প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর আবার উন্মুক্ত হয়েছে রাঙামাটির পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই সেতুটিতে পর্যটকেরা ভিড় করছেন। এর আগে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ার গত ৩০ জুলাই সেতুটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

জেলা পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধস ও দুর্যোগের ঘটনার পর থেকে প্রতি বর্ষায় সেতুটি পানিতে তলিয়ে যাওয়া শুরু হয়। কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। চলতি বছর ভারী বৃষ্টিতে সেতুটির অন্তত ৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে ছিল। বৃষ্টি কমায় ধীরে ধীরে এ সেতুর পাটাতন ভাসতে থাকে। একপর্যায়ে গত বুধবার এর পাটাতন ভেসে ওঠে। গতকাল বৃহস্পতিবার এটি মেরামত করা হয়। পরে আজ এটি চালু করা হয়।

উন্মুক্ত হওয়া এ সেতুতে উঠতে প্রথম দিনেই ভিড় করেছেন কয়েক শ পর্যটক। বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুতে পর্যটকেরা উচ্ছ্বাস। তাঁদের কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা স্বর্ণা আক্তার বলেন, তিনি প্রথমবারের মতো সেতুটিতে এসেছেন। গতকালকেই এটি উন্মুক্ত হয়েছে এমন খবর পেয়েছেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে সেতুতে দাঁড়িয়ে পাহাড়ঘেরা হ্রদ দেখতে তাঁর ভালো লাগছে।

ঝুলন্ত সেতুর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো.

মামুন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর খোলায় অনেকেই উচ্ছ্বাসিত। দুপুর পর্যন্ত শতাধিক টিকিট বিক্রি হয়েছে।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, হ্রদের পানি কমায় সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেতুটি থেকে গড়ে দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করে। পরে এটি রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেতুটি নির্মাণের পর সারা দেশ থেকে পর্যটকেরা এটি দেখতে ছুটে আসতে শুরু করেন। এখনো সেতুটি দেখতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ দর্শনার্থী আসেন এবং প্রতিবছর অন্তত অর্ধকোটি টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উন ম ক ত পর যটক

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে সরকারের ১২টি নতুন নির্দেশনা

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকার নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। আজ বুধবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ–সংক্রান্ত ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়–বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকার।

উল্লেখ্য, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ বাস্তবায়ন বিষয়ে এক সভা গতকাল (মঙ্গলকার) পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ই-টিকিটিং ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন মাস পর দৃশ্যমান রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
  • যে দেশে সড়কে ঘুরে বেড়ায় শত শত বিড়াল
  • সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে সরকারের ১২টি নতুন নির্দেশনা