শেক্সপিয়র কি হ্যামলেট লিখেছিলেন গাঁজার নেশায়?
Published: 28th, October 2025 GMT
লন্ডনের কোনো আর্দ্র দুপুরে, থেমস নদীর ধারে বসে এক পুরুষ হয়তো খসড়া কাগজে লিখছেন—‘টু বি, অর নট টু বি’। যে বাক্যটি একদিন হয়ে উঠবে ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রশ্ন। কিন্তু লেখার সময় শেক্সপিয়র কি আদৌ কোনো প্রশ্নে ডুবে ছিলেন—না কি অন্য কোনো ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে তাঁর কলম বয়ে যাচ্ছিল?
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক লিটারারি হাব-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লেখক স্যাম কেলি এই অদ্ভুত সম্ভাবনাটিই তুলে ধরেছেন, শেক্সপিয়র কি হ্যামলেট লিখেছিলেন গাঁজার নেশায়? প্রশ্নটি মজার, কিছুটা রগরগেও বটে; কিন্তু এর মধ্যে আছে সৃষ্টিশীলতার মনোবিজ্ঞান নিয়ে এক গভীর অনুসন্ধান।
সন্দেহের পেছনে ঐতিহাসিক কারণ
রেনেসাঁর যুগের ইংল্যান্ড ছিল ভেষজ ও ওষুধের পরীক্ষার সময়। চা-কফির মতোই বিভিন্ন ভেষজ পাতা, গাছের নির্যাস, এমনকি গাঁজাও ব্যবহৃত হতো নানা রোগ-বালাই বা ধ্যানচর্চায়। ইতিহাসবিদেরা বলেন, শেক্সপিয়রের সমসাময়িক কবি-নাট্যকারদের মধ্যে হেম্প পাইপ বা হার্বাল স্মোক-এর ব্যবহার ছিল সাধারণ বিষয়।
মূলত ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্রান্সিস থ্যাকারির গবেষণায় শেক্সপিয়রের বাগানে পাওয়া কাদামাটির পাইপে ক্যানাবিসের চিহ্ন আবিষ্কার হয়েছিল—কেলির আলোচনার সূত্রপাত্র সেই ঘটনা থেকেই। অবশ্য স্যাম কেলি বলেছেন, নিশ্চিতভাবে সেটি শেক্সপিয়রেরই পাইপ ছিল এমন কোনো প্রমাণ নেই, তবুও এই আবিষ্কারই এক দশক আগে এই প্রশ্ন তুলেছিল যে শেক্সপিয়র কি তবে ধোঁয়ায় ডুবেই ভাবতেন হ্যামলেটের একাকিত্ব?
সন্দেহজনক সাহিত্যিক আচ্ছন্নতা
শেক্সপিয়রের লেখার বিস্ময়কর গতি ও গভীরতা আজো গবেষকদের অবাক করে। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি লিখেছেন ওথেলো, কিং লিয়ার, ম্যাকবেথ, হ্যামলেট—সবই মহাকাব্যিক মাপের নাটক। কেলির দাবি, ‘মানুষ এমন টানা সৃষ্টিশীল উত্তেজনায় থাকতে পারে না, যদি না সে কোনো মানসিক বা রাসায়নিক তীব্রতার মধ্যে থাকে।’
তাঁর মতে, হ্যামলেট নাটকের দীর্ঘ মনোলোগগুলো, চরিত্রগুলোর আত্ম-সন্দেহ ও বিভ্রম এবং মৃত্যুচেতনার প্রতিটি প্রশ্ন যেন এমন এক মানসিক আবর্ত থেকে জন্ম নিয়েছে, যেখানে যুক্তি আর অনুভূতির সীমারেখা ঝাপসা হয়ে যায়। ‘ক্যানাবিস হয়তো সেই সীমারেখাটিকে আরও অস্পষ্ট করেছিল,’—এই অনুমানই কেলির নিবন্ধের মূল কথা।
তবে তিনি স্বীকার করেন—এটি ইতিহাস নয়, সম্ভাবনার গল্প। কোনো নথি নেই, কোনো স্বীকারোক্তিও নয়; কেবল তাঁর ভাষায়, ‘ধোঁয়াটা এখনো রূপকই, বাস্তব নয়।’
হ্যামলেট-এর ধূম্রপাঠ
যদি সত্যিই শেক্সপিয়র গাঁজার ধোঁয়ার নিচে হ্যামলেট লিখে থাকেন, তাহলে নাটকটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। হ্যামলেটের ‘ডেলিরিয়াম’ (প্রলাপ), তার ভেতরের বিতর্ক এবং সর্বোপরি ‘টু বি, অর নট টু বি’-র মতো জটিল আত্মজিজ্ঞাসা সবকিছুই যেন এক সাইকেডেলিক ভাবনায় পূর্ণ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চার কিশোরের আগুন নেভানোর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র
পত্রিকা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলে দেখা যায় অগ্নিদুর্ঘটনা। অগ্নিদুর্ঘটনার কারণে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে বহু জীবন ও মূল্যবান সম্পদ। এই ভয়াবহতাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে রুখে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে কুমিল্লার চারজন কিশোর। কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতির নিরলস প্রচেষ্টায় তারা তৈরি করেছে এক বিস্ময়কর বিজ্ঞান প্রকল্প। তাদের এই প্রকল্পের নাম অটোমেটেড ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা স্বয়ংক্রিয় আগুন নেভানোর যন্ত্র। এই যন্ত্র অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নিভিয়ে দিতে সক্ষম।
কুমিল্লা শহরের চার খুদে বিজ্ঞানীর দল ‘ব্লেজ স্কেপ’ এই প্রকল্প তৈরি করেছে। দলের সদস্যরা হলো আবদুল্লাহ আজিম (দলনেতা), সাদমান চৌধুরী, নাহিদুল ইসলাম ও সাবির ফারহান হক। সবাই কুমিল্লার এথনিকা স্কুল ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের এ প্রকল্প সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ক্লাব আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে। এরপর নিজ স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় সেরা প্রকল্পের পুরস্কার জিতে নেয় তারা।
অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রটির কার্যকারিতাব্লেজ স্কেপের তৈরি স্বয়ংক্রিয় ফায়ার এক্সটিংগুইশারটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকর প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হবে। এতে একটি তাপমাত্রা সংবেদনশীল সেন্সর ব্যবহার করা হবে। যখন কোনো কক্ষে তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করে যা আগুনের উপস্থিতি নির্দেশ করে তখন সেন্সরটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর উপাদান, যেমন পানি বা রাসায়নিক ফোম নির্গত করতে শুরু করে। এটি বিশেষত বন্ধ কক্ষ, সার্ভার রুম বা এমন বদ্ধ জায়গায় অত্যন্ত কার্যকর বলে জানায় খুদে বিজ্ঞানীরা। যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো কঠিন, সেসব এলাকায় অগ্নিনির্বাপণের এই উদ্ভাবন কাজে আসবে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পে রোবট ও ড্রোন ব্যবহার করে উন্নত করার সুযোগ থাকবে বলে জানায় খুদে বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞান মেলায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রটির কার্যকারিতা তুলে ধরেছে খুদে বিজ্ঞানীরা। বাঁ থেকে আবদুল্লাহ আজিম, সাবির ফারহান হক, সাদমান চৌধুরী, নাহিদুল ইসলাম ও বিচারক ঝলক ঘোষ।