Prothomalo:
2025-10-27@12:29:32 GMT

একই জমিতে একসঙ্গে ৬ ফসল

Published: 27th, October 2025 GMT

বাঁশের মাচার ওপর লকলক করছে মেটে আলুর কচি ডগা। মেটে আলুর ডগার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শীতকালীন শিম, পুঁইশাক ও মিষ্টিকুমড়ার ডগা। মাচার ফাঁকে ফাঁকে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে হলুদ ও মরিচগাছ। গোটা মাঠ যেন উদ্বেলিত সবুজের মিছিলে। কয়েক মাস আগেও এই মাচায় ঝুলছিল তরমুজ। মাটিতে ছিল গোল আলু।

কৃষিতে ফসলের এমন বৈচিত্র্যের দেখা মেলে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ধোপার মাঠে। শুধু ধোপার মাঠ নয়, আশপাশের মাঠগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে এমন ফসল-বৈচিত্র্য। একই জমিতে চাষ হচ্ছে গোল আলু, তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি, শিম, পুঁইশাক, করোলা ও শসা। সাথি ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে হলুদ ও মরিচ।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ধোপার মাঠ ও বন্দবিলা ইউনিয়নের গাইদঘাট মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাচার ওপর আছে মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, শিম, পুঁইশাকের লকলকে ডগা। দুই মাচার মাঝে যে ফাঁকা জায়গা তার পাশে শয্যার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে হলুদ ও মরিচ।

কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে জমিতে ছয় হাত চওড়া করে মাটির শয্যা (বেড) করা হয়। শয্যার ওপরে বিছিয়ে দেওয়া হয় মালচিং পেপার (একধরনের পলিথিন)। যাতায়াত ও পানিনিষ্কাশনের জন্য এক শয্যার সঙ্গে অপর শয্যার দূরত্ব রাখা হয় আড়াই হাত। এরপর বাঁশের চটায় পেরেক লাগিয়ে তৈরি করা সাত হাত চওড়া মাচা। বাঁশের খুঁটি পুঁতে এই মাচা শয্যার ওপরে স্থাপন করা হয়। মাচায় চটার ফাঁকে ফাঁকে লম্বালম্বি করে বাঁধা হয় নাইলনের সুতা। মাচার ওপরে বিছিয়ে দেওয়া হয় নাইলনের জাল। এক বিঘা জমিতে প্রথমবার মাচা করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। পরের বছর ব্যয় কমে অর্ধেক হয়। একবার মাচা করলে পাঁচ থেকে ছয় বছর চলে।

এক জমিতে বছরে চারটি মূল ফসল ও দুটি সাথি ফসল হচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেওয়া হয়। সাইয়েদা নাসরিন জাহান, কৃষি কর্মকর্তা, বাঘারপাড়া

তাঁরা আরও বলেন, দুইভাবে জমিতে ফসলের আবাদ করা হয়। প্রথমত, গোল আলু, তরমুজ, মেটে আলু ও মিষ্টিকুমড়া বা শসা বা বরবটি বা করলার চাষ করা হয়। সাথি ফসল করা হয় হলুদ। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত খেতে গোল আলু রোপণ করতে হয়। ফাল্গুন মাসে গোল আলু উঠে গেলে চৈত্র মাসের প্রথমে জমি প্রস্তুত করা হয়। জমিতে শয্যা তৈরি করে তার ওপর মালচিং পেপার দিয়ে তরমুজের বীজ রোপণ করতে হয়। এ সময় শয্যার ওপরে মাচা স্থাপন করতে হয়। তরমুজের বীজ রোপণের এক মাসের মাথায় বৈশাখ মাসের শুরুতে তরমুজগাছে ফুল আসে। এ সময় খেতে মেটে আলুর বীজ রোপণ করতে হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি তরমুজ উঠে যায়। তরমুজ উঠে যাওয়ার পরপরই মিষ্টিকুমড়া বা শসা বা বরবটির (লাল) বা করলার বীজ রোপণ করতে হয়। এ সময় সাথি ফসল হলুদ লাগাতে হয়। শ্রাবণ মাসে মিষ্টিকুমড়া বা শসা বা বরবটি বা করলা উঠে যায়। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে পৌষের মাঝামাঝি সময়ে মেটে আলু উঠে যায়। আলু উঠে যাওয়ার পর খেত থেকে মাচা সরিয়ে নেওয়া হয়। দেড় থেকে দুই মাস জমি বিশ্রাম দিতে হয়।

কৃষকেরা জানান, দ্বিতীয়ত, তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া বা শসা বা বরবটি (লাল) বা করলা ও শিম চাষ করা হয়। সাথি ফসল চাষ হচ্ছে হলুদ ও মরিচ। চৈত্র মাসের প্রথমে জমি প্রস্তুত করতে হয়। জমিতে শয্যা তৈরি করে তার ওপর মালচিং পেপার দিয়ে তরমুজের বীজ রোপণ করতে হয়। এ সময় শয্যার ওপরে মাচা স্থাপন করতে হয়। তরমুজের বীজ রোপণের এক মাসের মাথায় বৈশাখ মাসের শুরুতে তরমুজগাছে ফুল আসে। এ সময় খেতে মেটে আলুর বীজ রোপণ করতে হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি তরমুজ উঠে যায়। তরমুজ উঠে যাওয়ার পরপরই মিষ্টিকুমড়া বা শসা বা বরবটির বা করলার বীজ বা পুঁইশাকের চারা রোপণ করতে হয়। সাথি ফসল হলুদ ও মরিচ লাগাতে হয়। আষাঢ় মাস শেষে লাগাতে হয় শিমের বীজ। শ্রাবণ মাসে মিষ্টিকুমড়া বা শসা বা বরবটি উঠে যায়। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে পৌষের মাঝামাঝি সময়ে মেটে আলু উঠে যায়। শিম ওঠে পৌষ ও মাঘ মাসে। শিম উঠে গেলে খেত থেকে মাচা সরিয়ে নেওয়া হয়। জমি এক থেকে দেড় মাস বিশ্রাম দেওয়া হয়।

বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, নারিকেলবাড়িয়া ও বন্দবিলা ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে বছরে চারটি ফসল ও দুটি সাথি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।

খানপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ৫৮ শতক জমি বন্ধকি ও ইজারা নিয়ে তিন বছর ধরে ফসল চাষাবাদ করছেন। এর মধ্যে ২৩ শতক জমিতে তিনি চারটি ফসল এবং দুটি সাথি ফসল করেছেন। খেত থেকে তাঁর তরমুজ উঠে গেছে। এখন খেতে আছে মেটে আলু, শিম ও পুঁইশাক। সাথি ফসল আছে হলুদ ও মরিচ। অবশিষ্ট ২৩ শতক জমিতে ঢ্যাঁড়স ও ১২ শতক জমিতে তাঁর লাউ রয়েছে।

নজরুল ইসলাম বলেন, সব খরচ বাদে বছরে লাখ টাকার বেশি লাভ থাকে।

খানপুর গ্রামের কৃষক অনুপ কুমার দাস ৬৪ শতক জমিতে তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি, শসা ও শিমের চাষ করেছেন। এর মধ্যে তরমুজ, বরবটি ও শসা উঠে গেছে। খেতে আছে মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া ও শিম। সাথি ফসল আছে হলুদ ও মরিচ।

অনুপ কুমার দাস বলেন, সব খরচ বাদে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকে।

গাইদঘাট গ্রামের কৃষক অসিত বিশ্বাস এবার ৪৬ শতকে বিঘার তিন বিঘা জমিতে গোল আলু চাষ করেছিলেন। গোল আলু উঠে যাওয়ার পর তিনি দেড় বিঘা জমিতে তরমুজ, মেটে আলু, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি ও লাউয়ের চাষ করেছিলেন। তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি ও লাউ উঠে গেছে। খেতে আছে মেটে আলু। সাথি ফসল আছে হলুদ ও মরিচ। অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে জমিতে ছয়টি ফসল করছি।’

গাইদঘাট গ্রামের কৃষক শ্রীকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘১৫ শতক জমিতে করলা ও বরবটি ছিল। ওগুলো উঠে গেছে। খেতে মেটে আলু ও লাউ আছে।’

বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান বলেন, ‘এক জমিতে বছরে চারটি মূল ফসল ও দুটি সাথি ফসল হচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেওয়া হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল আল চ ষ কর ফসল হ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

শিল্পকলায় নোবেল জয়ী নাট্যকারের ‘ডিজায়ার আন্ডার দ্য এলমস’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হবে সাহিত্যে নোবেল জয়ী মার্কিন নাট্যকার ইউজীন ও নীলের রচিত বিখ্যাত নাটক ‘ডিজায়ার আন্ডার দ্য এলমস’। নাটকটি প্রযোজনা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নাট্যকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) ও রবিবার (২৬ অক্টোবর) এই দুইদিন টিকিটের বিনিময়ে সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি প্রদর্শিত হবে।

আরো পড়ুন:

রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলের ইউনেস্কোর পুরস্কার অর্জন

ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

নাটকটি অনুবাদ করেছেন কবীর চৌধুরী। পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবাইয়া জাবীন প্রিয়তা।

নাটকের বিখ্যাত এফরায়েম ক্যাবট চরিত্রে অভিনয় করা শিক্ষার্থী তাকরিম আহমেদ বলেন, “চরিত্রটি আমার কাছে সাধারণ কোনো চরিত্র নয়, বরং একটি প্রজন্মের প্রতীক। মঞ্চে তার নিঃসঙ্গতা অনুভব করা সহজ ছিল না। জমি মানেই তার জীবন, কিন্তু সেই বিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত তার কবর। বাইরে দৃঢ়, ভেতরে অসহায়, এই দ্বৈততাই নাটকের ব্যথা। ক্যাবটের মতো মানুষ আজো আছে, যারা ভালোবাসতে চায়, কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারে না। আশা করি, নাটকটি সবার ভালো লাগবে।”

অ্যাবেন চরিত্রে অভিনয় করা মনন মোস্তাকিন বলেন, “অ্যাবেন এমন এক ছেলে, যে ছোটবেলা থেকে মায়ের স্নেহ পায়নি। আর বাবার ওপর প্রচণ্ড রাগ জমে আছে। সেই রাগ আর ভালোবাসা দুইটাই তার মধ্যে লড়াই করে। এই দোটানার জায়গাটা মঞ্চে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি।”

অ্যাবি চরিত্রে অভিনয় করা শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার সায়মা বলেন, “অ্যাবি আসলে ভালোবাসা পেতে চায়। কিন্তু সমাজ তাকে সেই সুযোগ দেয় না। তাই সে যেমন ভালোবাসে, তেমন ভয়ও পায়। তার ভেতরে দোষ আর মায়া একসঙ্গে কাজ করে। আমি অভিনয়ের সময় চেষ্টা করেছি, যেন দর্শক ওর কষ্টটা বুঝতে পারে। অত্যন্ত সুন্দর ও বিখ্যাত এ নাটকটি দেখতে চলে আসুন শিল্পকলা একাডেমিতে।”

নাটকটির নির্দেশক জবি নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবাইয়া জাবীন প্রিয়তা বলেন, “নোবেলজয়ী বিখ্যাত নাট্যকার ইউজিন ও নীল-এর এ নাটকটি শুধু এক পারিবারিক সংঘাতের গল্প নয়। এটি মানুষের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা, অপরাধবোধ ও মুক্তির তীব্র অনুসন্ধানের নাটক। এই নাটকে যে মানুষদের দেখি— তারা সবাই ভালোবাসা খোঁজে। কিন্তু তাদের ভালোবাসা মিশে থাকে অধিকার, ঈর্ষা ও দোষবোধের সঙ্গে। সেই মিশ্র অনুভূতিই এই নাটকের মূলে থাকা ইচ্ছা বা ডিজায়ারকে জটিল করে তোলে। এই নাটকের পটভূমি সম্পূর্ণ আমেরিকান।”

তিনি আরো বলেন, “এই প্রযোজনার মাধ্যমে আমি দর্শকদের সামনে একটি আবেদন রাখতে চেয়েছি- মানুষ কি কখনো তার ইচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে নাকি প্রতিটি ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত তাকে তার নিজের তৈরি কারাগারে বন্দি করে ফেলে? আমার অভিনেতারা, আলো-সংগীত-ডিজাইনের সহকর্মীরা সবাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একসঙ্গে ভ্রমণ শুরু করেছে। এই ভ্রমণই আমাদের আসল প্রাপ্তি। দর্শক যদি সেই ভ্রমণে সামান্য সময়ের জন্যও আমাদের সঙ্গে অংশ নেন, তবেই আমাদের প্রয়াস সার্থক হবে।”

এছাড়া নাটকে অভিনয় করেছেন নাট্যকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাকরিম, মোস্তাকিন, সায়মা, শোভন, খুশি, মিঠুন, জ্যা চাকমা, অর্থি, পলক, রিভা, ইসরাত, সুরুজ ও তুলি।

আবহ সংগীতে আছেন নওমী, শোভন, পলক ও সুরুজ, মঞ্চ নির্মাণে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী স্পর্শ ও টনি, আলোক প্রক্ষেপণে আছেন খন্দকার রাকিবুল হক ও রাজিন, নাটকের পোস্টার বানিয়েছেন সাদিয়া নিশা এবং প্রকাশনায় ছিলেন মুগ্ধ আনন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভেঙে যাচ্ছে তারকা দম্পতির ১৪ বছরের সংসার?
  • আদানপ্রদানের জন্য ভারত-বাংলাদেশের এক হওয়ার প্রয়োজন নেই: ফারিণ
  • ভাঙার চিন্তা করে কেউ সংসার বাঁধে না: ফারিয়া
  • কলকাতায় একসঙ্গে চঞ্চল-ফারিণ
  • খালিশপুরের মিঠাপানির শুশুক
  • ঘুম কেন এতো জরুরি?
  • শিল্পকলায় নোবেল জয়ী নাট্যকারের ‘ডিজায়ার আন্ডার দ্য এলমস’
  • রাঙ্গুনিয়ায় পুকুরে ডুবে একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যু