কমলাপুর স্টেশনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভাইরাল হওয়া যুবকের চাকুটি জব্দ
Published: 24th, October 2025 GMT
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভীতি সৃষ্টি করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া যুবক শাহ আলী শিকদারের দেওয়া তথ্যে তাঁর চাকুটি জব্দ করেছে ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর–সংলগ্ন কাওলা রেলগেট এলাকা থেকে গামছায় প্যাঁচানো অবস্থায় চাকুটি উদ্ধার করা হয়।
আজ শুক্রবার ঢাকা রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ অক্টোবর রাতে শাহ আলী শিকদার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে চাকু নিয়ে প্ল্যাটফর্মে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফেসবুকে ভাইরাল হন। গত রোববার রাতে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহ আলী শিকদারের চাকুটি গতকাল কাওলা থেকে উদ্ধার করা হয়।
১৫ অক্টোবর রাতে শাহ আলী শিকদার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কোমরে লুকানো চাকু প্রকাশ্যে বের করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরপরই রেলওয়ে পুলিশের দুটি বিশেষ দল তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে।
গ্রেপ্তার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি (শাহ আলী শিকদার) দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় জনাকীর্ণ স্থানে জনমনে ভীতি এবং ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। বিভিন্ন অপরাধে তিনি এরই মধ্যে কয়েক মাস জেলও খেটেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমল প র শ হ আল র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদিকে হামলা: গুলির লক্ষ্য একজন না, লক্ষ্য নির্বাচন
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটা একটা বার্তা। আর বার্তাটা খুব সোজা, রাজনীতির মাঠে যে কণ্ঠটা একটু আলাদা, আবার বড় দলগুলোর সরাসরি ছায়ায় নেই, তাকে আঘাত করো। কম ঝুঁকি, বেশি লাভ।
ঘটনাটা ঘটেছে ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায়, দিনের আলোয়, জুমার পরের সময়ের মধ্যে। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যেও জুমার পরের কথাই এসেছে। পুলিশ বলছে, মোটরসাইকেল আরোহীরা গুলি করে পালিয়েছে। হাদি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, আবার ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা বলে মাঠে ছিলেন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল থেকে এভারকেয়ারে নেওয়ার খবরও আসে।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দিকটা হলো টাইমিং। তফসিল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এমন একটা হামলা, এটাকে ‘সাধারণ অপরাধ’ বলে উড়িয়ে দিলে বাস্তবতা ধরা পড়বে না। সংবাদ রিপোর্টে পরিষ্কার যে তফসিল ঘোষণার পরপরই ঘটনাটা ঘটেছে, আর দেশ এখন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচনকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে।
এই মুহূর্তে একজন পরিচিত মুখকে গুলি করা মানে এক ঢিলে অনেক পাখি মারা। জনমনে আতঙ্ক বাড়বে, রাজনৈতিক পক্ষগুলো সন্দেহ করবে, পাল্টা ভাষা আরও কড়া হবে, মাঠ আরও উত্তপ্ত হবে। নির্বাচনের আগের বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করার চেয়ে কার্যকর অস্ত্র খুব কম আছে।এই মুহূর্তে একজন পরিচিত মুখকে গুলি করা মানে এক ঢিলে অনেক পাখি মারা। জনমনে আতঙ্ক বাড়বে, রাজনৈতিক পক্ষগুলো সন্দেহ করবে, পাল্টা ভাষা আরও কড়া হবে, মাঠ আরও উত্তপ্ত হবে। নির্বাচনের আগের বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করার চেয়ে কার্যকর অস্ত্র খুব কম আছে।
হাদিকে টার্গেট করার যুক্তিটা এখানেই। তিনি বিএনপি-জামায়াতের মতো বড় দলগুলোর প্রকাশ্য কর্মী নন। ইনকিলাব মঞ্চ নিজেকে আলাদা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তুলে ধরে, হাদি নিজেও সেই পরিচয়ই সামনে রাখেন।
ফলে তাঁকে আঘাত করলে কোনো দল ‘দলীয় আক্রমণ’ বলে সঙ্গে সঙ্গে পুরো মেশিন নামাবে না, কিন্তু জনমনে তার প্রতিক্রিয়া হবে বড়। কারণ, হাদি এক বছরের বেশি সময় ধরে জনপরিসরে দৃশ্যমান ছিলেন, শক্ত ভাষায় কথা বলতেন, যার অনেক কথা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়, সেই কথার সঙ্গে যেমন কিছু মানুষ একমত হয়েছেন, তেমনি অনেকে বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু মানুষ তাঁকে শুনতেন। এই শোনা, এই দৃশ্যমানতা, এই আবেগই তাঁকে হাই ভ্যালু টার্গেট করে তোলে।
আরও পড়ুনতফসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ৫ ঘণ্টা আগেআরেকটি বিষয় আছে, আমাদের দেশে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটা যতটা গ্ল্যামারাস, ততটাই বিপজ্জনক। দলীয় রাজনীতির ছায়া না থাকলে আপনি স্বাধীন থাকেন, কিন্তু একা থাকেন। নিরাপত্তা, সংগঠন, শৃঙ্খলা, পাল্টা চাপ তৈরি করার ক্ষমতা, এগুলো একা থাকলে কমে যায়। হাদির ক্ষেত্রে এই একা থাকার সুবিধা আর ঝুঁকি দুটোই কাজ করেছে।
এখন প্রশ্ন আসে, রাষ্ট্র কোথায় ছিল? ৫ আগস্ট ২০২৪-এর সরকার পতনের পর দেশ একটা দীর্ঘ ট্রানজিশনের পথে যাত্রা করেছে, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। সেই সময় মানুষ ভাবছিল আইনশৃঙ্খলা ঠিক হবে, ভয়ের চক্র থামবে, নির্বাচন হবে, ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাষ্ট্র বারবার আশ্বাস দিয়েছে, মাঠে মানুষ বারবার অনিশ্চয়তা দেখেছে। তফসিল ঘোষণার পরদিন দিনের আলোয় একজন প্রার্থী এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্রকে গুলি করার ঘটনা সেই অনিশ্চয়তাকে নগ্ন করে দিল।
রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর দ্রুত তদন্ত ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশও ‘ম্যানহান্ট’ বলছে। কিন্তু সমস্যা কেবল নির্দেশে না, সমস্যাটা হলো বিশ্বাসে। মানুষ কাগজে নির্দেশ দেখে না, মানুষ রাস্তায় নিরাপত্তা দেখে। মানুষ দেখে, নির্বাচনের আগের মাঠে কে হাঁটতে পারছে, কে হাঁটতে ভয় পাচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।