চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকালে প্রতি সপ্তাহে আত্মহত্যার ভাবনা জানাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ
Published: 28th, October 2025 GMT
প্রতি সপ্তাহে এক মিলিয়নের (১০ লাখ) বেশি চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী এ চ্যাটবটে এমন বার্তা পাঠান, যা ‘সম্ভাব্য আত্মহত্যার পরিকল্পনা বা মনোভাবের স্পষ্ট নির্দেশ’ বহন করে। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘ওপেনএআই’ গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক ব্লগপোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে।
চ্যাটবট কীভাবে সংবেদনশীল আলাপচারিতা পরিচালনা করে তা নিয়ে হালনাগাদ তথ্যের অংশ হিসেবে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ওপর এআইয়ের প্রভাবের মাত্রা নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এটিই সবচেয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য।
ওপেনএআই জানায়, আত্মহত্যার মনোভাব এবং এ–সম্পর্কিত তথ্য ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে সক্রিয় ব্যবহারকারীর প্রায় ৭ শতাংশ (প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার জন) চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনে মনোরোগ বা উম্মাদনা সংশ্লিষ্ট ‘মানসিক স্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতির সম্ভাব্য লক্ষণ’ প্রকাশ করেন। প্রতি সপ্তাহে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন প্রায় ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) মানুষ।
ওপেনএআই সম্প্রতি এক কিশোরের পরিবারের করা মামলার পর নজরদারির মুখে রয়েছে। ওই কিশোর চ্যাটজিপিটির সঙ্গে দীর্ঘ সময় চ্যাট করার পর আত্মহত্যা করেছিল। এ ছাড়া মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) এআই চ্যাটবট তৈরির সংস্থাগুলোর ওপর একটি বড় তদন্ত চালাচ্ছে।ব্লগপোস্টে সতর্ক করা হয়েছে যে এ কথোপকথনগুলো শনাক্ত বা পরিমাপ করা কঠিন এবং এটি একটি প্রাথমিক বিশ্লেষণ।
ওপেনএআই সম্প্রতি এক কিশোরের পরিবারের করা মামলার পর নজরদারির মুখে রয়েছে। ওই কিশোর চ্যাটজিপিটির সঙ্গে দীর্ঘ সময় চ্যাট করার পর আত্মহত্যা করেছিল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) গত মাসে ওপেনএআইসহ এআই চ্যাটবট তৈরির সংস্থাগুলোর ওপর এক বড় তদন্ত শুরু করেছে। এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য, শিশু ও কিশোরদের ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবটগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পরিমাপ করা।
আরও পড়ুনছেলের আত্মহত্যায় সহায়তার অভিযোগ চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে, মা–বাবার মামলা২৭ আগস্ট ২০২৫ওপেনএআই জানিয়েছে, নতুন ‘জিপিটি–৫’ আপডেটে চ্যাটবটের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কমেছে। এক হাজারের বেশি আত্মহত্যা ও আত্মক্ষতি–সংশ্লিষ্ট কথোপকথন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের পণ্যের (চ্যাটজিপিটি) অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কমেছে এবং ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা বেড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এ নিয়ে করা প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব দেয়নি।
এআই–গবেষক ও জনস্বাস্থ্যকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে চ্যাটবট ব্যবহারকারীর সিদ্ধান্ত বা বিভ্রান্তিকে সমর্থন করতে পারে, এমনকি তা ক্ষতিকর হলেও। এ ধরনের প্রবণতাকে ‘সাইকোফ্যান্সি’ বলা হয়। মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন যে মানুষ এআই চ্যাটবটকে মানসিক সহায়তার জন্য ব্যবহার করলে এটি সংবেদনশীল বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।ব্লগপোস্টে বলা হয়, ‘আমাদের নতুন স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন জিপিটি ৫ মডেলটি ৯১ শতাংশ সময় কাঙ্ক্ষিত আচরণ অনুযায়ী কাজ করছে, যা পুরোনো মডেলের ৭৭ শতাংশের চেয়ে বেশি।’
ওপেনএআই আরও বলেছে, ‘জিপিটি ৫’ সংকটকালীন হটলাইনগুলোতে দ্রুত প্রবেশ করার সুযোগ ও দীর্ঘ কথোপকথনের সময় ব্যবহারকারীদের বিরতি নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। এ মডেলের উন্নতির জন্য গবেষণায় সহায়তা করতে গত কয়েক মাসে ১৭০ চিকিৎসককে তালিকাভুক্ত করেছে ওপেনএআই। মডেলের উত্তর নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষা করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর তৈরিতে সাহায্য করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিকে যে কাজে ব্যবহার করলে তথ্যের গোপনীয়তা না–ও থাকতে পারে২৮ জুলাই ২০২৫ওপেনএআই বলেছে, ‘এ কাজের অংশ হিসেবে মনোরোগ–বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীরা ১ হাজার ৮০০-এর বেশি মডেল প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করেছেন, যা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি। তাঁরা নতুন জিপিটি ৫ চ্যাট মডেলের উত্তরকে আগের মডেলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এআই–গবেষক ও জনস্বাস্থ্যকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে চ্যাটবট ব্যবহারকারীর সিদ্ধান্ত বা বিভ্রান্তিকে সমর্থন করতে পারে, এমনকি তা ক্ষতিকর হলেও। এ ধরনের প্রবণতাকে ‘সাইকোফ্যান্সি’ বলা হয়। মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন যে মানুষ এআই চ্যাটবটকে মানসিক সহায়তার জন্য ব্যবহার করলে এটি সংবেদনশীল বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ওপেনএআই ব্লগপোস্টে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে, তারা তাদের পণ্যের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের সরাসরি কারণগত সম্পর্কের দায় স্বীকার করছে না।
আরও পড়ুনএআইয়ের দেওয়া সব তথ্য বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ, সতর্ক করলেন স্বয়ং স্যাম অল্টম্যান২৮ জুন ২০২৫আরও পড়ুনচ্যাটবটের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যে১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এআই চ য টবট ব যবহ র কর র র পর র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
আইফোনের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনেও ব্যবহার করা যাবে ওপেনএআইয়ের সোরা অ্যাপ
আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি ‘সোরা’ অ্যাপ সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা বা প্রম্পট থেকে সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ডের কৃত্রিম ভিডিও তৈরি করতে পারে। আর তাই উন্মুক্তের পরপরই আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এবার অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনের জন্যও সোরা অ্যাপ উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই।
সোরা অ্যাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যেকোনো ছবি বা মুখের প্রতিচ্ছবি থেকে দ্রুত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও তৈরি করতে পারে। ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই নিজেদের বা অন্য কারও মুখ ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় উন্মোচন করা হলেও প্রথম পাঁচ দিনে অ্যাপটি ১০ লাখবারেরও বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে। আর তাই সোরা অ্যাপের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ আরও বেশ কিছু দেশে উন্মুক্ত করা হতে পারে।
অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ উন্মুক্তের পাশাপাশি সোরা অ্যাপে একাধিক নতুন সুবিধাও যুক্ত করছে ওপেনএআই, যার মধ্যে ‘ক্যামিও’ অন্যতম। নতুন এ সুবিধা চালু হলে যেকোনো ব্যক্তি, পোষা প্রাণী এমনকি বস্তুকেও ভিডিওর চরিত্র হিসেবে যুক্ত করা যাবে। এ ছাড়া দ্রুত ভিডিও সম্পাদনার জন্য ‘স্টিচিং’এআই টুলও যুক্ত হচ্ছে অ্যাপটিতে। টুলটির মাধ্যমে একাধিক ক্লিপ একত্র করে নতুন ভিডিও তৈরি করা যাবে।
প্রসঙ্গত বাজারে আসার পরপর জনপ্রিয়তা পেলেও সোরা অ্যাপ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি প্রয়াত জনপ্রিয় ব্যক্তিদের চেহারা বা রূপ ব্যবহার করে ভিডিও তৈরির সুযোগ থাকায় সোরা অ্যাপকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে অনলাইনে। অ্যাপটি ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজেই শেয়ার করা যায়।
সূত্র: টেকলুসিভ