ঢাকার কাছেই ‘৫০০–৭০০’ বছরের পুরোনো এক গাছ
Published: 24th, October 2025 GMT
যখন শুনলাম, ঢাকার কাছেই পূর্বাচল উপশহর–সংলগ্ন একটি গ্রামে একটি গাছ আছে, যার বয়স ৫০০ থেকে ৭০০ বছর, তখন থেকেই গাছটি দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ছিলাম। অবশেষে সেই সুযোগ এল। প্রকৃতিবন্ধু রুবাইয়াত রবিনের প্রস্তাবে হেমন্তের দ্বিতীয় দিনের দুপুরেই বেরিয়ে পড়লাম সেই গাছের সন্ধানে। বাসে গিয়ে দুজন নামলাম কুড়িল বিশ্বরোডে। এরপর একটি অটোরিকশা ধরে গেলাম লেংটার মাজার। সেখানে একটা ইজিবাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন চালক আকতার ভাই। তাঁকে ব্যাপারটা খোলাসা করে বলতেই তিনি আমাদের মনের কথা বুঝতে পারলেন। বললেন, ‘আর বলতে হবে না। দেখেন, কোথায় আপনাদের কীভাবে নিয়ে যাই! শুধু ঘুরবেন আর ফটো তুলবেন, প্রাণভরে পূর্বাচলের ঠান্ডা হাওয়া খাবেন। একদম ফ্রি।’
সত্যিই তা–ই। ঢাকার এত কাছে পূর্বাচলের মতো একটি ক্রমবর্ধিষ্ণু শহরে গ্রামের আমেজ! ঢাকায় হেমন্তকে ঠাহর করতে না পারলেও এখানে এসে বুঝতে পারছি, বাংলায় হেমন্ত ঋতু এসে গেছে। আকতার ভাই ঠিক বুঝেছেন কি না, সন্দেহ হলো। তাই নিশ্চিত হতে আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘অনেক প্রাচীন একটা গাছ, দেখেছেন কখনো?’ একগাল হেসে আকতার ভাই বললেন, ‘কী যে বলেন, আমার বাড়ি পূর্বাচলের দশ নম্বরে, এই সেক্টর হওয়ার আগে এই গ্রামেই আমার জন্ম। আর হিরনালের শিরনিগোটাগাছ চিনব না?’
আকতার ভাইয়ের মুখেই সে প্রাচীন বৃক্ষের নামটা প্রথম শুনলাম। এ জীবনে কত গাছের নাম যে শুনেছি! কিন্তু শিরনিগাছ নামে যে কোনো গাছ আছে, তা কখনো শুনিনি। তাই গাছটি দেখার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। কতক্ষণে পৌঁছাব সেখানে কে জানে? পথে নানা রকমের বুনো ফুল, ঝোপঝাড়, আঁধারমাখা বাঁশবন-শালবন। সেসব ঝোপঝাড়ের মধ্য থেকে বুনো ফুলের ছবি, পোকামাকড়ের ছবি, প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে তুলতে বেলাটা পড়ে এল। আকতার ভাই আমাদের গাছপালার নেশা দেখে ছিনেজোঁকের মতো আমাদের সঙ্গে লেগে রইলেন, শিরনিগোটাগাছটা না দেখিয়ে কিছুতেই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন না। সে গাছের কাছে একটা বিশাল বটগাছও নাকি আছে, যার কোনো গোড়া বা আদিগাছটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
অবশেষে পড়ন্ত বেলায় পৌঁছালাম সেই হিরনাল গ্রামে। গাছের গোড়ায় নামতেই বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! এত বড় কোনো গাছ হয়? এ দেশে এত দিন বটগাছকেই মানতাম মহীরুহ, এখন তো দেখছি এ গাছটাও কম না। গাছের বিশাল গুঁড়িটা কয়েকজন মিলে হাত ধরাধরি করেও বেড় পাওয়া যাবে না। অবাকবৃক্ষের দিকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করলাম, এটাই কি সেই শিরনিগোটাগাছ? আকতার ভাই নিশ্চিত করলেন। আমিও তার ডালপাতা দেখে নিশ্চিত করলাম, ওটি খিরনিগাছ। স্থানীয় উচ্চারণে নামের বিবর্তন ঘটেছে, খিরনি হয়ে গেছে শিরনি।
গাছটির ইতিহাস ও সে সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। ওনারা অবশ্য আমার নামটাই সমর্থন করলেন। স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম ফকির (৫৫) বললেন, ‘এখন ফুল ফুটেছে। ফাগুন-চৈত্র মাসে গাছটা হলদে গোটা গোটা ফলে ভরে যায়। পাকা ফল তলায় পড়ে। ছেলেপুলেরা খুঁটে খায়। তবে আমরা কেউ গাছের পাতাটাও ছিঁড়ি না।’
খিরনির ফুল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আকত র ভ ই শ রন গ আম দ র করল ম
এছাড়াও পড়ুন:
লটারির পুরস্কার যখন পিকাসোর চিত্রকর্ম
পাবলো পিকাসোর চিত্রকর্মের বিশ্বজোড়া কদর। দামও আকাশছোঁয়া। সে জন্যই হয়তো শিল্পপ্রেমীদের অনেকেই পিকাসোর চিত্রকর্ম নিজের সংগ্রহে রাখার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। তাঁদের জন্য বড় সুযোগ হতে পারে ফ্রান্সের একটি দাতব্য সংস্থার লটারি। ১০০ ইউরোর লটারির টিকিট কিনে মিলতে পারে পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম।
এই লটারির টিকিট পাওয়া যাবে ‘ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে। এর উদ্দেশ্য মহৎ। মোট ১ লাখ ২০ হাজার টিকিট বিক্রির অর্থ যাবে আলঝেইমার রোগ নিয়ে গবেষণায়। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টির প্যারিস কার্যালয়ে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
পিকাসোর ওই চিত্রকর্মে ‘ডোরা মার’ নামের এক নারীকে আঁকা হয়েছে। তিনি পিকাসোর একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৯৪১ সালে আঁকা চিত্রকর্মটির শিরোনাম ‘তেত দ্য ফাম’। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে ‘নারীর মাথা’। কাগজের ওপর গোয়াশ রঙে আঁকা চিত্রকর্মটির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৩ ইঞ্চি। চিত্রকর্মটির বর্তমান বাজারদর ১০ লাখ ইউরো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকমে এমন লটারির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমটি ২০১৩ সালে। সেবার লেবাননের তায়ার শহর রক্ষায় ৪৮ লাখ ইউরোর তহবিল জোগাড় করা হয়েছিল। আর পরেরবার ২০২০ সালে আফ্রিকায় পানির উৎস ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার জন্য তোলা হয়েছিল ৫১ লাখ ইউরো। ওই দুবারও কিন্তু পুরস্কার ছিল পিকাসোর দুটি চিত্রকর্ম।