বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বিরোধীদের সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছে না সরকার: রাহুল গান্ধীর অভিযোগ
Published: 5th, December 2025 GMT
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিরোধী নেতাদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুলে দিলেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকার এতটাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে যে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বিরোধীদের সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবন চত্বরে এই অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, অথচ বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা করা এ দেশের প্রচলিত গণতান্ত্রিক পরম্পরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী ও মনমোহন সিংয়ের সময়েও এই পরম্পরা জারি ছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন দিল্লি পৌঁছেন। প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে গিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই। লাল কার্পেটে দাঁড়িয়ে পুতিনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর একই গাড়িতে তাঁরা দুজনে বিমানবন্দর থেকে রওনা হন লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।
পুতিন নয়াদিল্লি পৌঁছার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাহুল গান্ধী সরকারি মনোভাবের সমালোচনা করে ওই মন্তব্য করেন।
পুতিনের সফর নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরা দেশে এলে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে থাকেন। এটা একটা গণতান্ত্রিক প্রথা বা রীতি। কারণ, শুধু সরকারপ্রধানই নন, বিরোধীরাও দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাজপেয়ী বা মনমোহন সিংয়ের সময়েও এমনই হয়ে এসেছে। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না।
রাহুল বলেন, ‘এখন বিদেশি নেতারা এলে কিংবা আমি বিদেশে গেলে সরকার আগে থেকে জানিয়ে দেয়, আমাদের সঙ্গে তাঁরা যেন দেখা না করেন। সেই নির্দেশের কথা আমরা জেনেও যাই। বলা হয়, সরকার চায় না ওরা আমাদের কারও সঙ্গে দেখা করুন।’
পুতিন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতে এসেও তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ইউপিএ চেয়ারপারসন হিসেবে রাশিয়ায় গিয়ে ২০০৭ সালেও সোনিয়া দেখা করেছিলেন পুতিনের সঙ্গে।
অথচ এবার লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হিসেবে সোনিয়া অথবা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে দেখা করতে দেওয়া হলো না। রাহুলের অভিযোগ, মোদি সরকারের নিরাপত্তাহীনতাই এর কারণ।
বিজেপি ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বিরোধী নেতার এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। দুপক্ষই বলেছে, সরকারি বৈঠকের বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলার থাকলে বিদেশি রাষ্ট্রনেতারাই সেই আগ্রহ দেখান। সরকার তা বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থা করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালে রাহুল গান্ধী লোকসভার বিরোধী নেতা হওয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত) শেখ হাসিনা এ দেশে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে রাহুলের সাক্ষাৎ হয়েছিল। ভিয়েতনাম, মরিশাস, মালয়েশিয়া ও নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রনেতারাও এ দেশে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।
পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, পুরোটাই নির্ভর করে বিদেশি অতিথিদের ইচ্ছার ওপর।
কংগ্রেস সূত্র থেকে বলা হয়, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার জন্য হাসিনা ও পুতিন সব সময়ই কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। পুতিন এবারও সেই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তা হতে দেয়নি সফরের মেয়াদ কম হওয়ার অজুহাতে। পুতিন এবার ভারতে থাকছেন চব্বিশ ঘণ্টার মতো।
পুতিনের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে অবশ্য লোকসভা ও রাজ্যসভার দুই বিরোধী নেতা যথাক্রমে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় শিক্ষকদের কর্মবিরতি, পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা
তিন দফা দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে নিজেরাই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া শহরতলীর ১৮নং লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এ ঘটনা। এ দিন নির্ধারিত সময়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা না-নেওয়ায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন অভিভাবকরা। তারা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষার আয়োজন করেন। খাতা সংগ্রহ, খাতা বিতরণ, শৃঙ্খলা রক্ষা, সব কিছুই সামলান তারা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, তবে পরীক্ষার সময় কর্মবিরতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলেন, সন্তানদের সারা বছরের পরিশ্রমের মূল্যায়ন এই পরীক্ষা। আন্দোলনের কারণে সেটা নষ্ট হতে দিতে পারি না। এ কারণে বাধ্য হয়ে নিজেরাই পরীক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কুষ্টিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাসুদুল করিম বলেন, ‘‘অভিভাবকদের তীব্র চাপ এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনার মুখে পরীক্ষা নিতে হয়েছে। পরীক্ষায় অভিভাবকরাই সহযোগিতা করছেন।’’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সহযোগিতায় আজকে লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কারণ সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে। অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। জেলায় ৮০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। যেসব শিক্ষক আন্দোলনের জন্য পরীক্ষা নিচ্ছেন না তাদের তালিকা করা হচ্ছে।’’
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে ‘দৃশ্যমান অগ্রগতি’ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কমপ্লিট শাটডাউন ও সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দ্রুত দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ঢাকা/কাঞ্চন//