Prothomalo:
2025-12-10@15:40:52 GMT

ওটিপি–নির্ভর প্রতারণা বাড়ছে

Published: 25th, October 2025 GMT

দেশে ও বিদেশে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণা ও সাইবার হামলার ঝুঁকি। বিশেষ করে ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড চুরি, ফিশিং ও অত্যাধুনিক এআই-নির্ভর কৌশল এখন সাইবার অপরাধের নতুন হাতিয়ার। সাধারণত প্রতারকেরা ব্যাংক কর্মকর্তা, কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট বা কোনো অনলাইন বিক্রেতা সেজে ফোন করে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে যেমন অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়া, পুরস্কার জেতা বা সার্ভিস আপডেটের মতো বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আপনার ওটিপি জানতে চায়। এ ছাড়া গ্রাহককে একটি ক্ষতিকারক লিংকে ক্লিক করতে প্রলুব্ধ করে প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীর অজান্তে ডিভাইস থেকে ওটিপি বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হচ্ছে। এতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ই-ওয়ালেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি করে বা ডেটা চুরি হচ্ছে।

আজ শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাইবার নিরাপত্তা সিম্পোজিয়ামে দেশের শীর্ষ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এই ক্রমবর্ধমান হুমকি ও এর মোকাবিলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ এবং সমাধানের পথ নিয়ে আলাপ করেছেন। বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম (বিডিসাফ) আয়োজন করে এই সিম্পোজিয়ামের। দিনব্যাপী সিম্পোজিয়ামে বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ১২০ জন কর্মকর্তা ও পেশাজীবী অংশ নেন। রাজধানীর মহাখালীর সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্রেন স্টেশন-২৩ মিলনায়তনে সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা হয়।

সিম্পোজিয়ামে বিশেষজ্ঞরা জানান, সহজলভ্য ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে সাধারণ মানুষ এখন অনলাইন প্রতারকদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে। বিশেষত আর্থিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রবেশের জন্য অপরিহার্য ওটিপি চুরি একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতারকেরা বিভিন্ন ফিশিং লিংক, ভুয়া কল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ওটিপি হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সিম্পোজিয়ামের একাধিক কারিগরি অধিবেশনে ব্যাংকিং ও টেলিযোগাযোগ খাতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানান, নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেমে শক্তিশালী টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ করা যেতে পারে। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এই ধরনের প্রতারণা সম্পূর্ণভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়।

বিডিসাফ সিম্পোজিয়ামের মূল আকর্ষণ ছিল ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রতারণার দ্বন্দ্ব: তথ্য সুরক্ষার যুগে বাংলাদেশের সাইবার প্রতিরক্ষা পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা। আলোচকেরা জানান, এআই যেমন মানবজীবন ও কাজের ধারাকে উন্নত করছে, তেমনি এটি ডিপফেক, ভুয়া পরিচয় তৈরি এবং তথ্য ফাঁসের (ডেটা লিক) মতো নতুন ধরনের সাইবার অপরাধের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তিবিদ শায়েরুল হক জোয়ার্দার এবং এপনিকের নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য সুমন আহমেদ সাবিরের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী এআইয়ের ব্যবহার বাড়ায় ডিপফেক ভিডিও ও ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা এখন একটি আধুনিক সাইবার হুমকির রূপ নিয়েছে। এই এআই-নির্ভর প্রতারণা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন এবং তথ্য সুরক্ষা নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার সময় এসেছে। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন বিডিসাফের সাধারণ সম্পাদক মোহিব্বুল মোক্তাদীর।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে আর্থিক খাত এবং সরকারি সেবায় এআইয়ের ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি সাইবার সহনশীল প্রযুক্তিকাঠামো গড়ে তোলা এবং এর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। টেলিযোগাযোগ পেশাজীবীরা ক্লাউড অবকাঠামো এবং জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে আলাপ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, সরকার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ডিজিটাল রূপান্তর চালাচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে ডেটা নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নসহ ন্যাশনাল ডেটা গভর্ন্যান্স অথরিটি গঠন করা হচ্ছে। তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য শিগগরই সময়োপযোগী নীতিমালা আসছে।

প্রযুক্তিবিদ আবুল কালাম আজাদ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেম নিরাপদ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করছেন বিডিসাফের সভাপতি প্রেসিডেন্ট মো.

জোবায়ের আল মাহমুদ।

দিনব্যাপী কারিগরি অধিবেশন পরিচালনা করেন টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সফটওয়্যার নির্মাতাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞরা। কারিগরি অধিবেশনে অংশ নেন ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির তথ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, ইন্টারনেট সেবা প্রতিস্থান লিংক-থ্রির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান, গ্রামীণফোনের হেড অব সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার রাসকিন পাল, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিস্থান ব্রেন স্টেশন ২৩-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের এসপি খালেদা বেগম, বাংলা লিংকের আইটি নেটওয়ার্ক ও সিকিউরিটি অপারেশন প্রধান এস এম আল মায়মুন, তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এস এম রুবায়েত ইসলাম, রবির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক সামিনুল ইসলাম তরফদার, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টেক নোভেল্টি লিমিটেডের এ কে এম নুরুল আলাম ও ব্রেন স্টেশন ২৩-এর সলিউশন আর্কিটেক্ট আনোয়ার হোসাইন।

আয়োজনে সহযোগী ছিল ব্রেন স্টেশন ২৩ ও লিডিং এজ টেকনোলজি। প্রসঙ্গত, বিডিসাফ একটি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের ফোরাম। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পেশাজীবী সংগঠনটি প্রতি বছর একাধিক আয়োজনে প্রযুক্তি অবকাঠামো, সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সিম্পোজিয়াম আয়োজন করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য ক উন ট ব যবহ র র কর মকর ত আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

রপ্তানিমুখী এফডিআই বাড়াতে কাজ করতে হবে: নাহিয়ান রহমান

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যে বিপুল পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, তার বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে গেছে। ফলে দেশটির রপ্তানি খাত বড় হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নেও ভিয়েতনামের এই এফডিআই মডেলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে।

নাহিয়ান রহমান বলেন, ভিয়েতনামে যাওয়া প্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ইন্টেলসহ বড় এফডিআই প্রকল্পগুলো রপ্তানিনির্ভর। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয়ে অন্যান্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষতা স্থানান্তর ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে দেশটির শিল্প খাতে সক্ষমতা বেড়েছে।

আজ বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন নাহিয়ান রহমান। গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে প্রথম আলো, সহযোগিতায় ছিল প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী, রেনাটার এমডি সৈয়দ এস কায়সার কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মাহবুব উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সায়েমা হক বিদিশা, এলএফএমইএবির সহসভাপতি মো. নাসির খান, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ।

বিডার নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান বলেন, বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের দিকে তৈরি পোশাক খাতে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কিছু রপ্তানিমুখী বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। এর মাধ্যমে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ে, যা পরে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হয়। অন্যান্য খাতেও এভাবে রপ্তানিমুখী বিনিয়োগ অংশীদারত্ব তৈরি করা যেতে পারে।

নাহিয়ান রহমান বলেন, বর্তমান ‘ট্যারিফ ফোবিয়ার’ সময়ে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ অপরিহার্য। রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হলে তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্যান্য খাত থেকে অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় আসতে হবে। সে লক্ষ্য অর্জনে তৈরি পোশাকের বাইরের খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধি আড়াই গুণ বাড়াতে হবে।

বিডার এই নির্বাহী সদস্য আরও বলেন, একটি ছোট অর্থনীতিতে প্রাথমিকভাবে এক-দুটি খাতে বেশি নজর দেওয়া স্বাভাবিক। যেমন ষাট–সত্তরের দশকে কোরিয়ার তৈরি পোশাক ছিল প্রধান রপ্তানি খাত। পরে তারা অন্যান্য খাতে বিস্তার ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সঠিক খাত চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রাধান্য দেওয়াই মূল চ্যালেঞ্জ।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বিডা নিয়মিত কাজ করছে জানিয়ে নাহিয়ান রহমান বলেন, দেশের রপ্তানি খাতের সম্ভাবনাময় শীর্ষ খাতগুলো চিহ্নিত করতে ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েছে বিডা। বিনিয়োগ, দক্ষতা স্থানান্তর ও রপ্তানি সম্ভাবনার আলোকে আটটি খাত নিয়ে একটি হিটম্যাপও তৈরি করা হয়েছে। বিডায় আটটি খাতের জন্য আলাদা ডেস্ক আছে। ব্যবসায়ীরা এসব খাতের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয় তথ্য বিডা থেকে জানতে পারবেন। সরকারও এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতি নির্ধারণ করতে পারে।

নাহিয়ান রহমান আরও বলেন, ‘নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার’ (অশুল্ক বাধা) দূর করতে ব্যবসায়ীদের সরাসরি সহযোগিতা প্রয়োজন। বিডা নিয়মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে। ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যা, তথ্য ও উদাহরণ দিলে সরকার সহজেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ