ভেনেজুয়েলায় সরকার উৎখাতে সম্ভাব্য মার্কিন চেষ্টা নিয়ে জল্পনাকল্পনার মধ্যে এ অঞ্চলে নিজের সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করছে ওয়াশিংটন। এরই অংশ হিসেবে লাতিন আমেরিকা অভিমুখে বিমানবাহী রণতরি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র গতকাল শুক্রবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ লাতিন আমেরিকায় বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ও এর সঙ্গে স্ট্রাইক গ্রুপ হিসেবে পাঁচটি ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র সিন পারনেল বলেন, ‘সাউদার্ন কমান্ড এলাকায় (দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল) মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি এবং পশ্চিম গোলার্ধে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত ব্যক্তি ও কার্যকলাপ শনাক্ত, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতাকে আরও বাড়াবে।’

তবে নতুন করে বিমানবাহী রণতরি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান লড়াইয়ের ঘোষিত লক্ষ্যের বাইরেও সামরিক শক্তি জোরদার করার বিষয়টি সামনে এনেছে। এমন এক সময়ে এ ঘোষণা এল, যখন দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে থাকা কারাকাসের বিরুদ্ধে ক্রমেই কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ওয়াশিংটন।

ওই অঞ্চলে এরই মধ্যে আটটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়েছেন ছয় হাজার নাবিক ও মেরিন সেনা। এখন এ বহরে যুক্ত হচ্ছে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ও পাঁচটি ডেস্ট্রয়ার। সঙ্গে যুক্ত হবেন অতিরিক্ত সাড়ে চার হাজার কর্মী।

রণতরিটি এখন ভূমধ্যসাগরে রয়েছে। কবে নাগাদ সেটি লাতিন আমেরিকায় পৌঁছাবে, তা স্পষ্ট জানানো হয়নি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবারই ভূমধ্যসাগর থেকে লাতিন আমেরিকা অভিমুখে রওনা দিয়েছে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি ৯০টি পর্যন্ত যুদ্ধবিমান বহন করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য তিনি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে অনুমোদন দিয়েছেন। তাঁর এ নির্দেশের ফলে শিগগিরই দেশটির ভূখণ্ডে হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধে জড়ানোর নীলনকশা করছে’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, তারা (ট্রাম্প প্রশাসন) একটি নতুন যুদ্ধের নীলনকশা করছে। তারা আর কখনো যুদ্ধে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন তারাই একটি যুদ্ধের নীলনকশা আঁকছে।

আরও পড়ুনক্যারিবিয়ান সাগরে ‘মাদকবাহী নৌযানে’ যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৬ ২ ঘণ্টা আগে

এদিকে ক্যারিবীয় সাগরে কথিত এক মাদকবাহী নৌযানে হামলার কথা জানিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এতে সন্দেহভাজন ছয় মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এ অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানোর কথা জানানো হয়।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে কথিত মাদকবাহী নৌযানের ওপর মোট ১০টি হামলা চালাল। এসব হামলায় প্রায় ৪০ জন নিহত হয়েছেন। পেন্টাগন এ নিয়ে খুব সামান্য তথ্য দিয়েছে। তবে জানিয়েছে, এসব হামলার কিছু ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি চালানো হয়েছে।

আরও পড়ুনপ্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদক পাচারের নৌযানে মার্কিন হামলায় দুজন নিহত২৩ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ল ত ন আম র ক ম দকব

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: মাদুরো

বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। 

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

এর আগে গতকাল ২৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভূমধ্যসাগর থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর নির্দেশ দেন। যা সর্বোচ্চ ৯০টি যুদ্ধবিমান বহন করতে সক্ষম। এই রণতরী যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেবে বলে জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে মাদুরো বলেন, “তারা একটি নতুন চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরি করছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর কোনো যুদ্ধে জড়াবে না, অথচ এখন নিজেরাই যুদ্ধ তৈরি করছে।” 

ওয়াশিংটনের দাবি—এই সামরিক তৎপরতা মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান। তবে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত দশটি বিমান হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে। শুক্রবারের সর্বশেষ হামলায় ছয় জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে হেগসেথ জানিয়েছেন। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ট্রেন দে আরাগুয়া নামের একটি অপরাধী সংগঠনের নৌযান, যাকে যুক্তরাষ্ট্র “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেক দেশও ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থি হতে পারে।

মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দল থেকেই প্রেসিডেন্টের এককভাবে হামলার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “যদি কেউ মাদকবাহী নৌকা ধ্বংস হতে না দেখতে চায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠানো বন্ধ করুক।”

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ ফেলো ড. ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক তৎপরতা আসলে ভেনিজুয়েলায় শাসন পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এটি মূলত ভয় দেখানোর কৌশল—যাতে ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী ও মাদুরোর ঘনিষ্ঠরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। 

ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওয়াশিংটন স্থল অভিযান চালানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, “আমরা এখন স্থলভাগের দিকেও নজর দিচ্ছি, কারণ সমুদ্র আমরা ইতিমধ্যেই ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।”



 

 ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: মাদুরো