রাঙামাটি পার্বত্য অঞ্চলের বসববাসরত নেপালের বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি গুর্খা সম্প্রদায়ের দেওয়ালী পূজা (কালি পূজা) উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ঐতিহবাহী ‘ভৈল-ঢেওসি’ উৎসব বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে।

দেওয়ালী পূজাকে (কালিপূজা) সামনে রেখে সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী নেপালের বংশদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি গুর্খা সম্প্রদায় সুদীর্ঘকাল থেকে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে এই উৎসব পালন করে আসছে। 

উৎসবের প্রথম দিনকে ‘ভৈল’ ও দ্বিতীয় দিনকে বলা হয় ‘ঢেওসি’। নেপালের বংশদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি গুর্খা সম্প্রদায়ের আবাল, বৃদ্ধা, বণিতারা সবাই এই উৎসবে মেতে উঠে দুইদিন আনন্দে মেতে ওঠে।

এই দুইদিন গুর্খা সম্প্রদায়ের আবাল বৃদ্ধা বণিতা সবাই কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সন্ধ্যার পর পাড়ায় পাড়ায় মানুষের বাসা-বাড়িতে গিয়ে বাঁশের লাঠি হাতে মাটিতে ঠুকে সুরের তালে তালে কবিতার ছন্দে গান গেয়ে শুভেচ্ছা উপহার চাউল, টাকা, তরিতরকারী, বিশেষ পানীয় (পাহাড়ি মদ), সংগ্রহ করে থাকে। এই সময় নাচ-গানসহ ঘরে ঘরে মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে ও রাতভর আনন্দে মেতে থাকে।

এই সমস্ত জিনিস সংগ্রহ করে পরবর্তীতে সবাই মিলে বনভোজনের আয়োজন করে থাকে। দ্বিতীয় দিনে ভাই টিকা দেওয়া হয়। দধিতে চাউল মিশিয়ে ভাই বোন একে অপরকে তাজ পরিয়ে দেওয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী ঐতিহবাহী ‘ভৈল-ঢেওসি’ উৎসব।

রাঙামাটি শহরের জেল সড়কের কন্ট্রাক্টর পাড়া, মাঝেরবস্তি, আসামবস্তি ও গর্জনতলীসহ অন্যান্য পাড়া মহল্লায় নেপালের বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি গুর্খা সম্প্রদায়ের মানুষ ‘ভৈল-ঢেওসি’ উৎসবে মেতে উঠতে দেখা যায়।

দেওয়ালী পূজাকে (কালি পূজা) সামনে রেখে রাঙামাটি জেলায় বসবাসকারী নেপালের বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি গুর্খা সম্প্রদায়ের মানুষরা সুদীর্ঘকাল থেকে বিপুল উৎসাহি উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে এই ‘ভৈল-ঢেউসি’ উৎসব পালন করে আসছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গেজেটের এস, আর ও, নং-৭৮-আইন-২০১৯, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০(২০১০ সনের ২৩ নং আইন) এর ধারা ১৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার উক্ত আইনের তফসিলের পরিবর্তে নিম্নরূপ নতুন তফসিল প্রতিস্থাপন করে তফসিল ধারা ২(১) ও ধারা ১৯ দ্রষ্টব্যের ক্রমিক নং ৩০-এ গুর্খা সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ঢাকা/শংকর/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়

সন্ধ্যার আকাশ ঢেকে গেছে নরম কুয়াশায়। আকাশের বুক জুড়ে নরম কুয়াশার পরত, আর মাটির উপর ঝলমলে হাজার প্রদীপের সারি। সব মিলিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যা যেন আজ অন্যরকম।

ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শুরু করে বাদামতলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট প্রদীপ—যেন কারো সূক্ষ্ম আঁচড়ে আঁকা আলোর নদী। প্রতিটি শিখা যেন অন্ধকারকে ভাঙতে চায়, হৃদয়ের অজানা এক অদৃশ্য পথ দেখায়।

আরো পড়ুন:

সুন্দরবনে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের ৫ রুট, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বসেছে প্রতিমার হাট

প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে দীপাবলি উদযাপন করা হয়। দীর্ঘ সময় পর সোমবার (২০ অক্টোবর) দ্বিতীয়বারের মতো এবার শ্যামা কালীপূজাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করে ‘বাণী অর্চনা সংঘ’। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি আলপনা আর মাটির প্রদীপে আজ আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।

এর আগে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন ট্রান্সপোর্ট চত্বরে। কেউ হাতে প্রদীপ নিচ্ছেন, কেউ ঝাড়বাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউবা বন্ধুর সঙ্গে হাসিতে মেতে উঠছেন।

সন্ধ্যা নামতেই এক জাদুকরী দৃশ্যে রূপ নেয় পুরো ক্যাম্পাস। সারি সারি প্রদীপের আলোয় ক্যাম্পাসের লাল ইটের পথ হয়ে ওঠে সোনালি। বাতাসে ভেসে আসছে ধূপের গন্ধ। হাসির ঝলক আর আলোর মায়ায় মুহূর্তগুলো থেকে যায় স্মৃতির ভাঁজে।

এক শিক্ষার্থী বললেন, “সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, ব্যস্ততা— আজকের এই সন্ধ্যা যেন একটু থেমে থাকার দিন। প্রদীপ জ্বালানোটা শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা উপলক্ষ।”

বাণী অর্চনা সংঘের সভাপতি অনিক মালো বলেন, “ক্যাম্পাসে দীপাবলীর উৎসব উদযাপন করতে পেরে নিজের কাছে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সব অপশক্তি দূর হবে, এটা আশা করি।”

মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি প্রদীপের আলো বাতাসে কাঁপছে, যেন এক জীবন্ত শিখা। কেউ বাজি ফুটাচ্ছে, কেউ কেউ শাড়ি পরে এসেছে–মনোযোগ ভালো ছবির ফ্রেমে। সেলফি তুলছে। তবে উৎসবের মধ্যে কোথাও নেই বিশৃঙ্খলা— আছে শুধু উচ্ছ্বাস আর আলোর স্নিগ্ধতা। মিষ্টিমুখ চলছে, কেউ মিষ্টি মুখে তুলে বলছে, “এত সুন্দর ক্যাম্পাস আগে দেখিনি!”

ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ঋতু রানী বলেন, “পরিবারের বাইরে প্রথমবারের মত দীপাবলি পালন করছি। সবারর অংশগ্রহণে বেশ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হচ্ছে।”

ট্রান্সপোর্ট চত্বরে তখন চলছে আরেক দৃশ্য। গানের আসর বসেছে ছোট করে। কেউ গিটার হাতে, কেউ তাল দিচ্ছে তালি দিয়ে। লালন গীতির সুরের ভেলায় মিলেমিশে যাচ্ছে দীপের আলো আর তারুণ্যের হাসি। রাত যত গভীর হচ্ছে, প্রদীপগুলো তত নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখে তখনও জ্বলছে আলো। সেই আলো শুধু প্রদীপের নয়। একাত্মতার, সৌন্দর্যের, আর জীবনের প্রতি ভালোবাসার আলো।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন, “শ্যামা পূজায় পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তি বিরুদ্ধে আমরা প্রদীপ প্রজ্বলন করি। আমরা চাই এই প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সব খারাপ শক্তির বিনাশ হোক।”

আজকের এই এক হাজার প্রদীপের সন্ধ্যা যেন শুধু আলোর উৎসব নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অন্তরের এক দীপান্বিত যাত্রা। প্রতিটি শিখা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবন ছোট ছোট আলোয় পূর্ণ, আর সেই আলোর উষ্ণতায় আমরা সবাই এক।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
  • বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া আনন্দ উৎসব
  • দীপাবলি: অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর উৎসব
  • আন্দোলনরত শিক্ষকদের ভুখা মিছিল
  • মোরাল প্যারেন্টিং বৃত্তি পেল অর্ধশতাধিক ইবি শিক্ষার্থী
  • ছবি: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্যের উৎসবে শামিল সবাই
  • গানে গানে মুখর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, লালন স্মরণে দারুণ এক রাত
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা এমপিও শিক্ষকদের
  • জাবি সায়েন্স ক্লাবের সায়েন্স ফেস্টিভালের সমাপনী