৭৫ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পাচ্ছে সিটি ব্যাংক
Published: 3rd, October 2025 GMT
সিটি ব্যাংক লিমিটেডকে দীর্ঘ মেয়াদে মোট ৭৫ মিলিয়ন বা সাড়ে সাত কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ দেবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)। এ নিয়ে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক দুটির সঙ্গে সিটি ব্যাংকের একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তির অনুযায়ী এআইআইবি থেকে ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ডলার এবং এনডিবি থেকে ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলার পাবে সিটি ব্যাংক।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এআইআইবি ও এনডিবি থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে সিটি ব্যাংক। এই অর্থ থেকে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে তহবিল সরবরাহ করা হবে। তাতে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে গতি আসবে। এই ঋণ দেশের অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি দক্ষতা, ই-মোবিলিটি ও ডিজিটাল অবকাঠামো খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন, এআইআইবির মহাপরিচালক বা ডিজি (ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফান্ডস ক্লায়েন্টস, গ্লোবাল) গ্রেগরি লিউ, এনডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিওও রোমান সেরভ এবং মহাপরিচালক বিন হান চুক্তিতে সই করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও হোলসেল ব্যাংকিং প্রধান মেসবাউল আসীফ সিদ্দিকী।
সিটি ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্বভৌম গ্যারান্টি ছাড়াই এআইআইবির এটিই প্রথম অন-লেন্ডিং সুবিধা। সিটি ব্যাংকের জন্য এই ঋণ দেশে বেসরকারি খাতের মূলধন বিনিয়োগকে আরও গতিশীল করে তুলবে, দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো ঋণ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘এআইআইবি ও এনডিবির সঙ্গে এই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন–অংশীদারত্ব তাদের সিটি ব্যাংকের প্রতি আস্থার বহিঃপ্রকাশ। একই সঙ্গে এটি আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে সক্ষম করে তুলবে, যা দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই অর্থায়ন সহযোগিতা এআইআইবি ও এনডিবির অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও সামনে এগিয়ে নেবে। সিটি ব্যাংকের মতো শীর্ষস্থানীয় টেকসই ব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে তারা সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে টেকসই ও স্থিতিশীল অবকাঠামো ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজ করছে।
দেশের ১২ জন তরুণ ব্যবসায়ী ১৯৮৩ সালে সিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকের দেশব্যাপী ১৩৪টি শাখা, ৫২টি উপশাখা, ৪৩৪টি এজেন্ট পয়েন্ট, ৪৯৮টি এটিএম–আরএটিএম, ৭ হাজার ৬৮৯ জনবল ও ২৬ লাখ গ্রাহক রয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব সরক র অবক ঠ ম ট কসই ব যবস এনড ব
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান বনাম পশ্চিমা বিশ্ব : সভ্যতার ভণ্ডামির পাঠ
ইরান কেবল একটি রাষ্ট্র নয়, বরং গোটা এক সভ্যতা। প্রাচীন ও আত্মসচেতন এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে শত শত বছর ধরে দর্শন, শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার চর্চার মধ্য দিয়ে। এই সভ্যতাগত চরিত্রই যুগে যুগে ইরানের রাজনৈতিক ও নৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ। তবে তা আত্মসম্মানবোধ থেকে, আত্মসমর্পণ থেকে নয়। তবু পশ্চিমা গণমাধ্যম ও তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকেরা ইরানকে এক ‘দুষ্ট রাষ্ট্র’ হিসেবে তুলে ধরেছে। যেন পশ্চিমের নৈতিকতার মিথ ধরে রাখার জন্য ইরান এক সুবিধাজনক ‘অপর’।
ইরানের পররাষ্ট্রনীতি বরাবরই দাঁড়িয়ে আছে প্রতিরোধের নীতির ওপর। হিজবুল্লাহ ও হামাসকে ইরানের সমর্থন কখনোই অন্ধ সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ ছিল না। সেই সমর্থন মূলত এমন এক আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে, যারা আজও ফিলিস্তিনিদের পিষ্ট করে চলেছে গণহত্যার মতো নির্যাতনের মাধ্যমে।
আরও পড়ুনআরব দেশগুলো এখন বুঝছে—ইরান নয়, ইসরায়েলই তাদের জন্য বড় হুমকি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫যেখানে ইসরায়েল শরণার্থীশিবির ও হাসপাতাল বোমাবর্ষণকেও নিজেদের ‘আত্মরক্ষা’ হিসেবে দাবি করে, সেখানে ইরানের সংহতি আক্রমণ নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ব। পশ্চিমা গণমাধ্যমে যেভাবে ইরানকে রহস্যঘেরা ও গোপনীয়তার আড়ালে ঢেকে রাখা এক রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো হয়, বাস্তবতা তার থেকে অনেক জটিল এবং ভিন্ন।
ওয়াশিংটনের নৈতিক চশমা দিয়ে ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বোঝা যায় না। পারস্যের উত্তরসূরি হিসেবে এই ইসলামি প্রজাতন্ত্র এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, যেখানে সম্পর্কের ভিত্তি সততা আর শক্তি মানেই সংযম। আধুনিক ইতিহাসে ইরান কোনো দেশে আক্রমণ বা উপনিবেশ স্থাপন করেনি। বরং আক্রমণ, নিষেধাজ্ঞা ও বিশ্বের থেকে একঘরে হয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা সয়েছে। তবু ইরান আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থেকে সরে দাঁড়ায়নি।
ইরানের অভ্যন্তরীণ জটিলতা যা–ই থাকুক, এই নৈতিক উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করেছে। ওয়াশিংটনের কথামতো না চলার জন্যই ইরানকে শাস্তি দেওয়া হয়, নিজের জনগণকে দমন করার কারণে নয়।ইরান পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের পথে হাঁটতে চাইলে (যদি সত্যিই সেই পথ বেছে নেয়) তাকে আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিতের বাইরে বিচার করা যায় না। ইসরায়েলের একটি অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার আছে। দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে সই করেনি এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার কাছেও তাদের কোনো জবাবদিহি নেই।
তাহলে ইরান কেন প্রতিরোধক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হবে? বিশেষ করে এমন এক পরিবেশে, যেখানে পশ্চিমের নৈতিকতা প্রয়োগ হয় বেছে বেছে। আর আন্তর্জাতিক আইন ব্যবহৃত হয় দুর্বলদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে। সেখানে তো প্রতিরোধই টিকে থাকার উপায়।
পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে দুনিয়াকে নসিহত করে, কিন্তু অস্ত্র বিক্রি করে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের কাছে। গাজায় ‘সন্ত্রাসীদের’ নিন্দা করে, অথচ শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়াকে ক্ষমা করে দেয়। ইরানকে তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানার দাবি জানায়, কিন্তু নিজেরা সুযোগ পেলেই তা লঙ্ঘন করে। এই ভণ্ডামি ব্যক্তিগত নয়, এর শিকড় গাথা আছে ঔপনিবেশিক ঔদ্ধত্যের শত শত বছরের অভ্যাসে। যে শক্তিগুলো একসময় এশিয়া ও আফ্রিকা লুট করে বেরিয়েছে, আজ তারাই গণতন্ত্র ও শান্তি নিয়ে জ্ঞান দেয়।
আরও পড়ুনইরান–আমেরিকা ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’ যে চার কারণে আসন্ন৩১ আগস্ট ২০২৫ইরানের অভ্যন্তরীণ জটিলতা যা–ই থাকুক, এই নৈতিক উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করেছে। ওয়াশিংটনের কথামতো না চলার জন্যই ইরানকে শাস্তি দেওয়া হয়, নিজের জনগণকে দমন করার কারণে নয়।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান কর্মকাণ্ড পশ্চিমা দ্বিমুখিতার সর্বোচ্চ অশ্লীল প্রদর্শন। বিশ্ব তাকিয়ে দেখেছে শিশুরা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ছে, হাসপাতালে বোমা হামলা হচ্ছে, শরণার্থীরা অনাহারে মরছে। আর এসবই ন্যায্যতা পাচ্ছে ‘নিরাপত্তার’ নামে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিটি নীতি পায়ের তলায় পিষ্ট করা হচ্ছে, তবু কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে না। যে সরকারগুলো একসময় ইউক্রেনের দুর্দশায় চোখের জল ফেলেছিল, তারাই এখন ফিলিস্তিনে গণহত্যার অর্থ জোগাচ্ছে।
পার্সেপোলিস থেকে তেহরান পর্যন্ত, কবি থেকে বিপ্লবী পর্যন্ত ইরান এমন এক ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে, যা কোনো সাম্রাজ্যই মুছে দিতে পারেনি। ইরানের রাজনীতি বিতর্কিত হতে পারে, শাসনব্যবস্থা অপূর্ণ হতে পারে কিন্তু তার সভ্যতাগত মনন অটুট। এর বিপরীতে পশ্চিমারা অস্ত্র চুক্তি ও তেল-স্বার্থের বিনিময়ে বিসর্জন দিয়েছে নিজেদের নৈতিক দিশা।
● রঞ্জন সলোমন গোয়াভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও মানবাধিকারকর্মী
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত