নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারো ইলিশ মাছ বেচাকেনা শুরু হয়েছে চাঁদপুরের বাজারগুলোতে। বড়ষ্টেশন মাছ ঘাটসহ আশপাশের বাজারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ। ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, বাজারে পাওয়া অধিকাংশ ইলিশ বরফ যুক্ত। তারা জানান, দেখে যে কেউ সহজেই বুঝছেন, দীর্ঘদিন মাছ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা। ফলে বাজারে আনা এই মাছের গুণগত মান নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। 

মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, দূরের বিভিন্ন স্থান থেকে বরফ মিশ্রিত মাছ আসছে। মাছ আনার সময় যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, সে জন্য বরফে সংরক্ষণ করেন জেলেরা। যে মাছ বাজারে উঠছে, তা সবার সামনেই বিক্রি করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

সিএসই ও সিএফএফইএক্সের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর

‘অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ জরুরি’

আরো পড়ুন: ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের বাজার, দাম আকাশচুম্বী

বড়ষ্টেশন মাছ ঘটে ইলিশ কিনতে আসা রফিক বলেন, ‍“২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে জেলেরা আবার নদীতে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। গত ২৬ অক্টোবর থেকে বড়ষ্টেশন মাছ ঘাটে ছোট-বড় সব ধরনের ফিশিং বোটে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসতে শুরু করেন। অথচ, বাজারে দৃশ্যমান ইলিশগুলো দেখে সহজেই বুঝা যাচ্ছে, এগুলো দীর্ঘদিন ফ্রিজিং করা। তাহলে টাটকা ইলিশ পেলাম কই?”

অপর ক্রেতা বজলু মিয়া বলেন, “একেকটি ফিশিং বোটে বিভিন্ন সাইজের ৭০ থেকে ৮০ মণ ইলিশ নিয়ে বড়ষ্টেশন ঘাটে আসছেন জেলেরা। অধিকাংশ বোট ভোলা চর ফ্যাশন, মোহনপুরা এবং কিছু চেয়ারম্যান ঘাট থেকে আসছে। বাজারে যে মাছ দেখা যাচ্ছে, তার অধিকাংশ দেখলে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা।” 

ভোলার মোহনপুরার মাঝি জামাল ও সুমন জানান, দীর্ঘ ঘণ্টার নদী পথ পাড়ি দিয়ে তারা চাঁদপুর মাছ ঘাটে আসেন ন্যায্য দামে ইলিশ বিক্রির আশায়। বড়ষ্টেশন মাছ ঘাটে এখন প্রচুর ইলিশ মাছের আমদানির খবর রয়েছে। তাই এখানে মাছ নিয়ে এসেছেন তারা।

সরজমিনে দেখা যায়, ইলিশের দর কষাকষিতে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। মৎস্য ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে বড়ষ্টেশন মাছ ঘাট। স্থানীয়দের চাহিদা মেটানোর পর ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, সিলেটে সড়ক পথে পাঠানো হচ্ছে ইলিশ। 

এবার এই ঘাটে পাঙাস মাছের আমদানিও চোঁখে পড়ার মতো। বড় ওজনের পাঙাস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০ কেজি ওজনের কাতল মাছ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুরের হোয়াইট গোল্ড খ্যাত এক কেজি ওজনের পদ্মা নদীর ইলিশ ২০০০ হতে ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর একটু ছোট সাইজের ইলিশ মাছের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। 

ক্রেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে চাঁদপুর জেলা মৎস্য বনিক সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি বাদশা মাল জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সবে তো মাছ আসতে শুরু করেছে। দূরের যেমন- হাতিয়া, সন্দ্বীপ বা অন্যান্য অঞ্চলের মাছগুলোই বরফ মিশ্রিত একটু বেশি। যে মাছ আছে তা সবার সামনেই।

ইলিশের দাম নিয়ে তিনি জানান, এখন দাম একটু বেশি মনে হলেও, আমদানি বাড়লে ইলিশের দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। ঘাটে বড় ইলিশ তেমন আমদানি হচ্ছে না।

মাছ ব্যবসায়ী মেজবা মাল বলেন, “এটা আসলে প্রকৃতির খেয়াল। নদীতে বড় সাইজের ইলিশ থাকলে কম বেশি জেলেদের জালে ধরা পড়বেই। হয়তো সামনে সিজন শুরু হলে পুরো মাছ ঘাট বড় ইলিশের দখলে থাকবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ স ইজ র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাঙামাটিতে নিয়ম না মেনে রিসোর্ট, অবশেষে নোটিশ

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে নিয়ম না মেনে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোর (অবকাশকেন্দ্র) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অবশেষে তৎপর হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এসব রিসোর্ট নির্মিত হয়েছিল। এখন রিসোর্টগুলোকে নোটিশ দিয়েছে অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে সম্প্রতি অন্তত ১২টি রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে পাহাড় কেটে এসব রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া যেসব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর রিসোর্টগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনপাহাড়ে ‘খেয়ালখুশি’মতো রিসোর্ট১৯ জুলাই ২০২৫

কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো নিয়ে গত ১৯ জুলাই প্রথম আলোতে ‘পাহাড়ে “খেয়ালখুশি’’ মতো রিসোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একের পর এক রিসোর্টগুলো গড়ে উঠলেও রাঙামাটির জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এতে হ্রদ ও নদীর পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ থেকে ১০ বছরে অন্তত ২০টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পাশে রয়েছে অন্তত ১৫টি রিসোর্ট। আর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর পাশে রয়েছে ৫টি।

সম্প্রতি যেসব রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের বড়দাম বাজারের বড়গাং রিসোর্ট, একই এলাকার বেড়াইন্ন্যে রিসোর্ট ও ইজর রিসোর্ট, বার্গী লেক ভ্যালি, প্যাগোডা সড়কের গাং সাবরাং রিসোর্ট, জীবতলীর তিমুর সড়কের জুম কিং ইকো রিসোর্ট, মোরঘোনা এলাকার রেঙ লেক বিচ রিসোর্ট, কাটাছড়ির মৈত্রী নগরের রাঙাদ্বীপ রিসোর্ট, দীঘলিবাগ এলাকার ওয়াইল্ড উড আইসল্যান্ড রিসোর্ট, একই এলাকার মায়াবী আইসল্যান্ড রিসোর্ট, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব ও রিসোর্ট এবং বাগান বিলাস ইকো রিসোর্ট।

একটি রিসোর্টকে দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের কপি প্রথম আলোর কাছে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সদর উপজেলার কাপ্তাই হ্রদসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

সাধারণত পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে পরিবেশদূষণ (বায়ু, মাটি, পানি ও শব্দ) করা যাবে না। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক (যেমন প্লেট, গ্লাস, কাপ, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের পাশাপাশি এই হ্রদ এখন মৎস্য ও পর্যটনশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র তো নেয়ইনি, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। এ জন্য রিসোর্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ