বিকাশের মুনাফায় বড় চমক, ৯ মাসেই ৫০৫ কোটি টাকা
Published: 28th, October 2025 GMT
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ৫০৫ কোটি টাকার নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এই মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩১ শতাংশ বা দ্বিগুণের বেশি। ২০২৪ সালের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ২১৮ কোটি টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংক সম্প্রতি তাদের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। তাতে পৃথকভাবে বিকাশের আর্থিক বিবরণী যুক্ত করা হয়েছে। বিকাশ হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বিকাশের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক এই ব্যাংক।
বড় অঙ্কের মুনাফা অর্জনের সুবাদে বিকাশ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শীর্ষ ১০ মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আর এর ওপর ভর করে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক হয়ে উঠেছে দেশের শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংক।
এ নিয়ে বিকাশের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর এক লিখিত বক্তব্যে প্রথম আলোকে বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে আধুনিকতম প্রযুক্তি, সেবা অবকাঠামো, ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম এবং ডিজিটাল সাক্ষরতায় (লিটারেসি) ধারাবাহিকভাবে কৌশলগত বিনিয়োগ ইত্যাদি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিকাশের রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি (পেশেন্ট ক্যাপিটাল) এবং প্রবৃদ্ধিমুখী মানসিকতা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যা একই সঙ্গে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনে গ্রাহকের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করে আচরণগত পরিবর্তন এনেছে।
-২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর গত বছরই প্রথম বিকাশ ৩০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করে। -প্রতিষ্ঠানটির ৮ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক, সাড়ে ৩ লাখ এজেন্ট ও ১০ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট আছে।মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর আরও বলেন, বিকাশ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন মৌলিক আর্থিক সেবার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে ঋণ বিতরণ, আমানত গ্রহণ, পরিষেবা বিল পরিশোধ সেবা প্রদান, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আনয়ন এবং পে-রোলের মতো সেবাগুলোর সংযোজন হয়েছে, যা গ্রাহকের জন্য বিকাশের সেবার পরিধি যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি দেশে ডিজিটাল আর্থিক সেবার ইকোসিস্টেমকেও শক্তিশালী করে তুলেছে।
বিকাশের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ৯ মাসে বিকাশ মোট আয় করেছে ৫ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে ভ্যাট পরিশোধ করেছে ৬৩৬ কোটি টাকা, সেবা দিতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা, পরিচালন ও প্রশাসনিক ব্যয় হয়েছে ৯৫৩ কোটি টাকা, কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক কাজে খরচ হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। ফলে বিকাশের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫২২ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিকাশ গত ৯ মাসে তহবিল থেকে আয় করেছে ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে (ডব্লিউপিপিএফ) ৩৫ কোটি টাকা ও কর বাবদ ১৬৬ কোটি টাকা দিয়েছে। এতে ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা।
২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর গত বছরই প্রথম বিকাশ ৩০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছিল। তার আগে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, যা পরিমাণে ৯৯ কোটি টাকা। গত বছরের শেষে তা এক লাফে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। আর চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩০৮ কোটি টাকার মুনাফা করে।
বর্তমানে বিকাশের প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার এজেন্ট ও ১০ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, টাকা পাঠানো, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট ইত্যাদি সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক প্রভৃতি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গত বছর গ র হক আর থ ক প রথম বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে নিয়ম না মেনে রিসোর্ট, অবশেষে নোটিশ
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে নিয়ম না মেনে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোর (অবকাশকেন্দ্র) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অবশেষে তৎপর হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এসব রিসোর্ট নির্মিত হয়েছিল। এখন রিসোর্টগুলোকে নোটিশ দিয়েছে অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে সম্প্রতি অন্তত ১২টি রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে পাহাড় কেটে এসব রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া যেসব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর রিসোর্টগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনপাহাড়ে ‘খেয়ালখুশি’মতো রিসোর্ট১৯ জুলাই ২০২৫কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো নিয়ে গত ১৯ জুলাই প্রথম আলোতে ‘পাহাড়ে “খেয়ালখুশি’’ মতো রিসোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একের পর এক রিসোর্টগুলো গড়ে উঠলেও রাঙামাটির জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এতে হ্রদ ও নদীর পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।সরকারি সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ থেকে ১০ বছরে অন্তত ২০টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পাশে রয়েছে অন্তত ১৫টি রিসোর্ট। আর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর পাশে রয়েছে ৫টি।
সম্প্রতি যেসব রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের বড়দাম বাজারের বড়গাং রিসোর্ট, একই এলাকার বেড়াইন্ন্যে রিসোর্ট ও ইজর রিসোর্ট, বার্গী লেক ভ্যালি, প্যাগোডা সড়কের গাং সাবরাং রিসোর্ট, জীবতলীর তিমুর সড়কের জুম কিং ইকো রিসোর্ট, মোরঘোনা এলাকার রেঙ লেক বিচ রিসোর্ট, কাটাছড়ির মৈত্রী নগরের রাঙাদ্বীপ রিসোর্ট, দীঘলিবাগ এলাকার ওয়াইল্ড উড আইসল্যান্ড রিসোর্ট, একই এলাকার মায়াবী আইসল্যান্ড রিসোর্ট, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব ও রিসোর্ট এবং বাগান বিলাস ইকো রিসোর্ট।
একটি রিসোর্টকে দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের কপি প্রথম আলোর কাছে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সদর উপজেলার কাপ্তাই হ্রদসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
সাধারণত পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে পরিবেশদূষণ (বায়ু, মাটি, পানি ও শব্দ) করা যাবে না। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক (যেমন প্লেট, গ্লাস, কাপ, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের পাশাপাশি এই হ্রদ এখন মৎস্য ও পর্যটনশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র তো নেয়ইনি, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। এ জন্য রিসোর্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।