কক্সবাজারের নাজিরারটেকে এখন শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত অনেক মানুষ। সমুদ্রতীরের বিস্তীর্ণ বালুচরে সারিবদ্ধ বাঁশের মাচায় দিনভর শুকানো হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাছ। নভেম্বর থেকে জমে ওঠা শুটকি তৈরির মৌসুম চলবে আগামী জুলাই পর্যন্ত। মৌসুমজুড়ে নাজিরারটেক ও জেলার অন্যান্য উপকূলীয় মহালে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

সমুদ্রতীরবর্তী প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এ মহালে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রধানত শুটকি উৎপাদন চলে। তবে, বৃষ্টি না থাকলে অন্য সময়েও কিছু উৎপাদন হয়। সাগর থেকে ধরা তাজা মাছ বাঁশের মাচায় ৩ থেকে ৪ দিন সূর্যের তাপে শুকিয়েই তৈরি হয় শুঁটকি। এরপর সেগুলো চলে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। কিছু শুটকি রপ্তানির জন্য প্যাকেটবন্দি করা হয়।

নাজিরারটেক ছাড়াও নুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, সোনাদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আরো তিন শতাধিক শুটকি মহালে সমানতালে উৎপাদন চলছে।

সম্প্রতি নাজিরারটেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০টির বেশি মহালে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, ফাইস্যা, নাইল্যাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। গভীর সমুদ্র থেকে ধরা মাছ এনে জেলেরা বিক্রি করেন এসব মহালে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু নাজিরারটেকেই প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদিত হয়, যার বাজারমূল্য ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে কর্মরত শ্রমিক রশিদা খাতুন (৩২) রাইজিংবিডিকে বলেন, “ভোরে বাসা থেকে এসে সারাদিন মাছ ধুয়ে মাচায় সাজাই। কাজটা কষ্টের হলেও ভালো আয় হয়। এই আয়ে সংসার চলে।”

শ্রমিক নুরুল আমিন (৪১) বলেন, “গভীর সাগর থেকে মাছ এনে মহালে দেওয়া হয়। শুটকি মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি আয় হয় আমাদের।”

আয়েশা বেগম (২৮) বলেন, “প্রতিদিন রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। তারপরও আমরা খুশি, কারণ এখানে নারী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বেশি। মৌসুমে প্রতিদিন যা পাই, তা দিয়ে ঘরের সব খরচ চলে যায়।”

ছাবের আহমদ (৪৫) বলেন, “এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি মাছ শুকানো হয়। শ্রমিকের কাজ অনেক, কিন্তু অভিজ্ঞ হলে দ্রুত করতে পারি। সবাই মিলে কাজ করি, তাই উৎপাদনও বেশি হয়।”

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, “নাজিরারটেকে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ ২০–২৫ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি হয়।”

বাজার ঘুরে দেখা গেছে- লইট্যা শুঁটকি প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ছুরি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, পোয়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, মাইট্যা ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, কোরাল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা এবং রূপচাঁদা ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আ.

ক. ম. নেয়ামত উল্লাহ বলেন, “প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে অর্ধশতাধিক আড়ত ও প্রায় ২ হাজার ব্যবসায়ী যুক্ত। এখান থেকে প্রতিদিন ২০০ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়।”

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, “গত বছর হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় পোপা শুঁটকি রপ্তানি করে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় হয়। এ বছর উৎপাদন ভালো হলে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।”

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় ৪০০ ক ট উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

‘দৃশ্যম থ্রি’ নিয়ে নতুন খবর পাওয়া গেল

মালায়ালাম ভাষার বহুল আলোচিত সিনেমা সিরিজ ‘দৃশ্যম’। জিতু জোসেফ পরিচালিত এ সিরিজের প্রথম পার্ট মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। দ্বিতীয় পার্ট মুক্তি পায় ২০২১ সালে। এ দুই পার্টে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মোহনলাল। এ সিরিজের তৃতীয় পার্ট নির্মাণের কাজ চলমান। তৃতীয় কিস্তিতে থাকবেন মোহনলাল। জিতু জোসেফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০১৫ সালে বলিউড পরিচালক নিশিকান্ত কামার ‘দৃশ্যম’ সিনেমা হিন্দি ভাষায় রিমেক করেন। হিন্দি ভাষার রিমেকে অভিনয় করেন অজয় দেবগন, টাবু, শ্রেয়া সরন, অক্ষয় খান্না। ৩৮ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি বক্স অফিসে আয় করেছিল ১১০ কোটি রুপি।  

আরো পড়ুন:

১ লাখ কোটি টাকার পারিবারিক ব্যবসাও সামলান এই তারকা-পত্নী

বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যা বললেন রাশমিকা

এই সিরিজের দ্বিতীয় পার্ট ‘দৃশ্যম-টু’ রিমেক করেছেন পরিচালক অভিষেক পাঠক। অভিনয়শিল্পীরা অপরিবর্তিত রয়েছেন। সিনেমাটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৫০ কোটি রুপি। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাও বক্স অফিসে রাজত্ব করে। এটি আয় করে ৩৪৫ কোটি রুপি। এবার হিন্দি ভাষায় নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘দৃশ্যম থ্রি’। গত অক্টোবরে সিনেমাটির দৃশ্যধারণের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতির মধ্যে ছিলেন নির্মাতারা। অবশেষে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন শুরু হতে যাচ্ছে। 

মিড-ডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অজয় দেবগন এবার প্রস্তুত জনপ্রিয় থ্রিলার ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘দৃশ্যম’-এর বিজয় সালগাঁওকর চরিত্রে ফিরতে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে ‘দৃশ্যম টু’ সিনেমার পরিচালক অভিষেক পাঠক মুম্বাইয়ে তৃতীয় পার্টের শুটিং শুরু করবেন।   

এ বিষয়ে একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “অক্ষয় খান্না ও টাবুসহ পুরো অভিনয়শিল্পীদের দল মুম্বাইয়ে ১০ দিনের শিডিউলে অংশ নেবেন। মুম্বাইয়ে ইনডোর দৃশ্যগুলো ধারণ করা হবে। তারা বড়দিন পর্যন্ত শুটিং করবেন, তারপর নতুন বছরের বিরতিতে যাবেন। ২০২৬ সালের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুনরায় ‘দৃশ্যম থ্রি’ সিনেমার শুটিং শুরু হবে। পরিকল্পনা রয়েছে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যেই পুরো শুটিং শেষ করার।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ