পাঁচ বছরের কারাভোগ করতে আজ কারাগারে গেলেন সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি
Published: 21st, October 2025 GMT
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি আজ মঙ্গলবার থেকে পাঁচ বছরের কারাভোগ শুরু করছেন। ইতোমধ্য তিনি কারাগারে পৌঁছেছেন। নির্বাচনী প্রচারের জন্য লিবিয়া থেকে অর্থ সংগ্রহের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ এবং বিশ্ব দরবারে পরিচিত একজন নেতার জন্য এটি অপ্রত্যাশিত এক পতন বলা চলে।
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ছিলেন সারকোজি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি সহযোগী মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর পর প্রথম সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কারাদণ্ড ভোগ করতে যাচ্ছেন সারকোজি।
তবে কারাগারে যাওয়ার আগে লা ট্রিবিউন দিমাঞ্চে পত্রিকাকে সারকোজি বলেছেন, ‘আমি কারাগারকে ভয় পাই না। কারাগারের ফটকেও আমি মাথা উঁচু রাখব।’
দেশের কারাব্যবস্থার প্রধান সেবাস্তিয়ান কওলে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টকে একাকী নির্জনে রাখা হবে। লা সাঁতে কারাগারে থাকবেন সারকোজি।
কওলে আরটিএল রেডিওকে বলেন, তিনি দিনে দুবার একা একা ব্যায়ামের জায়গায় যেতে পারবেন। তিনি কারাগারে তাঁর সেলেও একা থাকবেন।
কারাগারে কী সুবিধা পাবেন
সারকোজিকে পাঁচ বছরের দণ্ডাদেশের মধ্য দিয়ে তাঁর আইনি লড়াইয়ের বছরগুলো শেষ হলো। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২০০৭ সালের নির্বাচনে তিনি লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে নগদ লাখ লাখ ইউরো নিয়েছিলেন। গাদ্দাফি পরে আরব বসন্তের সময় ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হন।
এই ষড়যন্ত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগে সারকোজি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেই অর্থ গ্রহণ বা ব্যবহার করার অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন।
সারকোজি বারবরই ভুল কিছু করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিচারকেরা তাঁকে অপমান করতে চাইছেন। তিনি আপিল করেছেন। কিন্তু তাঁর সাজার প্রকৃতি এমন যে আপিলপ্রক্রিয়া চলাকালে তাঁকে কারাগারে যেতেই হবে।
সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি এর আগেও অন্য একটি দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। সেই মামলায় তিনি বিচারকের কাছ থেকে গোপন তথ্য পেতে চেয়েছিলেন বলে দোষী সাব্যস্ত হন। পায়ের গোড়ালিতে ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরে বাড়িতে বসেই তিনি সেই সাজা ভোগ করেছিলেন।
সারকোজিকে প্যারিসের যে লা সাঁতে কারাগারে রাখা হচ্ছে, সেখানে অতীতে বামপন্থী নেতা কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং পানামার নেতা ম্যানুয়েল নোরিয়েগাকেও রাখা হয়েছিল। এখানে নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েদিদের একক সেলে রাখা হয়। এমনকি বাইরের কর্মকাণ্ডের সময়ও তাঁদের আলাদা রাখা হয়।
পড়ার তালিকায় ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’
সারকোজির আইনজীবী জাঁ-মিশেল ডারোইস ফ্রান্সইনফো রেডিওকে বলেন, তিনি পুলওভার ও ইয়ারপ্লাগ নিয়ে কারাগারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
ডারোইস বলেন, তিনি কয়েকটি ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছেন, যার মধ্যে কিছু পুলওভার রেখেছেন। কারণ, ঠান্ডা লাগতে পারে। আর কিছু ইয়ারপ্লাগও নিচ্ছেন। কারণ, সেখানে প্রচুর গোলমালও হতে পারে।
সারকোজি লে ফিগারো পত্রিকাকে জানিয়েছিলেন, তিনি কারাগারে প্রথম সপ্তাহের জন্য তিনটি বই নিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে আলেকজান্ডার ডুমার লেখা ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’ রয়েছে। এটি এমন এক ব্যক্তির গল্প যিনি অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ হন এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের পরিকল্পনা করেন।
সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্টকে কারাগারে পাঠানোর এই সিদ্ধান্তে সারকোজির রাজনৈতিক সহযোগী ও কট্টর ডানপন্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বিএফএম টিভির জন্য করা এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফরাসি উত্তরদাতাদের ৫৮ শতাংশ মনে করেন, সারকোজির বিরুদ্ধে রায়টি ছিল নিরপেক্ষ। ৬১ শতাংশ ফরাসি আপিলের জন্য অপেক্ষা না করে সারকোজিকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে সারকোজি ও তাঁর স্ত্রী কার্লা ব্রুনির সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। মাখোঁ গতকাল সোমবার বলেছেন, তিনি কারাবাসের আগে সারকোজির সঙ্গে দেখা করেছেন।
সারকোজির ঘনিষ্ঠ ফ্রান্সের বর্তমান বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিনআরটিএল রেডিওকে বলেন, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক ফর স স রক জ র ন স রক জ চ বছর র কর ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সারকোজির কারাবাস শুরু মঙ্গলবার, বই লিখবেন কারাগারে
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির কারাবাস শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। প্যারিসের একটি কারাগারে পাঁচ বছরের কারা ভোগ করতে হবে তাঁকে। কারাগারে যাওয়ার আগে সারকোজি বলেছেন, তিনি ‘ভীত নন’। আর কারাগারে থাকার সময় বই লিখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ৭০ বছর বয়সী নিকোলা সারকোজিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন প্যারিসের আদালত। যুদ্ধ-পরবর্তী ফ্রান্সের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটভুক্ত কোনো দেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কারাগারে যাচ্ছেন তিনি।
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সারকোজি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তাঁকে নির্বাচন করার জন্য অর্থ দিয়েছিলেন লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। যদিও সারকোজি নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে আসছেন।
প্যারিসের লা সান্তে নামের একটি কারাগারে নেওয়া হবে সারকোজিকে। এর আগে গতকাল রোববার তিনি ফরাসি সংবাদমাধ্যম লা ত্রিব্যুন দিমঁশকে বলেছেন, ‘কারাগার নিয়ে ভীত নই। সান্তের ফটকেও আমি মাথা উঁচু করেই ঢুকব।’ কারাগারে বিশেষ সুবিধাও চান না বলে জানিয়েছেন।
সারকোজি লা ত্রিব্যুন দিমঁশকে বলেন, কারাগারে থাকার সময় কোনো অভিযোগ অথবা কারও সহানুভূতি নিতে চান না তিনি। তাঁকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি আরও বলেছে, কারাগারে থাকার সময়টি একটি বই লেখার কাজে ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।