আমার ঘুম হচ্ছে না। কথার কথা না। আক্ষরিক অর্থেই কয়েক দিন ধরে রাতে দুই তিন ঘণ্টার বেশি ঘুম হচ্ছে না। মন ছটফট করছে। তীব্র অস্থিরতায় আছি।
যে আমাকে এই মহা যন্ত্রণায় ফেলে দিয়েছে, সে বারো-তেরো বছরের একটি ছেলে। আমি তার নাম জানি না। জানার উপায়ও নেই। কারণ সে কথা বলতে পারে না।
সে কোত্থেকে এসেছে, তার বাড়ি কোথায়, বাবা-মা আছে কিনা, খেয়েছে কি খায়নি; খেতে চায় নাকি চায় না—এসব ইশারা ইঙ্গিতে যে সে বোঝাবে, তাও সম্ভব না।
কারণ ইশারায় বোঝাতে যে জ্ঞানবুদ্ধি দরকার, তাও তার নেই। সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। অটিস্টিক।
আরও পড়ুনঅটিজম কী, কিছু কারণ এবং আমাদের করণীয়০২ এপ্রিল ২০২৪যেহেতু তার নাম জানার কোনো উপায় নেই, যেহেতু দুনিয়ার কোনো পাপ তাকে স্পর্শ করেনি, সেহেতু মনে মনে তার নাম দিয়েছি ‘ফেরেশতা’।
শিশুটিকে প্রথম দেখি দিন দশেক আগে। কমলাপুর স্টেশনের ওপর দিয়ে যাওয়া যে লোহার ওভারব্রিজ কমলাপুর এলাকার সঙ্গে মুগদা বা সবুজবাগের সংযোগ ঘটিয়েছে, তার ওপর। তার গায়ে তখন সুঁতোটিও ছিল না। হালকা পাতলা গড়নের দেহ। গায়ে ধুলোর আস্তরণ তখন খুব বেশি ছিল না।
কমলাপুর স্টেশনের আশপাশে বহু পথশিশু পথে থাকে। পথেই ঘুমায়। সারা গায়ে কালিঝুলি থাকে। তারা সাধারণত একা থাকে না। জোট বেঁধে থাকে। বিড়ি টানে বেধড়ক; পলিথিনে ভরা আঠা জাতীয় নেশার ‘ড্যান্ডি’ খায়। তাঁদের খবর রাখার সময় কারও নেই।
আরও পড়ুনপ্রতিবন্ধী মানুষটার দিকে তাকান, তার প্রতিবন্ধিতার দিকে নয়০৩ ডিসেম্বর ২০২২কিন্তু এই শিশুটির সঙ্গে কেউ ছিল না। সে একা দাঁড়িয়ে ছিল। যেতে যেতে তার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। তার দৃষ্টি ছিল ফাঁকা। আমার সঙ্গে আই-কন্টাক্ট হলো না।
ওর চেহারার সঙ্গে আমার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বড় ছেলের চেহারায় যেন অদ্ভুত মিল থাকায় হাঁটতে হাঁটতে তাকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম।
দিন দুই বাদে রাত দশটার দিকে একই পথে যাচ্ছি। দেখি একটা ছোট্ট গোলাকার ভিড়। দেখি ধুলোয় শিশুটি পড়ে আছে। এক ভদ্রমহিলা তাকে জাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
মনে হলো, সে মারা গেছে। আমি তাঁর হাত ধরে নাড়ি পরীক্ষা করলাম। দেখলাম, সে বেঁচে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরল। সে চোখ মেলল।
শিশুটির খাওয়ার ধরন ও শরীরী ভাষা থেকে মনে হয়, সে তার মা বা অন্য কারও হাতে খেতে অভ্যস্ত।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লটারির পুরস্কার যখন পিকাসোর চিত্রকর্ম
পাবলো পিকাসোর চিত্রকর্মের বিশ্বজোড়া কদর। দামও আকাশছোঁয়া। সে জন্যই হয়তো শিল্পপ্রেমীদের অনেকেই পিকাসোর চিত্রকর্ম নিজের সংগ্রহে রাখার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। তাঁদের জন্য বড় সুযোগ হতে পারে ফ্রান্সের একটি দাতব্য সংস্থার লটারি। ১০০ ইউরোর লটারির টিকিট কিনে মিলতে পারে পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম।
এই লটারির টিকিট পাওয়া যাবে ‘ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে। এর উদ্দেশ্য মহৎ। মোট ১ লাখ ২০ হাজার টিকিট বিক্রির অর্থ যাবে আলঝেইমার রোগ নিয়ে গবেষণায়। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টির প্যারিস কার্যালয়ে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
পিকাসোর ওই চিত্রকর্মে ‘ডোরা মার’ নামের এক নারীকে আঁকা হয়েছে। তিনি পিকাসোর একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৯৪১ সালে আঁকা চিত্রকর্মটির শিরোনাম ‘তেত দ্য ফাম’। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে ‘নারীর মাথা’। কাগজের ওপর গোয়াশ রঙে আঁকা চিত্রকর্মটির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৩ ইঞ্চি। চিত্রকর্মটির বর্তমান বাজারদর ১০ লাখ ইউরো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকমে এমন লটারির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমটি ২০১৩ সালে। সেবার লেবাননের তায়ার শহর রক্ষায় ৪৮ লাখ ইউরোর তহবিল জোগাড় করা হয়েছিল। আর পরেরবার ২০২০ সালে আফ্রিকায় পানির উৎস ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার জন্য তোলা হয়েছিল ৫১ লাখ ইউরো। ওই দুবারও কিন্তু পুরস্কার ছিল পিকাসোর দুটি চিত্রকর্ম।