আর্থিক ধসে অস্তিত্বের সংকটে বিশ্বের অন্যতম পুরোনো ফুটবল ক্লাব
Published: 25th, October 2025 GMT
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ক্লাব শেফিল্ড ওয়েডনেসডেতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্লাবের থাই মালিকের অধীনে ক্রমাগত আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে। ১৮৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি বর্তমানে মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খেলোয়াড় ও স্টাফদের বেতনও পরিশোধ করতে পারেনি তারা।
তবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কারণে শাস্তিস্বরূপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১২ পয়েন্ট কাটা পড়েছে ক্লাবটির। এর ফলে চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ক্লাবটির অবনমনও একরকম নিশ্চিত হয়ে গেছে। পয়েন্ট কাটার পর বর্তমান –৬ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগ চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার তলানিতে অবস্থান করছে শেফিল্ড।
গত জুনে ক্লাবের মালিক ডেজফন চ্যানসিরির বিরুদ্ধে দেনা পরিশোধ করতে না পারার অভিযোগ আনে ইংলিশ ফুটবল লিগ (ইএফএল)। শেফিল্ড নতুন খেলোয়াড়ও সংগ্রহ করতে পারছে না। এরই মধ্যে সমর্থকেরা ক্লাবটি বিক্রি করার জন্য চ্যানসিরির প্রতি চাপ দিয়ে বিক্ষোভও করেছেন।
আরও পড়ুনএমবাপ্পে নাকি ইয়ামাল: এল ক্লাসিকোয় ফল নির্ধারণ করবেন কে৫ ঘণ্টা আগেশুক্রবার সকালে বেগবিজ ট্রেইনার প্রতিষ্ঠানের জুলিয়ান পিটস, ক্রিস উইগফিল্ড এবং পল স্ট্যানলি—এই তিনজনকে শেফিল্ড ওয়েডনেসডের যৌথ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কর কর্তৃপক্ষ ক্লাবটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করার আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল—এমন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রশাসক নিয়োগের ফলে ডেজফন চ্যানসিরির ১০ বছরব্যাপী মালিকানারও অবসান ঘটল।
এরই মধ্যে ক্লাবের কর্মীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে, পাশাপাশি প্রশাসকেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গেও একটি বৈঠক করেছেন। টালমাটাল পরিস্থিতিতে আজ রাত আটটায় নিজেদের মাঠ হিলসবরোতে অক্সফোর্ড ইউনাইটেডের মুখোমুখি হবে শেফিল্ড ওয়েডনেসডে।
যুগ্ম প্রশাসক ক্রিস উইগফিল্ড জানিয়েছেন, ক্লাবটি কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখে ছিল। পাশপাশি অর্থনৈতিক চাপ বাড়ার কারণে মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্লাব এবং স্টেডিয়াম উভয়কেই প্রশাসনের অধীনে রাখার, যাতে বিক্রয় প্রক্রিয়া সহজভাবে সম্পন্ন করা যায়।
আরও পড়ুনইয়ামালের দাবি, রিয়াল মাদ্রিদ চুরি করে আর অভিযোগ করে১২ ঘণ্টা আগেএক বিবৃতিতে ইএফএল (ইংলিশ ফুটবল লিগ) জানিয়েছে, প্রশাসনের অধীনে যাওয়া হলো ‘ক্লাব বিক্রির প্রক্রিয়াকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন মালিকানার অধীনে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একটি সুযোগ’।
বেশির ভাগ ফুটবল ক্লাবই মূলত লোকসানে চলে, তবে চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাবগুলোর আর্থিক চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী মালিকেরা প্রিমিয়ার লিগে ওঠার আশায় বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। ডেলয়েটের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে এই বিভাগের ২৪টি ক্লাবের সম্মিলিত পরিচালনা (অপারেটিং) সংক্রান্ত ক্ষতি ছিল ৪১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড। তাদের নেট ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি পাউন্ড।
আরও পড়ুনক্লাসিকোর আগে রাফিনিয়াকে নিয়ে দুঃসংবাদ পেল বার্সা৭ ঘণ্টা আগেএ সময় ১২টি ক্লাবের মালিকেরা মিলে মোট ৫৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেন নিজেদের ক্লাবে। আর শেফিল্ড ওয়েডনেসডে একাই অপারেটিং ক্ষতি দেখিয়েছে ৯৩ লাখ পাউন্ড। তবে ক্লাবের এই সংকট সত্ত্বেও গত মৌসুমে ওয়েডনেসডের গড়ে দর্শক উপস্থিতি ছিল ২৬ হাজারের বেশি, যা অনেক প্রিমিয়ার লিগ দলের থেকেও বেশি। এখন ক্লাবটির দ্রুত এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যপ্রদেশে ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট, হয়েছে লুট, দুজন কৃষকের মৃত্যু
ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকট তীব্র হয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। এতে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি ইউরিয়া সারের ট্রাক লুটের মতো ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বিতরণ কেন্দ্রে সারের জন্য সারিতে দাঁড়ানো আরেকজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যটিতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সার সংকট ঘিরে এটা দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা।
গত সোমবার মধ্যপ্রদেশের টিকামগড় জেলার বাদোরাঘাট সার বিতরণ কেন্দ্রে সারিতে দাঁড়ানো অবস্থায় ৫২ বছর বয়সের যমুনা কুশওয়াহা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারি বাজরুয়া গ্রামের এ কৃষক দুই বস্তা ইউরিয়া সার পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে পরপর তিন দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
স্বজনেরা জানান, ওইদিন যমুনা না খেয়েই সকালেবেলা গ্রাম থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের সার বিতরণ কেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুরের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। পরে দ্রুত জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যমুনা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বিতরণ কেন্দ্রে বাইরে অসুস্থ হয়ে পড়া কৃষখ যমুনাকে সরকারি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় তহশিলদার সত্যেন্দ্র গুর্জরই। স্থানীয় দেহাত থানা–পুলিশের স্টেশন হাউস অফিসার চন্দ্রজিৎ যাদব নিশ্চিত করেন, যমুনার মৃত্যু হৃদরোগে হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাজ্যের গুনা জেলার একটি সার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে পরপর দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর মারা যান ৪৫ বছরের ভূরি বাঈ।
টিকামগড়ের সহকারী কৃষি পরিচালক (ডিডিএ) অশোক শর্মা জানান, ১৯ হাজার টন ইউরিয়া সার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে অশোক শর্মা দাবি করেন, টোকেনে থাকা সময় ধরেই সার বিতরণ করা হচ্ছে। বাদোরাঘাট সার বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে কারও মারা যাওয়ার তথ্য তাঁর কাছে নেই।
যদিও কৃষকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, টোকেন ন্যায্যভাবে দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এরপরও অনেককেই সার না পেয়ে দিনশেষে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
মধ্যপ্রদেশের টিকামগড় এবং আশপাশের জেলাগুলোয় সার সংকট নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে গত সোমবার কয়েক শ কৃষক সেখানকার প্রধানতম একটি মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর ফলে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
এ ছাড়া গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা টিকামগড়ের জাতারা কৃষিপণ্য বাজারে সরাসরি বিতরণ ট্রাক থেকে ইউরিয়ার বস্তা লুট করেন। একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত বুধবারের ওই ঘটনায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি সারের বস্তা লুট হয়েছে। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে এলেও, এ ঘটনায় জেলার সার সরবরাহের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) স্থানীয় সাহারিয়া জাতিগোষ্ঠীর সদস্য ভূরি বাঈয়ের মৃত্যুর পর থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভূরির মৃত্যুর কয়েকদিন পর গুনা আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তিরস্কার করেন।
ভারতে চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সারেরর ব্যবহার ৪ কোটি টনে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বর্ষায় বাড়তি চাহিদা এবং গত এক দশক ধরে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য প্রায় অপরিবর্তিত থাকার কারণে সারটির ব্যবহার ক্রমেই বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে ব্যবহৃত সারটির বিক্রি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৮ লাখ টনে পৌঁছে, সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে।
এই বছর ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। জলাধারগুলো ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ফের পূর্ণ হওয়ায় কৃষকেরাও নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করেছেন। মধ্যপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, এবারের রবি মৌসুমে (অক্টোবর–মে) জলাধারে পানি বেশি থাকার কারণে ইউরিয়া সারের চাহিদাও বাড়তির দিকে রয়েছে।