পাটপণ্য নিয়ে ভারতের তদন্ত অযৌক্তিক, পরামর্শ সভা চেয়ে আবার সময় চাইবে বাংলাদেশ
Published: 26th, October 2025 GMT
বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানির ওপর প্রতিকারমূলক শুল্ক (কাউন্টারভেলিং ডিউটি বা সিভিডি) বসানোর ব্যাপারে ভারত যে তদন্ত শুরু করেছে, তা অযৌক্তিক। নিয়ম অনুযায়ী রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে পরামর্শ সভা না করে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। কিন্তু ভারত এবার তা করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মকানুন অনুসরণ করেনি। ভারতের পদক্ষেপ ডব্লিউটিওর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসংক্রান্ত চুক্তির আর্টিকেল ১৩ ধারার লঙ্ঘন।
বিষয়টি নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) ও বাংলাদেশ পাটকল সমিতি (বিজেএমএ)। বিটিটিসি আজ রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ নিয়ে চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেন ভারতের বাণিজ্য প্রতিকার মহাপরিচালকের দপ্তরের (ডিজিটিআর) সঙ্গে পরামর্শ সভা করার অনুরোধ জানিয়ে আবার চিঠি পাঠায়। সভাটি হতে পারে আগামী নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে।
যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিটিটিসির চিঠি পেয়েছি। তবে আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট সময় চাইব না। আমরা অনুরোধ করব, ভারত যেন এ বিষয়ে পরামর্শ সভা করার জন্য আমাদের সময় দেয়।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পাটপণ্যের ওপর সিভিডি বসাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর তদন্ত শুরুর নোটিশ জারি করে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ। তার আগে ২১ আগস্ট ই–মেইল পাঠিয়ে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ভারতকে এক ই–মেইল বার্তায় বাংলাদেশ জানিয়েছিল পরামর্শ সভার প্রস্তুতির জন্য ৬০ দিন সময় দরকার। ভারত তার জবাব দেয়নি।
ভারতের পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) এবং এ পি মেস্তা টোয়াইন মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (এজেএমএ) যৌথ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটিআর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ডব্লিউটিওর কোনো ধারা ভারত লঙ্ঘন করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘অবশ্যই করেছে বলে মনে করছি এবং কোনো কারণে পরামর্শ সভা করার বিষয়ে ভারত সাড়া না দিলে বিষয়টি নিয়ে আমরা ডব্লিউটিও পর্যন্ত যেতে পারি।’
সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পরামর্শ সভার সময় চেয়ে দিল্লিতে থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাবে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার মারফত সময় চাওয়ার চিঠি যাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
ডব্লিউটিওর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসংক্রান্ত চুক্তির আর্টিকেল ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য কোনো তদন্ত শুরু করার আগে পরামর্শের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে। তদন্ত শুরুর আগে পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়ে পরামর্শ সভা চালিয়ে যেতে হবে।
ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াবিষয়ক ১২টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইজেড) পাটপণ্যের ওপর নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়। যে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেডের কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে বিটিটিসি আজ বাংলাদেশ পাটকল সমিতি (বিজেএমএ) এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে দুই সমিতির পক্ষ থেকে বিটিটিসিকে জানানো হয়, ভারতের এ তথ্য পুরোপুরিই অসত্য। দেশের কোনো ইপিজেড ও ইজেডে পাট পণ্য উৎপাদনের কোনো কারখানাই নেই। ফলে ভর্তুকি পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বৈঠক শেষে বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, যে ১২টি ভর্তুকি কর্মসূচির কথা বলেছে ভারত, তা পাটপণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই না। আর যে পাটপণ্যের ওপর ইতিমধ্যে দেশটি অ্যান্টিডাম্পিং আরোপ করে রেখেছে আট বছর ধরে এবং আরও দুই বছর পর তার মেয়াদ শেষ হবে, সেই একই পাটপণ্যের ওপর আবার ভর্তুকি দেওয়ার অভিযোগ অযৌক্তিক।
পাটপণ্যের ওপর সিভিডি আরোপের ব্যাপারে তদন্ত শুরু হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের একই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটি আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়। প্রতি টনে ৬ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক বসে।
বিজেএমএর চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ভারত গায়ের জোরে এগুলো করছে, যা অযৌক্তিক। ২০২০ সালেও তারা বাংলাদেশের পাটপণ্য নিয়ে একই অভিযোগ তুলেছিল। তখন পরামর্শ সভার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। আসলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথাযথ কোনো প্রতিবাদ করা হয় না বলে ভারত মাঝেমধ্যে এমন করে থাকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত শ র আর প কর ভর ত ক র জন য প রথম আমদ ন সময় চ জ এমএ
এছাড়াও পড়ুন:
৩ দফা দাবিতে ঢাবির প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করলেন ডাকসু নেতারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তহবিলের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ ও বরাদ্দকৃত অর্থ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন ডাকসু ও হল সংসদ নেতারা। একপর্যায়ে তাঁরা ভবনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কক্ষে গিয়ে স্লোগান দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের আশ্বাসে তাঁরা ফিরে যান।
আজ রোববার বেলা দুইটার দিকে ডাকসু নেতারা রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন হল সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো, ২০১৯ সালের পর থেকে ডাকসু ও হল সংসদ ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ ডাকসুর কাছে হস্তান্তর এবং অতীতের সব তহবিলের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করে স্বচ্ছ বাজেট প্রণয়ন, ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, টোকাই ও মাদক চক্র নির্মূলের মাধ্যমে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী মিছিলে অংশ নেওয়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিনসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক–কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারের আওতায় আনা।
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাস পার হয়ে গেলেও এখনো বাজেট হস্তান্তর করা হয়নি। এর ফলে আমাদেরকেই শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। গতকাল শনিবার আমরা ক্যাম্পাস থেকে হকারদের সরালে বাম সংগঠনগুলো বহিরাগত এনে মিছিল করেছে। অথচ প্রশাসন তখনো নির্লিপ্ত থেকেছে।’
মুসাদ্দেক আলী আরও বলেন, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট কোষাধ্যক্ষ অফিসের কর্মকর্তা রুহুল আমিন খুনি হাসিনার পক্ষে মিছিল করেছিলেন। এখনো তিনি স্বাভাবিকভাবে অফিস করছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য চরম লজ্জার।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ক্যাম্পাসকে টোকাই ও মাদক চক্রমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’