সন্তানের হঠাৎ জ্বরে আঁতকে ওঠেন মো. ইয়াসিন আরাফাত। তড়িঘড়ি করে বাসার কাছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। চিকিৎসকদের জানান, ছেলে দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাঁকে আশ্বস্ত করেন, তাঁর সন্তান ঠিক আছে। সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে। বাসায় পরিচর্যা হলেও সুস্থ হয়ে যাবে।

সম্প্রতি নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে কথা হয় ইয়াসিনের সঙ্গে। বাবার কাঁধে মাথা দিয়ে আছে তিন বছরের শিশু রায়হান। ইয়াসিন জানান, পরিবার নিয়ে আগ্রাবাদ রঙ্গিপাড়া এলাকায় থাকেন তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী। সন্তানের হঠাৎ জ্বরে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার আতঙ্কে ভুগছিলেন। এখন নিশ্চিন্ত হয়েছেন।

ইয়াসিনের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বহির্বিভাগে আরও ৩০ থেকে ৪০ জন অপেক্ষা করছিলেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, ব্যথা—এসব সমস্যায় তাঁদের সবার শিশু আক্রান্ত। নগরের আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, হালিশহর ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কাছের হাসপাতাল এটি, যেখানে দ্রুত ও সহজে সেবা পান বলে জানিয়েছেন রোগীরা।

মূলত প্রায় ১০ হাজার আজীবন সদস্য, ৪০০ দাতা সদস্য ও সরকারি-বেসরকারি অনুদানে চলে বৃহৎ এই হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য আজীবন সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।

হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে মিলে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোগী হাসপাতাল থেকে সেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিচ্ছেন ১ হাজার ২০০ জনের বেশি। গত বছর মোট ৪ লাখ ৭১ হাজার রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে রোগী ছিল ৭ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে একজন রোগী মাত্র ১০০ টাকা খরচ করে চিকিৎসক দেখাতে পারেন। সেখানে চিকিৎসকেরা সরাসরি তাঁদের সেবা দেন। প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়, তবে এর জন্য বাড়তি টাকা লাগে না। তবে সরাসরি অধ্যাপককে দেখাতে চাইলে ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপককে ৪০০ টাকা ও সহকারী অধ্যাপককে দেখাতে চাইলে ৩৫০ টাকা ফি দিতে হয় একজন রোগীকে।

হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক ডা.

মো. নুরুল হক বলেন, কোনো রোগী যদি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক কিংবা সহকারী অধ্যাপককে ফি দিয়ে দেখান, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আবার তিনি দেখাতে পারবেন। এর জন্য বাড়তি কোনো টাকা লাগবে না।

মূলত প্রায় ১০ হাজার আজীবন সদস্য, ৪০০ দাতা সদস্য ও সরকারি-বেসরকারি অনুদানে চলে বৃহৎ এই হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য আজীবন সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ভবিষ্যতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন আরেকটি রেডিওথেরাপি মেশিন কেনার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া এমআরআই ও মেমোগ্রাফি মেশিনও কেনার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চারতলা ভবনে যাত্রা শুরু হয়। সে শুরুর তিন বছরে রোগীর সংখ্যা ছিল সব মিলিয়ে ৩৫ হাজারের মতো। সে সময় প্রায়ই আগ্রাবাদ এলাকায় জোয়ারের পানির কারণে হাসপাতালের নিচতলায় গোড়ালিসমান পানি উঠত। এরপর চার দশক পেরিয়েছে। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালে ১৩ তলার নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণ শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নামে উদ্বোধন করা হয় সেই ভবন। বর্তমানে হাসপাতালের সব বিভাগ এ ভবনেই। পাশাপাশি ১৫০ শয্যার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই ইনস্টিটিউট ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এখন পর্যন্ত ৮০০-এর মতো রোগী এখান থেকে রেডিওথেরাপি সেবা নিয়েছেন। প্রতিদিন এ সেবা নিচ্ছেন ৬০-৬৫ জন।

৪০০ চিকিৎসকসহ প্রায় ২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন এখানে। হাসপাতালটিতে সাধারণ সব রোগের চিকিৎসাসহ ৩৪ শয্যার সিসিইউ, ৩০ শয্যার অত্যাধুনিক আইসিইউ, কার্ডিয়াক ইউনিট, নিওনেটলজি, শিশু আইসিইউ, নিউরোসার্জারি, মা-শিশুর জন্য বিশেষ ইউনিট, কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও শিশুবিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। ক্যাথল্যাবে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষাতেও নানা উদ্যোগ তারা নিয়েছে। ২০০৫-০৬ সালে ৫০ আসনের চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে প্রতি ব্যাচে ১১৫ জন শিক্ষার্থী এমবিবিএস সম্পন্ন করছেন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নার্সিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ৫০ জন এবং ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নার্সিং কলেজের বিএসসি অনার্স (নার্সিং) কোর্সে ৫০ জন ভর্তি করা হয় বছরে।

হাসপাতালের নির্বাহী কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, যাতে রোগীদের সব ধরনের সুবিধা দিতে পারি। মা ও শিশু হাসপাতালের অধীন জেনারেল হাসপাতাল, ক্যানসার ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ বেশ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে আরও কিছু যন্ত্রপাতি কেনার। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ র ব দ চ ক ৎসক এল ক য় র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে কাজ করার কোনো ওয়ে নাই

আগের পর্বআরও পড়ুনআজকে তো চিনতেই পারলেন না২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ