ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। তার রহস্যজনক মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। সালমান শাহর মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে তার অপমৃত্যুর মামলা, হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। 

গত ২০ অক্টোবর রাতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। তারপর থেকে বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ রূপ নিয়েছে। এরপর এ মামলার সঙ্গে শাবনূরের নাম জড়িয়ে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন এই অভিনেত্রী। 

আরো পড়ুন:

ডন আমাকে হুমকি দিয়েছে: সালমান শাহর মা

সালমান শাহ হত্যা মামলা, আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সোমবার (২৭ অক্টোবর) শাবনূর তার ফেসবুক পেজে ‘আবারো সালমান শাহ প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে এ অভিনেত্রী বলেন, “২৯ বছর আগে কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ২১ অক্টোবর রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থানকালীন আমি সংবাদমাধ্যমের খবরে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছি।” 

ভিত্তিহীন গুজবের প্রতিবাদ জানিয়ে শাবনূর বলেন, “অনেকেই এ বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চাইছেন। যেহেতু বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন, তাই শুরুতে এ নিয়ে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি, কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে সালমান শাহ সংক্রান্ত এই মামলার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ভ্রান্ত প্রচার ছড়াচ্ছেন। আমার সম্পর্কে ভিত্তিহীন এসব গুজব ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সবাইকে অনুরোধ করছি, সত্যতা বিবর্জিত ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন।” 

সালমান শাহর সঙ্গে অভিনয়ের কথা স্মরণ করে শাবনূর বলেন, “সালমান শাহ ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা। আমরা একসঙ্গে প্রায় ১৪টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সালমান ছিল একজন জনপ্রিয়, অসাধারণ শক্তিমান এবং প্রতিভাবান অভিনেতা। নিঃসন্দেহে বলতে পারি তার সঙ্গে কাজ করে আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার বিকশিত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।” 

সালমান শাহ কীভাবে মারা গেছেন তা জানেন না শাবনূর। তা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “সালমান শাহর অকাল মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। আমাদের জুটির সাফল্য একসময় অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার মৃত্যুর পর কেউ কেউ হয়তোবা নিজেদের বাঁচাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকতে পারে। আমাদের নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, যা আমাকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে আঘাত করেছে। তবে আজও আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই— সালমান শাহ কীভাবে মারা গেছে তা আমি সত্যিই জানি না। আমি শুধু তার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। যে-ই দোষী হোক না কেন, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়, এটাই আমার একান্ত দাবি ও প্রত্যাশা।” 

সালমানের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয় শাবনূর বলেন, “সন্তান হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের তা সালমানের মা নীলা আন্টির আহাজারি দেখলেই অনুভব করতে পারি। আমি আন্টি এবং তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং সর্বোপরি সালমান শাহর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।” 

গত ২০ অক্টোবর, মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। এ মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। 

অন্য ১০ আসামিরা হলেন—প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ফরহাদ। 

প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ সিনেমায় সালমান শাহ ও শাবনূর প্রথম জুটি বাঁধেন। শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহ মোট ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে একাই রাজত্ব করে গেছেন সালমান শাহ। এই চার বছরে উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ২৭টি সিনেমা।  

সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো—‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’ (১৯৯৪), ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র শ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

বাস্তবের ‘জীবন নিয়ে খেলা’

সাধারণত এ ধরনের ঘটনা দেখা যায় সিনেমাতে। যেমনটি দেখা গিয়েছিল রঞ্জিত মল্লিক অভিনীত ‘জীবন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এবার বাস্তবেই ধরা দিল সেই ঘটনা।

পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ‘গরীবের ডাক্তার’ খ্যাত আলমগীর হোসেনের বদলি বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় মানুষ।

সেই সঙ্গে নানা অনিয়ম, চিকিৎসা বাণিজ্য এবং রোগী হয়রানির অভিযোগে একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুলকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এক্ষেত্রে জীবন নিয়ে খেলা সিনেমার দুটি চরিত্রের কথা মনে পড়ে। রঞ্জিত মল্লিক অভিনয় করেছিলেন ডা. শুভঙ্কর সান্যালের চরিত্রে। আর ডা. নারায়ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মনোজ মিত্র।

যেখানে শুভঙ্কর স্যানালকে পাওয়া যায় রোগ-শোকে আক্রান্ত গরিব, দুঃখী মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে। তার উল্টো চরিত্র ডা. নারায়ণ, যাকে দেখা যায় চিকিৎসকের নামে গরিবের রক্ত চোষা হিসেবে।

পাবনার চাটমোহরেও স্থানীয় মানুষদের মানববন্ধনের মাধ্যমে সামনে এসেছে এমন দুটি চরিত্র। যেখানে আলমগীরকে হাসপাতালে রাখার জন্য রাস্তায় নেমেছে জনতা। সেখানে ডা. ওমর ফারুককে বিতাড়িত করতে দাবি তুলেছে তারা।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন নাগরিক সমাজ, চাটমোহরের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় দাপ্তরিক কাজে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা পাবনার সিভিল সার্জনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আসাদুজ্জামান লেবু, মোতালেব হোসেন, তানভীর জুয়েল লিখন, শাহীন হোসেন, ফুলচাঁদ হোসেন শামীম, হাসানুজ্জামান সবুজ, ফয়সাল কবীর, সাজেদুর রহমান সেজান, ইমরান হোসেন, হাসিনুর রহমান, জান্নাতুন নাঈম জুঁই প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে পাবনা সদর হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। ভর্তি রোগীরাও সঠিক সেবা পান না। এছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে দুর্নীতি, চিকিৎসা বাণিজ্য ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে।

তারা বলেন, ডা. আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। তিনি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখতেন না এবং কোনো কমিশনভিত্তিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যে কারণে গরীবের ডাক্তার হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তার এই মানবিক আচরণ ও সততা হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ও টেস্ট সিন্ডিকেটের স্বার্থে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণে তাকে মাত্র এক বছরের মাথায় বদলি করা হয়েছে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, আর এসবের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে থাকায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার মনমতো না চললে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। নানা অনিয়মে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। তার কারণে ভাল কোনো চিকিৎসক এখানে বেশি দিন থাকতে পারেন না।

বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে ডা. আলমগীর হোসেনের বদলি বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখা এবং ডা. ওমর ফারুক বুলবুলকে চাটমোহর থেকে অপসারণেল দাবি জানান।

সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে ডা. আলমগীর হোসেনকে চাটমোহর হাসপাতাল ফেরানো হবে। একইসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওমর ফারুক বুলবুলের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’’

অভিযোগের বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল বলেন, ‘‘সকালে হাসপাতালে ছিলাম না। আমার ডিউটি বিকেলে ছিল। তাই ওই সময়ে কি হয়েছে জানি না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। ডা. আলমগীরকে বদলির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’’

ঢাকা/শাহীন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মির্জা ফখরুলের সঙ্গে মঙ্গোলিয়ার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, আশা মির্জা ফখরুলের
  • এক ডাক্তারের বদলি বাতিল, আরেকজনের অপসারণ চাইলেন চাটমোহরবাসী
  • বাস্তবের ‘জীবন নিয়ে খেলা’