যুক্তরাষ্ট্রে দুই কিশোরের মৃত্যু: পেশি ক্ষয়রোগে থেরাপি ব্যবহারে গুরুতর সতর্কতা
Published: 15th, November 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, পেশি ক্ষয়জনিত এক দুরারোগ্য রোগে ব্যবহৃত একধরনের জিন থেরাপির ওপর সর্বোচ্চ গুরুতর সতর্কতা-লেবেল যুক্ত করবে। একই সঙ্গে থেরাপিটির অনুমোদিত ব্যবহারের ক্ষেত্রও সীমিত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানায়, ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রফি রোগের বিকাশ ধীর করতে ইনফিউশনের মাধ্যমে দেওয়া ‘এলেভিডিস’ থেরাপির ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের চিকিৎসার পর দুই কিশোর রোগীর আকস্মিক লিভার অকার্যকারিতায় মৃত্যুর পর নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত।
থেরাপি শুরু করার সময় ওই দুই কিশোর রোগীই হাঁটার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। এখন থেকে এ থেরাপি শুধু হাঁটতে পারে, এমন এবং চার বছরের বেশি বয়সী রোগীদের জন্য সীমিত থাকবে।
ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রফি একটি বিরল ও প্রাণঘাতী রোগ। এতে পেশি ক্ষয় হয়, এমনকি হৃদ্যন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত অধিকাংশই ছেলে এবং তাঁদের গড় আয়ু প্রায় ২৮ বছর।
গত গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান সারেপটা ওই থেরাপির সরবরাহ চলাফেরায় অক্ষম রোগীদের ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়।
ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রফি একটি বিরল ও প্রাণঘাতী রোগ। এতে পেশি ক্ষয় হয়, এমনকি হৃদ্যন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত অধিকাংশই ছেলে এবং তাঁদের গড় আয়ু প্রায় ২৮ বছর।এফডিএ জুলাইয়ে থেরাপিটির সব ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ করে এবং নিরাপত্তা-পর্যালোচনার ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে সারেপটাকে এলেভিডিসের সব সরবরাহ বন্ধ করতে বলে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা শুধু হাঁটতে পারেন, এমন রোগীদের থেরাপি দেওয়া চালিয়ে যাবে।
এ ছাড়া জুলাই মাসেই ইউরোপের কমিটি ফর মেডিসিনাল প্রোডাক্টস ফর হিউম্যান ইউজ এলেভিডিসের ক্রয়–বিক্রয় অনুমোদন দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপারিশ করে। তাদের মতে, রোগীর চলাফেরার সক্ষমতার ওপর থেরাপিটির প্রভাব যথেষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি।
জুলাই মাসে ইউরোপের ‘কমিটি ফর মেডিসিনাল প্রোডাক্টস ফর হিউম্যান ইউজ’ এলেভিডিসের ক্রয়-বিক্রয় অনুমোদন দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপারিশ করে। তাদের মতে, রোগীর চলাফেরার সক্ষমতার ওপর থেরাপিটির প্রভাব যথেষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি।বাণিজ্যবিষয়ক প্রকাশনাগুলোর তথ্যমতে, থেরাপিটির অনুমোদন দেওয়া হবে কি না, এ নিয়ে এফডিএর ভেতরই টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। রোগীর পরিবার ও বিভিন্ন অধিকার সংগঠন মরিয়া হয়ে এ রোগে যন্ত্রণা কমানোর কোনো কার্যকর উপায় খুঁজছে।
থেরাপির নতুন সতর্কতা-লেবেলে বলা হবে, চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর প্রথম তিন মাস রোগীদের প্রতি সপ্তাহে লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র এল ভ ড স অন ম দ ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
কোমর মোচড়ানো কি নিরাপদ, বিজ্ঞান কী বলে
বলা হচ্ছে, হালকা আরামের জন্য মাঝেমধ্যে কোমর মোচড়ানোয় তেমন ক্ষতি নেই। তবে প্রায়ই কোমর মোচড়ামুচড়ি করা বা জোর করে এ ধরনের কাজ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে কোমর মোচড়ানো নিয়ে ২০০৭ সালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল ‘জার্নাল অব মেনিপুলেটিভ অ্যান্ড ফিজিওলজিক্যাল থেরাপিউটিকস’।
ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, মেরুদণ্ডে চাপ প্রয়োগ করে নড়াচড়া করানো হলে তাতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে, অল্প সময়ের জন্য কোমর ও পিঠব্যথা কমতেও পারে। কিন্তু এটা যথাযথভাবে করা না হলে পেশিতে টান পড়তে পারে, এমনকি স্নায়ুতে লাগতে পারে আঘাত।
কোমর মোচড়ানো কীভাবে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করেকোমর মোচড়ালে তা মেরুদণ্ডের বিভিন্ন হাড়ের সন্ধির ভেতর থাকা তরলকে নাড়িয়ে দেয়। এ সময় তরল সরে গিয়ে অস্থিসন্ধির ভেতরে বাতাসের বুদ্বুদ তৈরি করে, যা মটমট শব্দ হয়ে আমাদের কানে আসে। পরে তরল সেই শূন্যস্থান পূরণ করে এবং হাড় আবার তার যথাস্থানে ফিরে যায়। কিন্তু সব সময় কি হাড় সঠিক জায়গায় ফিরতে পারে? না-ও তো পারে!
তাই বারবার কোমর মোচড়ানো হালকা আরাম দিলেও এতে পেশিতে টান পড়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এমনকি হাড় যথাযথ জায়গায় না বসে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুনআবহাওয়ার সঙ্গে হাঁটু, কোমর ও বাতের ব্যথার কী সম্পর্ক?২৫ আগস্ট ২০১৭সম্ভাব্য অন্য ঝুঁকিবোঝা যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে কোমর মোচড়ানো ভালো হলেও দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ নয়। এতে আরও যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সেসব হলো—
এতে স্নায়ু চাপ খেয়ে যেতে পারে। ফলে পিঠব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
মাংসপেশি টান খেয়ে ছিঁড়ে যেতে পারে।
লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে হাড় ও অস্থিসন্ধির বাতজনিত অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগ দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় ধমনিতে আঘাত লেগে তা ফুলে যেতে পারে। এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
কখন আর কোমর মোচড়াবেন নাআগেই বলা হয়েছে, মাঝেমধ্যে কোমর মোচড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কখন বুঝবেন এটা বন্ধ করার সময় হয়েছে?
মোচড়ানোর সময় বা পরে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলে।
যদি কারও অস্টিওপোরোসিস বা হার্নিয়েটেড ডিস্কের মতো হাড়ক্ষয় বা এ–জাতীয় রোগ থাকে।
এ ছাড়া যথাযথ কৌশল জানা না থাকলে তাঁরও কোমর মোচড়ানোর মতো কাজ করা উচিত নয়।
আরও পড়ুনঘাড় ফোটালে কি স্ট্রোক হতে পারে২১ অক্টোবর ২০২৪কোমর মোচড়ানোর বিকল্প কীকোমর মোচড়ানোয় অস্বস্তি দূর হয়, আরামও লাগে। কিন্তু এটা যেহেতু নিরাপদ নয়, তবে এসব সুবিধা পেতে বিকল্প কী করা যেতে পারে?
কোমর ও পিঠের হাড় বা মাংসপেশি আস্তেধীরে টেনে হালকা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। এতে শরীরের নমনীয়তা বাড়ে এবং পেশির অস্বস্তি কমায়।
শরীরের মূল মাংসপেশি অর্থাৎ পেট, কোমর ও নাভিকে ঘিরে থাকা পেশিগুলো শক্তিশালী করা। এসব আমাদের শরীরকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে এবং অস্বস্তিও প্রতিরোধ করে।
আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ভঙ্গি ধরে রাখা। অর্থাৎ মাংসপেশি ও হাড়ের ভারসাম্য বজায় রাখা। এটি পেশি টান খাওয়া প্রতিরোধ করে ও জড়তা দূর করে।
মাঝেমধ্যে গরম ও শীতল থেরাপি নেওয়া যেতে পারে। এতে পেশি শান্ত থাকে এবং প্রদাহ কমে।
সর্বোপরি অস্বস্তি বেশি হলে একজন পেশাদার হাড়বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এই লেখা কোনোভাবেই পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। এখানে শুধু বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
সূত্র: ওয়েব এমডি
আরও পড়ুনঘাড় ঘোরানোর সময় মটমট করে, এটা কি স্বাভাবিক২৯ অক্টোবর ২০২৫