নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই চাঁদপুরের মেঘনা ও পদ্মায় মাছ ধরতে শুরু করেছেন জেলেরা। তাঁদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ, বাজারেও বেড়েছে সরবরাহ। কিন্তু এসব ইলিশের অধিকাংশই ডিমওয়ালা। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এতসংখ্যক ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ায় মাছের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মেঘনা ও পদ্মায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত শনিবার রাত ১২টায়। এ সময় থেকে নদীগুলোতে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে বাজারেও আসছে প্রচুর ইলিশ।

আরও পড়ুনঅনলাইনে ইলিশ বিক্রির নিবন্ধন পেলেন চাঁদপুরের ৭ ব্যবসায়ী১০ অক্টোবর ২০২৫

গতকাল রোববার ও আজ সোমবার মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর, নারায়ণপুর, মুন্সীর হাট এবং মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর, সুজাতপুর ও আমিরাবাদ মাছ বাজারে ইলিশের প্রাচুর্য দেখা যায়। এগুলোর অধিকাংশই ডিমওয়ালা। তাই দামও কিছুটা কমেছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে ছোট আকারের ইলিশ বা ‘টেম্পু ইলিশের’ চাহিদা বেশি। সচ্ছল ক্রেতারা কিনছেন বড় ইলিশ। অনেক দিন পর ইলিশের বাজারও কিছুটা চাঙা। বেচাকেনা ভালো হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতারা খুশি।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজারের মাছ বিক্রেতা বিমল চন্দ্র বলেন, গতকাল বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ এসেছে। আজ প্রায় ২০ মণ ইলিশ এসেছে। এগুলো মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের মাছই বেশি, অধিকাংশই ডিমওয়ালা। বড় আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় এবং ছোট আকারের প্রতি কেজি ইলিশ ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকালের তুলনায় আজ ইলিশের কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দাম আরও কমতে পারে।

আরও পড়ুনইলিশ রক্ষার অভিযানে জেলেদের হামলা, ফিরে গেল আভিযানিক দল০৮ অক্টোবর ২০২৫

কয়েকজন ক্রেতা ও স্থানীয় বাসিন্দা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অভিযান শেষে বাজারে যে হারে ডিমওয়ালা ইলিশ মিলছে, তাতে ইলিশ রক্ষার অভিযানের সুফল ও সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ আসার বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। তিনি বলেন, বাজার থেকে ডিমওয়ালা ইলিশ সংগ্রহের জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে লোক পাঠানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মেঘনায় কার্যকর অভিযান চালানোর পরও এত ডিমওয়ালা ইলিশ কেন ধরা পড়ছে—সেটি নিয়ে তাঁরা ভাবছেন। এতে ইলিশ উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড মওয় ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

উড়োজাহাজ নেই, রানওয়ে নেই—তবু জায়গার নাম ‘এয়ারপোর্ট’

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামে এমন এক জায়গা আছে, যেখানে নেই কোনো উড়োজাহাজ, নেই রানওয়ে, নেই উড়োজাহাজের শব্দ বা যাত্রীদের কোলাহল, তবু জায়গাটির নাম ‘এয়ারপোর্ট’। প্রায় ৫০ বছর ধরে স্থানীয় লোকজনের কাছে এই জায়গা এ নামেই পরিচিত। এখানে আছে কয়েকটি দোকান, একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা আর পাশে বিস্তীর্ণ বিল।

উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বহরী গ্রামের মাঝামাঝি তিন রাস্তার মোড়ে এই জায়গার অবস্থান। দক্ষিণে পিংড়াবাজার, পশ্চিমে মুন্সিরহাটবাজার আর উত্তরে বহরী আড়ংবাজার। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের নথিতে জায়গাটি ‘বহরী’ নামেই আছে, তবে স্থানীয় লোকজনের মুখে এখন এটি এয়ারপোর্ট। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সড়কের পাশে বহরী উচ্চবিদ্যালয়। সেখান থেকে সামান্য এগোলেই তিন রাস্তার সেই মোড়, যেখানে গড়ে উঠেছে এয়ারপোর্ট এলাকা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে দু-একটি অটোরিকশা। উত্তর পাশে একটি মহিলা মাদ্রাসা, সাইনবোর্ডে লেখা‘খাদিজাতুল কুবরা মহিলা মাদ্রাসা, এয়ারপোর্ট বাজার, বহরী।’ তার ঠিক উত্তরে মসজিদ। পশ্চিমে বিস্তীর্ণ বিল। পূর্ব পাশে একটি দোকান, সামনে কয়েকজনের জটলা। দোকানটি মোহাম্মদ ব্যাপারীর কনফেকশনারি ও চায়ের দোকান। সেখানে কথা হয় এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ও আসবাবপত্র মিস্ত্রি শফিকুল ইসলাম (৮০), আবদুল মান্নান (৭৫), মো. ইসমাইল (৬৫), প্রবাসী মো. আলী, স্বাস্থ্যকর্মী মো. মেজবাহ উদ্দিন (৪৫), আবদুর রহমানসহ (৫০) আরও কয়েকজনের সঙ্গে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ব্রিটিশ আমলের আগ থেকেই জায়গাটি বহরী নামে পরিচিত ছিল, তবে ১৯৭৫ সালের দিকে নামটি বদলে যায়। তখন খালেক বকাউল নামে বহরী গ্রামের এক রিকশাচালক প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে তিন রাস্তার মোড়ে এসে রিকশাটি রাখতেন। তখন সব রাস্তা ছিল কাঁচা। রিকশা রেখে তিনি হাসতে হাসতে বলতেন, ‘প্লেন (রিকশা) চালাইয়া এয়ারপোর্টে আইসা নামলাম। এয়ারপোর্টে নাইমা এখন বিশ্রাম করব।’ তাঁর এই কথায় মজা পেতেন আশপাশের লোকজন। একদিন রফিক ঢালী নামের এক ব্যক্তি রসিকতার ছলে মোড়ের পাশে একটি তালগাছে এয়ারপোর্ট নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। এর পর থেকেই জায়গাটি এয়ারপোর্ট নামেই পরিচিতি পায় এবং সেই নাম আজও টিকে আছে প্রায় ৫০ বছর ধরে।

উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদ উল্লাহ প্রধান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের এয়ারপোর্ট নামের জায়গাটি এখন খুবই পরিচিত। অনেকে দূর থেকে এসে নাম শুনে অবাক হন, জানতে চান কেন এমন নাম। তবে এটি জেলা শহর, হাজীগঞ্জ ও কুমিল্লার দাউদকান্দি-গৌরীপুরসহ আশপাশের এলাকায় যাতায়াতের সহজ ও সময়সাশ্রয়ী পথ। এ কারণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। চমকপ্রদ নামের কারণে এর পরিচিতি আরও বেড়েছে।’

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপজেলায় “এয়ারপোর্ট” নামে একটি এলাকা আছে, বিষয়টি আমি জেনেছি। খুব শিগগির সেখানে গিয়ে সবকিছু দেখব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উড়োজাহাজ নেই, রানওয়ে নেই—তবু জায়গার নাম ‘এয়ারপোর্ট’