গত বুধবার রাশিয়ার বড় তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে কিছু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের ওপর যে বিধিনিষেধ ছিল, তা–ও তুলে নিয়েছেন তিনি। ফলে ইউক্রেন এখন চাইলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আরও স্বাধীনভাবে হামলা চালাতে পারবে।

গত সপ্তাহে ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথোপকথনের পর এ পদক্ষেপ নেন ট্রাম্প। দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে তিনি প্রকাশ্যে হতাশা জানান। ট্রাম্প অনেক আগেই এই যুদ্ধের ইতি টানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এটাই কি যথেষ্ট?

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা ওয়াশিংটনের বিপুল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর অনেক বড় চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নেয়, যাতে ক্রেমলিন বাধ্য হয় ইউক্রেনের শর্তে শান্তিচুক্তি মেনে নিতে। তাত্ত্বিকভাবে এই ‘মূল্য চোকোনোর’ কৌশল যুক্তিসংগত বলে মনে হলেও বাস্তবে তা রাশিয়ার অগ্রগতিকে কিছুটা মন্থর করতে পেরেছে, কিন্তু পুতিনকে আগ্রাসন বন্ধে বাধ্য করতে পারেনি।

আরও পড়ুনপুতিন না ট্রাম্প— কে কাকে আসলে ফাঁদে ফেলছেন১৩ আগস্ট ২০২৫

কয়েক দফার নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেনকে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ, এমনকি ইউক্রেনের নিজস্বভাবে তৈরি উন্নত ড্রোনসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারের পরও রাশিয়া এখনো আত্মসমর্পণ থেকে অনেক দূরে; বরং তিন বছর আগের তুলনায় রুশ বাহিনী ইউক্রেনের আরও বেশি এলাকা দখলে রেখেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই যুদ্ধ পঞ্চম বছরে পা দেবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্থায়িত্ব হয়েছিল পাঁচ বছরের একটু বেশি।

‘মূল্য চোকানোর’ এই কৌশলের পক্ষে যাঁরা ওকালতি করছেন, তাঁদের কাছে উত্তরটা পরিষ্কার—আরও চাপ। এর মানে হচ্ছে, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেনের জন্য আরও অস্ত্র (যেমন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি সরবরাহের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাজি হয়নি) এবং ইউরোপে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার মতো পদক্ষেপ তাঁরা চান। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ বাড়ালেই যে যুদ্ধের গতিপথ আমূল বদলে যাবে বা ক্রেমলিন ইউক্রেনের শর্তে আত্মসমর্পণ করবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

ইউক্রেনের কিছু সমর্থক হয়তো যুদ্ধ চলতে থাকাকেই ভালো মনে করেন। যেমন কেউ কেউ হয়তো মনে করেন, রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলার জন্য দেশটিকে ইউক্রেনে আটকে রাখাটাই ভালো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কোনো অগ্রগতি না দেখা বাকি আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ইউক্রেনে কী অর্জন করতে পারে? যুক্তরাষ্ট্র যে তার ক্ষমতার সীমাকে অগ্রাহ্য করে, ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানের ইতিহাস থেকে সেটি আমরা দেখি।

তেল ও গ্যাস খাতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞায় নিঃসন্দেহে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াবে। কিন্তু রাশিয়া বহু বছর ধরে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েই চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন রাশিয়ার ওপর ১৯তম দফার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যাচ্ছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা ক্রমেই কমে আসছে। চীনের সমর্থনে রাশিয়া তার ক্ষতি অনেকটাই সামলে নিচ্ছে।

অন্যদিকে খুব কমসংখ্যক সামরিক বিশেষজ্ঞ এটা বিশ্বাস করেন যে বাড়তি অস্ত্র, এমনকি শক্তিশালী টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রও যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে। ২০২৩ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অ্যাব্রামস ট্যাংক চেয়ে বলেছিল, এগুলো যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বহু প্রতীক্ষিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও ‘জাদুকরি সমাধান’ হয়ে উঠতে পারেনি। গত বছর রাশিয়ার ভেতরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতির সিদ্ধান্তও কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।

আরও পড়ুনপুতিন যে দুই জায়গায় ট্রাম্পকে পাত্তা দেন না২৯ মে ২০২৫

যুদ্ধ শেষ করার জন্য ‘মূল্য চোকানোর’ কৌশলের একটি যুক্তিগত ভুলও আছে। একদিকে এই কৌশলের প্রবক্তরা প্রায়ই বলেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনার কোনো মানে নেই, কারণ তিনি পুরো ইউক্রেনকে পদানত করার জন্য সংকল্পবদ্ধ। অন্যদিকে তারা আবার মনে করেন, সামান্য সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপই পুতিনকে যেকোনোভাবে ভীতিগ্রস্ত করে ফেলবে। কিন্তু পুতিন যদি সত্যিই পুরো ইউক্রেনকে পদানত করার প্রশ্নে আপসহীন হন, তাহলে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি, সামান্য চাপ বাড়ানোর ফলে পরিবর্তনটা আসবে?

নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্রেমলিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর যৌক্তিক কারণ আছে। রাশিয়া অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছে। বিশ্বের অন্য আগ্রাসী রাষ্ট্রের জন্য এটা বড় একটা বার্তা। পশ্চিমা সমর্থন না পেলে ইউক্রেনের পক্ষে কিয়েভে রাশিয়ান বাহিনীর প্রবেশ ঠেকানো ও জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করতে ভীষণ বেগ পেতে হতো। এ ধরনের চাপ অস্ত্রবিরতিতে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু এটা একাই যথেষ্ট চাপ নয়।

আরও পড়ুনপুতিন একটা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন?২৬ এপ্রিল ২০২৫

সুতরাং নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় যুদ্ধ শিগগিরই অবসান হবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়। এর সঙ্গে যদি পশ্চিমাদের কাছে খোলাখুলি দর–কষাকষির কোনো উপাদান থাকে, তাহলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব। এর মানে হতে পারে এমন একটি চুক্তি, যা পশ্চিমাদের চাইতেও রাশিয়ার জন্য কিছুটা অনুকূল বলে মনে হবে। উদাহরণ হিসেবে যদি যুদ্ধটা শেষ হয় এবং দনবাস অঞ্চল রাশিয়া দখল নেয়, সেটা ইউক্রেনের জন্য অন্যায় হবে এবং দেশটির সমর্থকদের জন্য হতাশাজনক হবে। কিন্তু আরও অনেক বিকল্পের চেয়ে এটি তুলনামূলকভাবে ভালো বিকল্প।

ইউক্রেনের কিছু সমর্থক হয়তো যুদ্ধ চলতে থাকাকেই ভালো মনে করেন। যেমন কেউ কেউ হয়তো মনে করেন, রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলার জন্য দেশটিকে ইউক্রেনে আটকে রাখাটাই ভালো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কোনো অগ্রগতি না দেখা বাকি আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ইউক্রেনে কী অর্জন করতে পারে? যুক্তরাষ্ট্র যে তার ক্ষমতার সীমাকে অগ্রাহ্য করে, ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানের ইতিহাস থেকে সেটি আমরা দেখি।

ইউক্রেনেও সেই একই মৌলিক প্রবণতাটি কাজ করছে। শুরু থেকেই এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, যেটা অর্জন করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, কিন্তু নিজের ক্ষমতার সীমা উপেক্ষা করলে বিদেশের মাটিতে সাফল্য কমে যায় এবং দেশের রাজনীতিতেও তার প্রভাব পড়ে।

ক্রিস্টোফার এস চিভভিস কার্নেগি আন্তর্জাতিক শান্তি তহবিলের আমেরিকান স্টেটক্র্যাফট প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো ও পরিচালক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ য় র ওপর ইউক র ন র র র জন র জন য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

সালমান হত্যা মামলা, খোঁজ মিলছে না সামিরা–ডনের

ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর আদালত অবশেষে হত্যা মামলা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, খল চরিত্রের অভিনয়শিল্পী ডন হকসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। সামিরা যে ফোন নম্বর ব্যবহার করতেন, তা এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ডনকে টানা কয়েক দিন ফোনকল ও খুদে বার্তা দেওয়ার পরও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ