যুক্তরাষ্ট্রে কোকেনের প্রবেশ বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণে রাজি হননি—এমন অভিযোগ তুলে ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর আগে গত মাসে পেত্রোর মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়।

অথচ লাতিন আমেরিকার দেশটির সঙ্গে ওয়াশিংটনের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কয়েকটি দেশের উত্তেজনা চরমে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের সামরিক টহল বাড়িয়েছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই মার্কিন সামরিক বাহিনী মাদক বহন করছে অভিযোগে আন্তর্জাতিক জলসীমায় কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।

এসব হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘হত্যাকাণ্ড’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট পেত্রো। এরপরই পেত্রোকে ‘অবৈধ মাদক নেতা’ বলে বর্ণনা করেন ট্রাম্প।

এসব হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘হত্যাকাণ্ড’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট পেত্রো। এরপরই পেত্রোকে ‘অবৈধ মাদক নেতা’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

আর ১০ মাস পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেত্রোর মেয়াদ শেষ হবে। তিনি সব সময় মার্কিন অভিযানের বিপক্ষে থেকেছেন।

পেত্রো কলম্বিয়ার বিদ্রোহী দল এবং অপরাধ চক্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ও আত্মসমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশটিতে প্রায় ছয় দশক ধরে চলা সংঘাত অবসানের চেষ্টা করেন। যদিও তাঁর সেই চেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সেগুলো বানের পানির মতো যুক্তরাষ্ট্রে আসছে এবং মার্কিনদের বিষ দিচ্ছে।’

প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, সেগুলো বানের পানির মতো যুক্তরাষ্ট্রে আসছে এবং আমেরিকানদের বিষ দিচ্ছে।স্কট বেসেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী

বেসেন্ট আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট পেত্রো মাদক চক্রগুলোকে ফুলেফেঁপে উঠতে দিয়েছেন এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে অস্বীকার করেছেন। তাই আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের দেশকে রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আমরা আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে মাদক পরিবহন সহ্য করব না।

পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার নজিরবিহীন হারে কোকেন জব্দ করেছে। যে ফসল থেকে কোকেন তৈরি হয়, সেটার চাষাবাদ বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০২১ সালে থেকে প্রতিবছর কলম্বিয়ায় এ ধরনের ফসল উৎপাদন ক্রমশ কমে আসছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে পেত্রো লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর যা বলেছে, তা মিথ্যা। আমার সরকার কোকেন উৎপাদন বৃদ্ধি করেনি, বরং উল্টোটা করেছে। আমার সরকার বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কোকেন জব্দ করেছে।’

পেত্রো আরও বলেন, তিনি নিজের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য একজন মার্কিন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বোগোটায় হাজারো সমর্থকের সামনে তিনি বলেন, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অর্থ নেই।

তেমন একটা দেখা না গেলেও কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ একেবারে নজিরবিহীন নয়। বর্তমানে রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে।

‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর যা বলছে তা মিথ্যা। আমার সরকার কোকেন উৎপাদন বাড়ায়নি, বরং উল্টোটা করেছে। আমার সরকার বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কোকেন জব্দ করেছে।গুস্তাভ পেত্রো, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট

শুধু পেত্রো নয়, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের ওপরও শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কলম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্মান্দো বেনেদেত্তির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

শুক্রবারের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে। সাধারণ মার্কিনরা তাঁদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন না।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে যত দ্রুত সম্ভব হত্যার এসব ময়দান বন্ধ করতে হবে। নইলে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর পক্ষে এগুলো বন্ধ করে দেবে এবং তা কোমলভাবে হবে না।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পেত্রোর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার বিরোধ হয়েছে। মাদক বহন করছে অভিযোগ তুলে নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সে বিরোধ চরমে উঠেছে।

গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্প কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করার হুমকি দেন। গত বুধবার তিনি বলেন, দেশটিতে সব ধরনের অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে।

শুক্রবার এক পৃথক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কলম্বিয়ার মাদকবিরোধী প্রচেষ্টাকে অনুমোদন দেবেন না।

তেমন একটা দেখা না গেলেও কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ একেবারে নজিরবিহীন নয়। বর্তমানে রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে।

গত মাসে নিউইয়র্কের রাস্তায় ফিলিস্তিনপন্থী একটি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি মার্কিন সেনাদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ না মানার অনুরোধ জানান। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ভিসা বাতিল করার ঘোষণা দেয়।

এর আগে এ বছরের শুরুর দিকে কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের বহনকারী মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে ট্রাম্পের সঙ্গে পেত্রোর বিরোধ দেখা দেয়।

আরও পড়ুনভিসা বাতিল করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে যুক্তরাষ্ট্র: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনমাদক পাচারকারীদের থেকে জব্দ সোনা গাজার সহায়তায় দেওয়ার ঘোষণা দিলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট১৬ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র য ক তর ষ ট র র ন ষ ধ জ ঞ কলম ব য় র প র স ড ন ট ন কলম ব য় র আম র সরক র শ ক রব র আর প কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

লটারির পুরস্কার যখন পিকাসোর চিত্রকর্ম

পাবলো পিকাসোর চিত্রকর্মের বিশ্বজোড়া কদর। দামও আকাশছোঁয়া। সে জন্যই হয়তো শিল্পপ্রেমীদের অনেকেই পিকাসোর চিত্রকর্ম নিজের সংগ্রহে রাখার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। তাঁদের জন্য বড় সুযোগ হতে পারে ফ্রান্সের একটি দাতব্য সংস্থার লটারি। ১০০ ইউরোর লটারির টিকিট কিনে মিলতে পারে পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম।

এই লটারির টিকিট পাওয়া যাবে ‘ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে। এর উদ্দেশ্য মহৎ। মোট ১ লাখ ২০ হাজার টিকিট বিক্রির অর্থ যাবে আলঝেইমার রোগ নিয়ে গবেষণায়। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টির প্যারিস কার্যালয়ে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

পিকাসোর ওই চিত্রকর্মে ‘ডোরা মার’ নামের এক নারীকে আঁকা হয়েছে। তিনি পিকাসোর একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৯৪১ সালে আঁকা চিত্রকর্মটির শিরোনাম ‘তেত দ্য ফাম’। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে ‘নারীর মাথা’। কাগজের ওপর গোয়াশ রঙে আঁকা চিত্রকর্মটির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৩ ইঞ্চি। চিত্রকর্মটির বর্তমান বাজারদর ১০ লাখ ইউরো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকমে এমন লটারির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমটি ২০১৩ সালে। সেবার লেবাননের তায়ার শহর রক্ষায় ৪৮ লাখ ইউরোর তহবিল জোগাড় করা হয়েছিল। আর পরেরবার ২০২০ সালে আফ্রিকায় পানির উৎস ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার জন্য তোলা হয়েছিল ৫১ লাখ ইউরো। ওই দুবারও কিন্তু পুরস্কার ছিল পিকাসোর দুটি চিত্রকর্ম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ