তিন সপ্তাহ আগে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসে বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানো হবে। মানে এখনকার বাড়িভাড়া মিলিয়ে দেড় হাজার টাকা হবে। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই গত রোববার নতুন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) করার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার বাড়িভাড়া মূল বেতনের ১৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই বৃদ্ধি হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী মাস অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে। বাকি আরও সাড়ে ৭ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে।

এখন অনেকের জিজ্ঞাসা, নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে একজন শিক্ষকের হিসাবের খাতায় কত টাকা বাড়িভাড়া যাবে? এর এককথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সব শিক্ষকের বেতন সমান নয়। যাঁরা পুরোনো শিক্ষক, তাঁদের মূল বেতন বেশি। আবার নতুন শিক্ষকদের মধ্যেও বিষয় ভিন্নতার কারণে বেতনের তারতম্য আছে। যেমন চাকরির শুরুতে মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন সহকারী শিক্ষকের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞানের শিক্ষক ইত্যাদি) মাসে মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তবে কৃষিশিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির শিক্ষকদের মূল বেতন শুরুতে ১৬ হাজার টাকা। আবার কলেজের শিক্ষকদের মূল বেতন চাকরির শুরুতে (নবম গ্রেডে) ২২ হাজার টাকা।

বর্তমানে সারা দেশে ছয় লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় পৌনে ২ লাখ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। তাঁরা এত দিন সরকারের কাছ থেকে মাসে মূল বেতন, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছিলেন।

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষকেরা টাকার অঙ্কে কত বাড়িভাড়া পাবেন, তার একটি ধারণা দেওয়া সম্ভব। যেমন যে শিক্ষকের মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, শতাংশের হিসাবে (সাড়ে ৭ শতাংশ) আগামী মাস থেকে তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ৯৩৭ টাকা করে। কিন্তু বাস্তবে তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা। কারণ, সরকার বলেছে, শতাংশের হিসাবে যা–ই হোক, তা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী বছরের জুলাই থেকে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া পাবেন। সেই হিসাবে যে শিক্ষকের মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ১ হাজার ৮৭৫ টাকা। কিন্তু তখনো তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা। কারণ, তখনো ন্যূনতম বাড়িভাড়া হবে দুই হাজার টাকা।

আবার যে শিক্ষকের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা, নভেম্বর থেকে শতাংশের হিসাবে তাঁর বাড়ি ভাড়া হওয়ার কথা ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু একই কারণে তিনিও পাবেন দুই হাজার টাকা করে। তবে তিনি আগামী বছরের জুলাই মাসে বাড়িভাড়া পাবেন ২ হাজার ৪০০ টাকা করে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরে বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে পরবর্তী বেতন স্কেলে অতিরিক্ত এই সুবিধা সমন্বয় করা হবে।

সরকার ইতিমধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামোর সুপারিশ প্রণয়নে বেতন কমিশন গঠন করেছে। কমিশন আশা করছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই বেতন কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করা সম্ভব হবে।

অতীতে দেখা গেছে, নতুন পে স্কেল অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ে। ফলে আসন্ন নতুন বেতন স্কেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও বাড়তে পারে। ফলে তখন শতাংশের হিসাবে তাঁদের বাড়িভাড়াও বাড়তে পারে।

কত টাকা লাগতে পারে

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ অক্টোবর অর্থ বিভাগকে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিলে বছরে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি, ১০ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি এবং ৫ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এখন ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে বছরে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা লাগবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য আর্থিক অনুদান দেয় সরকার, যা এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নামে পরিচিত। বর্তমান বাস্তবতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যে বেতন, তা দিয়ে তাঁদের পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর পাশাপাশি মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। আন্দোলনের টানা ১০ দিনের মাথায় সরকার বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ-প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সচিবালয় থেকে শহীদ মিনারে গিয়ে ঘোষণা দেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমাদের সব আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র ন য নতম সরক র এমপ ও

এছাড়াও পড়ুন:

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাঁর মিত্রদের সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল কূটনৈতিক ইস্যুগুলোর একটি তাইওয়ান। শুক্রবার প্রকাশিত ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নথিতে এ ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল।

এমন সময় নথিটি প্রকাশ করা হলো, যখন পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক শক্তি প্রদর্শন করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দেশটি মূলত গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ান ও জাপানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

নথিতে বলা হয়েছে, ‘সামরিক প্রাধান্য বজায় রেখে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানোই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।’

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করার কথা কখনোই অস্বীকার করেনি দেশটি। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। এ নিয়ে আশপাশের ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রই দ্বীপটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমর্থক। মার্কিন আইনে তাইওয়ানকে আত্মরক্ষায় সহায়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এ ইস্যুই বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের একটি বড় অস্বস্তির জায়গা।

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করার কথা কখনোই অস্বীকার করেনি দেশটি।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রণীত ২০১৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রের একটি বাক্যে তাইওয়ানের কথা তিনবার উল্লেখ করা হয়েছিল। আর নতুন কৌশলপত্রে তিনটি অনুচ্ছেদজুড়ে আটবার তাইওয়ানের উল্লেখ আছে। নথিতে বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ানকে ঘিরে এত মনোযোগ থাকা স্বাভাবিক।’ বাণিজ্যসমৃদ্ধ জলপথে এর কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে দ্বীপটির আধিপত্যই এই মনোযোগের প্রধান কারণ।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত দ্বীপমালায় যুক্তরাষ্ট্র এমন সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে, যা যেকোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারবে। তবে এককভাবে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এ জন্য মিত্রদের এগিয়ে আসতে হবে, ব্যয় বাড়াতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— সমষ্টিগত প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে।

তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা বাড়লে ট্রাম্প কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়ে তিনি এখনো পর্যন্ত কিছুই বলেননি। অবশ্য তাঁর আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবার বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।

আগামী বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে দুই দেশের নেতারা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই প্রশমিত করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

চুক্তি করার প্রবণতা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা— এসব কারণে টোকিও থেকে ম্যানিলা পর্যন্ত অনেক দেশে শঙ্কা বাড়ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাইওয়ান ও আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি সমর্থন কমাবে।

আগামী বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে দুই দেশের নেতারা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই প্রশমিত করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি পার্লামেন্টে বলেন, তাইওয়ানে চীনের কোনো হামলা যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। এতে বেইজিং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ