ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নৈতিক জাগরণ
Published: 3rd, October 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে এক নৈতিক জাগরণ দেখা দিচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের লাগাতার যুদ্ধ, বিশেষ করে গাজায় চলমান গণহত্যা, ইসরায়েলকে দিন দিন আরও একঘরে করে দিচ্ছে।
এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় একের পর এক দেশ দাঁড়িয়ে বলছে, ‘যথেষ্ট হয়েছে’। ইউরোপ থেকে শুরু করে লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা পর্যন্ত দেশগুলো অভূতপূর্বভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির এ ঢেউ কোনো শূন্য জায়গা থেকে আসেনি। এটি ইসরায়েলের গাজায় বর্বর অপরাধের সরাসরি প্রতিক্রিয়া।
এ ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনের সারিতে রয়েছে মিসর। মিসর বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছে—ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দাও, ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনো আর গণহত্যা বন্ধ করো। বার্তাটি স্পষ্ট—ইসরায়েলের দায়মুক্তি বিশ্বজনমতকে ক্লান্ত করে দিয়েছে। সবাই মনে করছে, ন্যায়বিচারের সময় এখনই।
আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫বর্তমানে বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশের বেশি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে এ বছর পর্যন্ত ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় আগ্রাসনের পর এ সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। শুধু গত এক বছরেই একাধিক দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতার প্রতি সরাসরি প্রতিবাদ। নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন ২০২৪ সালে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, যা ইউরোপের দীর্ঘদিনের দ্বিধাকে ভেঙে দেয়।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া তার একঘরে অবস্থানকেই স্পষ্ট করেছে। তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে, এমনকি ওই দেশগুলো থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু এতে বিশ্ব ভয় পায়নি; বরং ইসরায়েলের একগুঁয়েমিই বিশ্বজনমতকে আরও দৃঢ় করেছে।
ইতিমধ্যে আরও কয়েকটি দেশ, যেমন স্লোভেনিয়া, মাল্টা ও বেলজিয়াম এ স্বীকৃতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। আসলে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ক্যারিবীয় দেশ (বাহামা থেকে শুরু করে ত্রিনিদাদ ও বার্বাডোজ) এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ গতিপ্রবাহ এখন সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এমনকি ইসরায়েলের কিছু ঐতিহ্যগত মিত্রও এখন অবস্থান বদলেছে। এটি এক বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি দেখাচ্ছে, বিশ্ব সম্মানে ইসরায়েলের পতন কত গভীর। যে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া দশকের পর দশক ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিল, তারাও এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তা করেছে।
তাদের এ পদক্ষেপ এসেছে সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে নতুন করে এগিয়ে নিতে। ফ্রান্সও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
এটি কোনো ছোটখাটো কূটনৈতিক পরিবর্তন নয়, পশ্চিমা এই স্বীকৃতিগুলো অতীত নীতির সঙ্গে ঐতিহাসিক বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে গাজার গণহত্যার প্রতি তীব্র ক্ষোভ।
আন্তর্জাতিক স্রোত বদলে গেছে। আজ ইসরায়েল নিজেকে প্রায় বন্ধুহীন অবস্থায় খুঁজে পাচ্ছে। কেবল অল্প কয়েকটি দেশ এখনো দেশটিকে সমর্থন করছে। আরব ও মুসলিম বিশ্ব থেকে শুরু করে আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং এখন ইউরোপের বড় অংশ—সব জায়গায় ফিলিস্তিনের পক্ষে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিশ দফা যেন বিশটি ‘বিষের বড়ি’০১ অক্টোবর ২০২৫এখন এত দেশ কেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসছে? কারণ, গাজার ভয়াবহ নৃশংসতা দেখে নিরপেক্ষ থাকা বা দোটানায় থাকার আর কোনো জায়গা নেই। ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধ নিছক যুদ্ধ নয়, এটি সরাসরি গণহত্যা। জাতিসংঘের একটি কমিশন স্পষ্টভাবে বলেছে, ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। পুরো মহল্লা মুছে ফেলা হয়েছে। পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত মানুষের সংখ্যা অকল্পনীয়। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এটি ইতিহাসে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ, যা বিশ্ববাসী সরাসরি চোখের সামনে টেলিভিশনের পর্দায় দেখছে।
গাজায় যা ঘটছে, তা আসলে একটি জাতিকে মুছে ফেলার ইচ্ছাকৃত চেষ্টা—এটাই গণহত্যার সংজ্ঞা।
যেকোনো বিবেকবান দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে আগের মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে পারে না। তাই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল প্রতীকী পদক্ষেপ নয়; বরং এটি ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির পক্ষে দাঁড়ানো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসলে ইসরায়েলকে বলছে, তুমি জাতিগত নিধন চালিয়ে যেতে পারবে না, এসব করে বিশ্বের সাধারণ সদস্য হয়ে থাকতে পারবে না।
বিশ্বব্যাপী এ আন্দোলনের মধ্যে মিসর এক নৈতিক নেতৃত্বের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে। গাজার প্রতিবেশী দেশ হিসেবে, ফিলিস্তিনি অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিনের অবস্থানের কারণে এবং আরব ও আফ্রিকান বিশ্বে সম্মানজনক কণ্ঠস্বর হিসেবে মিসরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর সেটাই এখন মিসর করছে।মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবাই এখন জবাবদিহির দাবি তুলছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের উদ্যোগে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে। বার্তাটি একদম স্পষ্ট—মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহি করতে হবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হলো দেশগুলো একদিকে ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকারকে সমর্থন করছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের একটি জাতিকে মুছে ফেলার চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করছে।
বিশ্বব্যাপী এ আন্দোলনের মধ্যে মিসর এক নৈতিক নেতৃত্বের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে। গাজার প্রতিবেশী দেশ হিসেবে, ফিলিস্তিনি অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিনের অবস্থানের কারণে এবং আরব ও আফ্রিকান বিশ্বে সম্মানজনক কণ্ঠস্বর হিসেবে মিসরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর সেটাই এখন মিসর করছে।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন থেকেই মিসর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের তাঁদের ভূমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
কূটনৈতিক অঙ্গনেও কায়রোর প্রচেষ্টা ছিল নিরলস। যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডরের জন্য মিসর গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে। দিনরাত অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে গেছে যাতে যুদ্ধ কিছুটা থেমে যায় এবং সাহায্যসামগ্রী গাজায় পৌঁছাতে পারে। মিসরীয় কর্মকর্তারা রাফাহ সীমান্তপথ দিয়ে শত শত সাহায্যবাহী ট্রাক গাজার ভেতরে প্রবেশের সমন্বয় করেছেন। ইসরায়েল যাতে গাজার জনগণকে অনাহারে না রাখে, সে ব্যাপারে মিসর দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে মিসর হয়ে উঠেছে নিঃশব্দদের কণ্ঠস্বর।
ইব্রাহিম নেগম মিসরের গ্র্যান্ড মুফতির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা
আল আহরাম থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল স ত ন র ষ ট রক ইসর য় ল র অবস থ ন গণহত য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প যেভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যায় হাওয়া দিচ্ছেন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক অভিবাসন এজেন্ডার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁর এই বক্তব্য বিশ্বের বিতাড়নবাদী ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী সরকারগুলোর জন্য বড় এক উপহার।
মিয়ানমার বহু বছর ধরে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে রাখার নীতি চালিয়ে আসছে। ট্রাম্পের এই ভাষণ দেশটির স্বৈরশাসকদের জন্য শুধুই বাগাড়ম্বর নয়; বরং তাদের কর্মকাণ্ডের বৈধতা পাওয়ার মতো ব্যাপার।
ট্রাম্প দেশগুলোকে বললেন সীমান্ত বন্ধ করে দিতে, বিদেশিদের বের করে দিতে এবং এমন অভিবাসীদের ঠেকাতে যাদের সঙ্গে ‘আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো মিলও নেই।’ তিনি অভিবাসনকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে তুলে ধরে সতর্ক করলেন, এতে দেশগুলো ‘নষ্ট’ বা ‘ধ্বংস’ হয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক মঞ্চ থেকে দেওয়া এ ধরনের বক্তব্যকে কেবল রাজনৈতিক নাটক বলে খারিজ করে দেওয়া যায় না, এর প্রতীকী গুরুত্ব আছে। এর মাধ্যমে এটা বোঝানো হচ্ছে যে বড় শক্তিগুলো এ ধরনের বর্জনমূলক পদক্ষেপকে শুধু সহ্যই করবে না, অনেক সময় চুপচাপ সমর্থনও দেবে।
জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণ কেবল একটি উসকানিমূলক বক্তব্য ছিল না। সংখ্যালঘুদের যারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে দেখে, তাঁদের জন্য তাঁর এই ভাষণ সাহস জোগাবে। মিয়ানমার ইতিমধ্যে এই যুক্তিতেই নিপীড়ন চালাচ্ছে। এখন বিশ্বকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটিকে তারা মোকাবিলা করবে, নাকি ট্রাম্পের ভুল ও বিপজ্জনক বক্তব্যের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক মানুষদের বিপদে ফেলবে।মিয়ানমারের সামরিক জেনারেলরা দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও অধিকার অস্বীকার করে আসছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল—তাদের জন্য একপ্রকার স্বীকৃতি। রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক করার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত।
১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ‘জাতিগত গোষ্ঠী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে রোহিঙ্গারা নিজেদের জন্মভূমিতেই রাষ্ট্রহীন হয়ে গেছে। এর পরের সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি’ তকমা দেয়। যদিও তারা শত শত বছর ধরে রাখাইনেই বসবাস করে আসছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনগত বঞ্চনা পরিণত হয় কাঠামোগত সহিংসতায়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে নৃশংস অভিযান চালায়। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়, নারী ও শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতা ঘটে এবং গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ঘিরে ট্রাম্পের নতুন কূটনীতি০৭ আগস্ট ২০২৫মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। সেখানে পূর্ববর্তী সহিংসতাগুলোর কারণে আগে থেকেই কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখিয়েছে, আট বছর পরও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবির এবং মিয়ানমারে বর্ণবাদী পরিস্থিতির মধ্যে আটকে আছে। তাদের কোনো ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ নেই। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং বিশ্বের অনেক গ্রহণযোগ্য সংস্থা রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে।
অতি জাতীয়তাবাদে তাড়িত হয়ে কোনো গোষ্ঠীকে বিতাড়নকে জাতীয় আত্মসংরক্ষণ বলে উপস্থাপন করে আসছে মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা। ট্রাম্পের বক্তব্যে তারা শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন পাচ্ছে।
জাতিগত নির্বাসনকে জাতীয় স্বসংরক্ষণ হিসেবে দেখানোর ফলে মিয়ানমারের সেনারা ট্রাম্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী সমর্থন পাচ্ছে। যখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের নেতা বিদেশিদের তাড়ানোকে স্বাভাবিক বলে মানে, তখন বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর কাছে এটি অনুমতির মতো বার্তা হয়ে যায়।
আরও পড়ুনমিয়ানমার কি পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে১৮ জুন ২০২৪তারা এখন হিসাব কষবে যে আন্তর্জাতিক নিয়মরীতি বদলে গেছে, যে কাউকে জোর করে বিতাড়নের নিন্দা করার প্রয়োজন নেই, আর মানবাধিকার এখন বাধ্যতামূলক নয়; বরং চাইলে এড়িয়ে যাওয়া যায়। রোহিঙ্গাদের মতো নিপীড়িত সংখ্যালঘুর জন্য ট্রাম্পের ভাষণ শুধু ভীতিকর নয়, প্রাণঘাতীও হতে পারে।
যদি সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার মানদণ্ড কেবল বাগাড়ম্বর হয়ে থাকে, তবে নীতিস্তরে সেটি কার্যকর কঠিন হয়ে যায়। তাই ট্রাম্পের ভাষণ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বার্তা নয়; এটি বৈশ্বিক মানবাধিকার অগ্রগতির নাজুক দশা সেখানেও আঘাত করেছে।
মিয়ানমারের জেনারেলরা অবশ্যই রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য বাইরের কারও পিঠ চাপড়ানির জন্য অপেক্ষা করে না। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, নাগরিকত্ব অস্বীকার এবং সহিংস দমননীতি অনেক আগে থেকেই চালিয়ে আসছে।
কিন্তু বাইরের সমর্থন অবশ্যই প্রভাব তৈরি করে। এ ধরনের সমর্থন জেনারেলদের সাহস বাড়িয়ে দেবে; বিচ্ছিন্ন হওয়ার যে ভয়, সেটি কমিয়ে দেবে। আসিয়ান, জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে মিয়ানমারের জবাবদিহি করা কঠিন হবে।
আরও পড়ুনমিয়ানমার নিয়ে আমেরিকার নীতি পুরোটাই ভুল০৮ জুলাই ২০২৩ভূরাজনীতিতে ধারণা অনেক সময় সক্ষমতার সমান প্রভাব ফেলে।
আরও বড় বিপদ হলো, ট্রাম্পের ভাষণ বিশ্ব রাজনীতিতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে দুর্বলদের দোষারোপ করা রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিক বা নিরাপত্তা সমস্যায় থাকা দেশগুলো এখন খুব সহজে প্রবাসী বা সংখ্যালঘুদের দোষারোপ করতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা বিশ্বের একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে যাবে। এর মানে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে কোনো জাতিগোষ্ঠীকে বিতাড়ন করা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়ে যাবে।
জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণ কেবল একটি উসকানিমূলক বক্তব্য ছিল না। সংখ্যালঘুদের যারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে দেখে, তাঁদের জন্য তাঁর এই ভাষণ সাহস জোগাবে। মিয়ানমার ইতিমধ্যে এই যুক্তিতেই নিপীড়ন চালাচ্ছে। এখন বিশ্বকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটিকে তারা মোকাবিলা করবে, নাকি ট্রাম্পের ভুল ও বিপজ্জনক বক্তব্যের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক মানুষদের বিপদে ফেলবে।
ফার কিম বেং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার আসিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক
লুথফি হামজা রিসার্চ ফেলো, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড আসিয়ান স্টাডিজ
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত