যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: মাদুরো
Published: 25th, October 2025 GMT
বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল ২৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভূমধ্যসাগর থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর নির্দেশ দেন। যা সর্বোচ্চ ৯০টি যুদ্ধবিমান বহন করতে সক্ষম। এই রণতরী যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেবে বলে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে মাদুরো বলেন, “তারা একটি নতুন চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরি করছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর কোনো যুদ্ধে জড়াবে না, অথচ এখন নিজেরাই যুদ্ধ তৈরি করছে।”
ওয়াশিংটনের দাবি—এই সামরিক তৎপরতা মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান। তবে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত দশটি বিমান হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে। শুক্রবারের সর্বশেষ হামলায় ছয় জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে হেগসেথ জানিয়েছেন। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ট্রেন দে আরাগুয়া নামের একটি অপরাধী সংগঠনের নৌযান, যাকে যুক্তরাষ্ট্র “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেক দেশও ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থি হতে পারে।
মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দল থেকেই প্রেসিডেন্টের এককভাবে হামলার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “যদি কেউ মাদকবাহী নৌকা ধ্বংস হতে না দেখতে চায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠানো বন্ধ করুক।”
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ ফেলো ড.
ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওয়াশিংটন স্থল অভিযান চালানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, “আমরা এখন স্থলভাগের দিকেও নজর দিচ্ছি, কারণ সমুদ্র আমরা ইতিমধ্যেই ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।”
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নির্বাচন হতেই হবে
বাংলাদেশে নির্বাচনপূর্ব সময়ে সব সময় কিছু বিশৃঙ্খলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে বেশি নাজুক। এর কারণ বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে নেমেছে, সেখান থেকে বর্তমান সরকার দেড় বছর সময় পেলেও খুব দৃশ্যমান কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এবং এর আগে থেকে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে ঘাটতি ছিল। কাজেই প্রস্তুতিও সেভাবে নেওয়া হয়নি। বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এর আগে খোয়া গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো উদ্ধার করার জন্য জোর তৎপরতা চালানোর মতো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত ছিল, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আমরা দেখতে পেয়েছি।
আমরা এটাও জানি যে আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ), বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং অন্য যে নেতারা ভারতে পালিয়ে গেছেন, তাঁরা সেখান থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে উসকানি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল। সে ধরনের কোনো প্রস্তুতি যদি তারা নিয়ে থাকে, তাহলে অবস্থার অবনতি হতো না বা হওয়ার কথা নয়।
যেসব বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই বাহিনীগুলোর কর্মদক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হয়নি। এই বাহিনীকে সরকার সম্পূর্ণভাবে আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নিতে পারেনি বা তৈরি করতে পারেনি।
বিশেষ করে অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনো কিছু দেখতে পাইনি। একই সঙ্গে যে ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা বা আগাম তথ্য থাকা উচিত, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা আগাম তথ্য পাচ্ছে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগাম তথ্য ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।
তবে আমরা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। নির্বাচন যেকোনো মূল্যে হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন, যার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব। কাজেই নির্বাচন হতে হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটুকু অবনতি হয়েছে, সেটিকে প্রারম্ভিক পর্যায় বলা যায়। তবে এটা একটা অশনিসংকেত। উচিত হবে এখনই এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরো পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণকে একেবারে নির্মূল করে দেওয়া।
আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি আছেন, বিশেষ করে যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, যাঁরা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের সঠিক ভূমিকাটা রাখবেন। কোনোভাবেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের জন্য এখন থেকেই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ