুধু গর্ভধারণ রোধ নয়, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও মর্যাদার পথ প্রশস্ত করা।


অধ্যাপক ডা.

মুনিরা ফেরদৌসী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র পদ আহ ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ

নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।

আরো পড়ুন:

ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু

মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক

কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।

এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ