বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আবু জাফর আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় দুই মাসের ছুটিতে গেছেন। ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ এক উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) আগামী রোববার ব্যাংকটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ করলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমডি মাস দুয়েকের জন্য ছুটিতে গেছেন।’ এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

ছুটি শেষে আবু জাফর কি আবার ব্যাংকে ফিরবেন, এমন প্রশ্নে ব্যাংকটির পর্ষদ বা শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রগুলো বলছে, কোনো এমডি লম্বা সময়ের জন্য ছুটিতে গেলে ধরে নেওয়া হয় যে তিনি আর ফিরছেন না।

ফোন না ধরায় আজ রাতে জনাব আবু জাফরকে তাঁর ছুটির বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খুদে বার্তা দেওয়া হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি।

২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল এমডি ও সিইও হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংকে নিয়োগ পান মোহাম্মদ আবু জাফর। এর আগে তিনি ঢাকা ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা মোহাম্মদ আবু জাফর ১৯৯০ সালে উত্তরা ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।

মোহাম্মদ আবু জাফর ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালের সময় নিয়োগ পাওয়া এমডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১ বছর ১৬ দিন পর এ বছরের ২১ আগস্ট চেয়ারম্যান হয়ে আসেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান।

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংক ছেড়ে দেন। এর পর থেকে ব্যাংকটিতে এইচ বি এম ইকবালের বেনামি ঋণ, কেনাকাটা, ভাড়ায় অনিয়মসহ নানা অনিয়ম বের হয়ে আসে।

নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার তিন সপ্তাহের মাথায় গত ১২ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান ও এমডিকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল। এই অভিযোগে প্রিমিয়ার ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদ সেকান্দার গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পক্ষে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ইকবাল সেন্টার ও গুলশানের রেনেসাঁ হোটেলে থাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার ভাড়া পরিশোধ করতে বলেন জনাব ইকবাল। অন্যথায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান ও এমডি মোহাম্মদ আবু জাফরের সমস্যা হবে এবং এমডি মোহাম্মদ আবু জাফরের বাড়ি ‘ভ্যানিশ’ করে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ র এইচ ব

এছাড়াও পড়ুন:

মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার সাজা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলেছে

ভারতের কাছে কিছু বন্ধুত্ব কৌশলগত দিক থেকে যেমন মূল্যবান, তেমনই এর রাজনৈতিক দায়ভারও অনেক বেশি। বাংলাদেশের সাবেক নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের সখ্যা অনেকটা তেমনই।

ক্ষমতায় থাকার ১৫ বছরে শেখ হাসিনা ভারতকে এমন কিছু দিয়েছেন, যা নয়াদিল্লি তার দিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। সেগুলো হলো স্থিতিশীলতা, যোগাযোগ এবং চীনের পরিবর্তে ভারতের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ সমন্বয় করতে ইচ্ছুক এক প্রতিবেশী।

বর্তমানে শেখ হাসিনা সীমান্তের ওপারে ভারতে অবস্থান করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে দমন–পীড়নের কারণে, যে বিক্ষোভে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।

২০২৪ সালের ওই বিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে এবং তাতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পথ সুগম হয়। আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সব কিছু মিলিয়েই একটি কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঢাকা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চায়, কিন্তু নয়াদিল্লি তাতে সায় দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এতে কার্যত তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

নয়াদিল্লি যে মানবিক আশ্রয় দিতে চেয়েছিল, তা এখন একটি দীর্ঘ ও অস্বস্তিকর পরীক্ষায় পরিণত হচ্ছে। আর সেটা হলো দিল্লি তার এক পুরোনো মিত্রের জন্য কত দূর যেতে ইচ্ছুক এবং এই প্রক্রিয়ায় সে কূটনৈতিক সক্ষমতার কতটুকু ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

অভূতপূর্ব গণজাগরণে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উদ্‌যাপন। ৫ আগস্ট ২০২৪, সংসদ ভবন এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ