১০ লাখ টাকার সেই চেক কর্মীকে ফেরত দিলেন বিএনপি নেতা
Published: 26th, October 2025 GMT
সমাবেশমঞ্চে নির্বাচনের খরচের জন্য কর্মীর দেওয়া ১০ লাখ টাকার সেই চেক ফেরত দিয়েছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরুল। আজ রোববার বিকেলে জেলার তাহিরপুর উপজেলার একতা বাজারে এক সভায় বিএনপির কর্মী নূর কাসেমের হাতে চেকটি তিনি তুলে দেন।
এ সময় নূর কাসেমকে উদ্দেশ করে কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি তোমার ভালোবাসাটা নিলাম। তোমার চেকটি তুমি নিয়ে নাও।’
আরও পড়ুনবিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া কর্মীর অ্যাকাউন্টে আছে ৩৪১২ টাকা৪ ঘণ্টা আগেগতকাল শনিবার জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজারে এক সমাবেশে চেকটি কামরুজ্জামানকে দেন নূর কাসেম। তবে আজ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নূর কাসেমের অ্যাকাউন্টে এত টাকা নেই, আছে মাত্র ৩ হাজার ৪১২ টাকা। তিনি ‘আবেগে’ চেকে ১০ লাখ টাকা লিখে সেটি কামরুজ্জামানের হাতে তুলে দেন। চেক ফেরত নেওয়ার সময়ও তিনি একই কথা বলেন।
কামরুজ্জামান সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি তাহিরপুর উপজেলায়।
নূর কাসেম নামের বিএনপির ওই কর্মীর বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরপারের মান্দিয়াতা গ্রামে। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি মূলত পেশায় কৃষক। তবে ইট কেনাবেচার ছোটখাটো ব্যবসা আছে তাঁর। লেখাপড়া জানা নেই। তবে স্বাক্ষর করতে পারেন। তিনি বিএনপিতে তেমন সক্রিয় না হলেও তাঁর বাবা প্রয়াত মো.
চেক দেওয়ার বিষয়ে নূর কাসেম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উনারে (কামরুল) ভালা পাই। উনি গরিবের লাগি ভালা। তাই মনের আবেগে দিছি। আমার অত টেকা নাই। এখন যদি মাইসে কয়, এই টেকা দিত অইব, শ্রীপুর বাজারে আমার একটা ভিটা আছে, ইটা বিক্রি কইরা দিমু।’
তাহিরপুর থেকে জামালগঞ্জে গিয়ে কেন চেক দিলেন, জানতে চাইলে নূর কাসেম বলেন, তিনি সমাবেশ দেখতে গিয়েছিলেন। মানুষ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তিনি একটি মালা ও চেক তুলে দেন কামরুজ্জামানের হাতে। এখন বিষয়টি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন জানিয়ে নূর কাসেম বলেন, ‘আমি খারাপ মানুষ না। কাম করি খাই। আমার কোনো ধান্দা নাই। মন থাকি উনারে (কামরুল) ভালা পাই। এর লাগি দিছি।’
কামরুজ্জামান জানান, সমাবেশে হাজার হাজার লোক ছিলেন। কেউ ফুল, কেউ কাগজ, কেউ টাকার মালা দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তেমনি নূর কাসেম হঠাৎ মঞ্চে এসে তাঁকে ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছেন। তবে এটিকে দলের প্রতি, তাঁর প্রতি কাসেমের ভালোবাসা হিসেবে দেখছেন তিনি। গতকাল বিকেলে বিএনপির ৩১ দফার প্রচার ও ধানের শীষের পক্ষে আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরুজ্জামান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে কামরুজ্জামান ছাড়াও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত নজির হোসেনের স্ত্রী সালমা নজির, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও তাহিপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা হামিদুল হক আফিন্দী, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদুল মোতালেব খান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক ১০ ল খ ট ক র প র উপজ ল স ন মগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
কিশোরগঞ্জ-১: বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে, একসঙ্গে বিক্ষোভ
কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে প্রথমে পৃথক স্থানে সমাবেশ করেন তাঁরা। পরে একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন ওই চার নেতা।
গত বৃহস্পতিবার এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে। প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণার সময় আসনটি ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবার প্রত্যাশা ভঙ্গ করে মাজহারুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতা চান। তবে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। অন্যদিকে তাঁর মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে আসছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের স্টেশন রোডে নিজ কার্যালয়ে সমাবেশ করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম খান (চুন্নু)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম। একই সময়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি সোহেল)। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রুহুল হোসাইন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে ‘অযোগ্য’ আখ্যায়িত করেন বক্তারা। একই সঙ্গে তাঁর মনোনয়নের জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমকে দায়ী করেন। তাঁকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলেও উল্লেখ করা হয়। অবিলম্বে মনোনয়ন বাতিল করে ‘যোগ্য ও ত্যাগী’ নেতাকে মনোনীত করার দাবি তোলেন তাঁরা। সমাবেশে রেজাউল করিম খান বলেন, ‘এটা আমার শেষ নির্বাচন। কাজেই এই নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেব।’
এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মাজহারুল ইসলাম।সমাবেশ শেষে রেজাউল করিম খান, রুহুল হোসাইন, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ সাইফুল্লাহ—এই চার নেতা এক রিকশায় চড়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম ও মনোনীত প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। পরে স্টেশন রোড এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বড় দলে অনেক প্রার্থী থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। আমার প্রতি দলের আস্থা আছে বলেই মনোনয়ন দিয়েছে। রাজনীতির শিষ্টাচার ও শালীনতা বজায় রাখা উচিত।’
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, দল যোগ্য লোককেই মনোনয়ন দিয়েছে। সবাইকে শান্ত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর জন্য কাজ করা উচিত। এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, দেশনেত্রী এখন অসুস্থ। আন্দোলন-সংগ্রাম রেখে তাঁর জন্য দোয়া করা উচিত।’