আগামী নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই: নাহিদ
Published: 28th, October 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মুহূর্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমরা বিচার বিভাগকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জায়গায় টেনে আনতে চাই না। এর নানা ক্ষতিকর দিক আমরা অতীতে দেখেছি।”
আরো পড়ুন:
জুলাই সনদ শুধু কাগজে নয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা থাকতে হবে
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির বৈঠক চলছে
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “এটা ঐকমত্য কমিশনের বিষয় যেহেতু, এটা গণভোটে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই, ড.
তিনি বলেন, “তবে, এই সরকারের কিছু সমালোচনা এসেছে। আমাদের জায়গা থেকেও বলেছি। কিছু উপদেষ্টার বিষয়েও কথা এসেছে। এটা যথাযথভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অ্যাড্রেস করা উচিত। সরকারের সেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা উচিত। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো রদবদলের প্রয়োজন হলে সরকার তা করতে পারে।”
এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “শাপলা না দেওয়ার বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের একটা স্বেচ্ছাচারিতা। কারণ, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়া একটা বিষয় চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা ধরে নেব, নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়, ন্যায়বিচার করতে সক্ষম নয়, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না, গায়ের জোরে পরিচালিত হচ্ছে। তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হবে। যদি আমাদের সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, আমরা অন্য যেকোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত আছি।”
এনসিপি যাতে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম করতে না পারে, সে উদ্দেশ্য থেকেই শাপলা প্রতীক নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে, এ অভিযোগ করে দলটির আহ্বায়ক বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক শক্তি এটা করছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের অভিযোগ নতুন নয়। আমরা কিন্তু কমিশন গঠনের শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, এই গঠনটা কোন আইনের ভিত্তিতে হলো?”
তিনি বলেন, “যারা ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচন করেছে, নির্বাচন কমিশন কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা যখন বলেছি, কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তারা বলেছে যে, ‘আমরা তাদেরকে তওবা পড়িয়েছি এবং কিছু রদবদল করেছি।’ ফলে, ওই একই লোকদের নিয়ে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, সে প্রশ্ন আমরা বার বার করেছি। আমরা দেখেছি, ওই সময়ের ডিসি কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু, তৃণমূলে যারা কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “এখন প্রতীক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে, আমাদের নির্বাচন করতে দেবে না, তখন এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কার্যক্রম থামিয়ে রাখিনি। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই চলছে। খুব শিগগিরই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব। আমরা চাই, আগামী সংসদে তরুণদের ভয়েস থাকবে। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য মানুষ, যারা সমাজ পরিবর্তনে কাজ করতে চায়, সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমরা উঠিয়ে আনতে চাই। প্রবাসীদের সমন্বয়ে, নারী ও সংখ্যালঘুদের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা করতে চাই।”
এনসিপি এখন পর্যন্ত কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি, জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি আমাদের জোটে যেতে হয়, তা অবশ্যই একটা নীতিগত জায়গা থেকে আসবে। জুলাই সনদ বা সংস্কার বিষয়ে কারা বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের সহযোগিতা করছে, সেই জায়গা থেকে জোটের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি। যদি সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় বা যাদের ইতিহাসের অনেক দায়ভার রয়েছে, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকবার ভাবতে হবে। কারণ, জনগণের অনেক প্রত্যাশা আমাদের কাছে। আমরা নিজেদের শক্তিতেই দাঁড়াতে চাই।“
বাস্তবায়নের রূপরেখা ছাড়া জুলাই সনদ কেবলই আনুষ্ঠানিকতা বলে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই সনদ যেদিন স্বাক্ষর হয়, সেদিনই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে নিশ্চিত হবে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটি কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতা। কাগজের সাইন, যার মূল্য কেবলই কাগজে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে এরকম ত্রিদলীয় রূপরেখা দেখেছিলাম, যেটা লোকদেখানো এবং ক্ষমতায় যাওয়ার পরে ভুলে যাওয়া। এই ভুল আমরা করব না।”
“তবে আমরা বলেছি, আমরা স্বাক্ষর করতে চাই। এই সংস্কারের পুরো অগ্রযাত্রাতেই আমরা ছিলাম। অবশ্যই আমরা সংস্কার চাই। স্বাক্ষর করার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা শুনেছি, ঐক্যমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশটা দেওয়া হবে। আমরা বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে আমরা সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় দেখতে চাই। একটি হচ্ছে, নোট অব ডিসেন্ট বলে কোনো কিছু থাকবে না। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে অথবা ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কারের জন্য যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করেছে, সেই বিষয়গুলো গণভোটে যাবে এবং জনগণ রায় দেবে সেই বিষয়গুলো পরিবর্তিত হবে কি না।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই ঘোষণা করতে হবে, উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং এই আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। এই আদেশের বা সংস্কারের ভিত্তিটা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে এই ধরনের সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান যে প্রেসিডেন্ট আছেন চুপ্পু, তিনি এই আদেশ দিতে পারেন না। সেটা বৈধ হবে না, জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈধতার জায়গা থেকে এই আদেশটি জারি করবেন। পরবর্তীতে যে সংসদ হবে, সেখানে একটা সংস্কার পরিষদ হওয়ার কথা, সেখানে এই সকল পরিবর্তিত বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হবে। এগুলো যখন নিশ্চিত হবে, সেখানে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করব।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “আমরা বলেছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন নির্বাচন হয়। এজন্য সকল পক্ষকেই কাজ করতে হবে। পতিত শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। যদি ক্ষমতার লোভে কোনো দল কিংবা কোনো শক্তি যদি মনে করে, তারা এককভাবেই সবকিছু করবে বা এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সংসদ টেকাতে তাদের কষ্ট হবে এবং জনগণের আস্থা তারা পাবে না। তাই, সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান করব, সংস্কারের পক্ষে থাকার।”
নির্বাচনের পক্ষে বিচার প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ দিতে হবে, দাবি করে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিচারের রোডম্যাপ দিতে হবে। সারা দেশে যে আট শতাধিক মামলা আছে, সেগুলোর কী হবে, তা জানাতে হবে। ট্রাইব্যুনালে যে গুমের মামলা চলছে, সেটি যেন অব্যাহত থাকে। ট্রাইব্যুনালের সকল কার্যক্রম যাতে পরবর্তী সরকারের সময়েও চলমান থাকে, এ ধরনের প্রতিশ্রুতি সকল রাজনৈতিক দল ও সরকারের পক্ষ থেকে থাকতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দলের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই। এটা একটা মীমাংসিত বিষয় ছিল। পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষের তো কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। নিম্নকক্ষে পিআর নিয়ে আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।”
তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন সামগ্রিক ঐকমত্য কমিশনের আলাপটাকে ডাইভার্ট করেছে, মনোযোগটা অন্য দিকে সরিয়েছে। যেসব দল এই আন্দোলনে ছিল, আমরা তাদের আহ্বান করেছি সেটা থেকে সরে এসে সত্যিকার যে সংস্কার প্রয়োজন, সেটির ব্যাপারে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিচারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। আওয়ামী লীগ কোনোদিনই নির্বাচনে বিশ্বাস করেনি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। শেখ মুজিবের আমল থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত তারা বার বার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক কোনো দল নয়।”
তিনি বলেন, “তারা চেষ্টাই করবে নির্বাচন ভণ্ডুল করতে— নির্বাচন যাতে না হয়, বাংলাদেশে যেন স্থিতিশীলতা না হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তিও চেষ্টা করবে। তাই, ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা যেকোনো প্রকার ছাড় দিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা গেছে। কিন্তু, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ এখনো নানাভাবে রয়ে গেছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ আছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী শ্রেণি রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পর্যন্ত জামিন পেয়ে নানা জায়গায় তাণ্ডব চালাচ্ছে।”
জাতীয় পার্টির বিচার দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি নির্বাচন হবে না। এই সাহস তারা কীভাবে পায়! সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের সকল গুম-খুনকে বৈধতা দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের পাঁতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা মনে করি না, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের কোনো দল। তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।”
এ সময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিফ নেহাল, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, রাজশাহী মহানগর সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/কেয়া/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প জ ল ই সনদ ব র জন ত ক সরক র র ব যবস থ এনস প র জনগণ র ঐকমত য আম দ র র আহ ব ধরন র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে নতুনত্ব আনা জরুরি
নির্বাচন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান একটি কর্মকাণ্ড থাকে জনগণের সামনে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ইশতেহার পেশ করা। নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক দলটি কী করবে আগামী বছরগুলোয় কিংবা যারা আগেও নির্বাচিত হয়েছিল এবং এখন আবার নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করবে, তার একটা দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করে। খুব জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের গণ্যমান্য মানুষের সামনে ইশতেহার দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যেটা পরিলক্ষিত হয়, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম এক বা দুই বছর ইশতেহার নিয়ে খুব তোড়জোড় থাকে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আস্তে আস্তে ইশতেহার ফিকে হয়ে আসে।
ইশতেহারে অনেক জনবান্ধব কর্মসূচি থাকে, কিন্তু তার কতটা বাস্তবায়ন করা হয় বা হচ্ছে, তা জনগণের জানার সুযোগ থাকে না। সাধারণত ইশতেহার রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়েবসাইটে আপলোড করা থাকে।
কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম করা যায় কি? ইশতেহারের জন্য আলাদা ওয়েবসাইট তৈরি করা, অ্যাপস তৈরি করা; যে ওয়েবসাইটে ইশতেহারের ডিটেইল থাকবে, কোন সময়ে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তার আপডেট থাকবে এবং নাগরিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে। এতে এক বা দুই বছর পর অথবা পাঁচ বছর পর ইশতেহারের কতটুকু বাস্তবায়িত হলো, তার একটি সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিটি সেক্টরে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি করে এবং তাদের ও তাদের চিন্তাভাবনার একটা বিরাট প্রতিফলন থাকে। যদিও ইশতেহারে বিস্তৃত সবকিছু ব্যাখ্যা করা কঠিন, তারপরও এবারের ইশতেহারে সংযুক্তি আকারে বিভাগভিত্তিক বা জেলাভিত্তিক কর্মসূচিগুলো যোগ করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার অনুরোধ রইল। এতে প্রার্থী ও জনগণ নিজের জেলার ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নিয়ে একটি বাস্তব ধারণা পাবে এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে প্রশ্ন করতে পারবে।
রাজনৈতিক দলগুলো কি এবারের ইশতেহারে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের একটি কার্যকর উদ্যোগ নেবে? শুধু অবকাঠামো স্থানান্তর না করেও স্থানীয় পর্যায়ে সেবা বাড়িয়ে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ অনেকাংশে লাঘব করা যাবে।
আরও পড়ুন'তারুণ্যবান্ধব' ইশতেহারে সত্য-মিথ্যার জোড়াতালি২৩ ডিসেম্বর ২০১৮স্বাস্থ্যপ্রতিটি জেলায় একটি করে বিশেষায়িত হাসপাতাল করার ব্যবস্থা করা। জেলায় না হলেও বিভাগীয় শহরগুলোয় অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকতে হবে। যেমন হৃদ্রোগ, কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি, ক্যানসার, গ্যাস্ট্রো–এনটেরোলজি। এতে যেমন ঢাকার ওপর চাপ কমবে, ঠিক তেমনি মানুষ তাদের আয়ত্তের মধ্যে চিকিৎসা পাবে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত।
দেশের যে জেলাগুলোয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে, সেই হাসপাতালগুলোয় ইনস্ট্রুমেন্টের অপ্রতুলতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন কার্ডিওলজিতে এমডি করা চিকিৎসক আছেন, কিন্তু অ্যানজিওগ্রাম করার মেশিন নেই। কোলনস্কপি, এন্ডোস্কপি করার মেশিন নেই। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ওয়েল ইকুইপড করতে হবে এবং সাধারণ রোগীরা যেন তাদের নাগরিক অধিকার অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা বিনা মূল্যে ওষুধসহ পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে পর্যায়ক্রমিকভাবে। উল্লেখ্য, এখন শুধু চিকিৎসা পাওয়া যায় বিনা মূল্যে, ওষুধ নয়।
স্বাস্থ্য খাতের যেকোনো বিষয় নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দাখিল করা এবং এর প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাংলাদেশের প্রাণ কৃষি। কৃষিকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঠিক পরিকল্পনা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বহুলাংশে বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশে কৃষকদের নিয়ে একটি বড় রাজনৈতিক দল অলরেডি একটি ইউনিক কর্মসূচির কথা বলছে। ফারমার্স কার্ড, যা বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ও কার্যকর উদ্যোগ হবে বলে মনে করি।বিসিএস চিকিৎসকদের ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে অন্তত আট বছর চাকরি করা বাধ্যতামূলক করতে হবে, যেন সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা পায়। বিসিএস চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে একটি কার্যকর ডিজিটালাইজড হেল্প ডেস্ক রাখতে হবে, যেন রোগীরা খুব সহজেই হাসপাতালের কোন ফ্লোরে কী কী সুবিধা আছে, তা জানতে পারে।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে স্বাস্থ্যশিক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। ঢাকার ভেতরে যে জাতীয় হাসপাতালগুলো আছে, তার যথাযথ আধুনিকায়ন করা হবে। নতুন অবকাঠামো, জনবল, বিশেষায়িত চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হবে। ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের ব্যবস্থা করা, যার মাধ্যমে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে গণমানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। দেশে একটি টিকা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত।
রোগতত্ত্ব ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রকে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত লজিস্টিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যের সুবিধাকে বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ অনেকাংশে কমানো যায়।
শিক্ষাপ্রতিটি জেলা বা বিভাগে বা দুই বা তিন জেলা মিলিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যায়। বিভাগে বিভাগে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যায়—যেমন ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি ইত্যাদি। কারিগরি শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ইনস্টিটিউট। প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় একাধিক মানসম্মত প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা।
শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা এবং তাঁরা যেন ছাত্রছাত্রীদের স্কুলেই পাঠদান করেন এবং ছাত্রছাত্রীদের সমস্যাগুলো সমাধান করেন—এ জন্য পর্যাপ্ত কর্মশালার আয়োজন করা। বাংলাদেশে স্কুল–কলেজে যে পরিমাণ কোচিং ব্যবস্থার প্রচলন আছে, তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিরল। স্কুল–কলেজে সঠিকভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীদের ওপরও বাড়তি মানসিক ও শারীরিক বোঝা কমবে।
শিক্ষার্থীদের স্টাডি ট্যুরের ব্যবস্থা করা, বিশেষ করে দেশের ভেতরে ও বিদেশে। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ হবে। তাদের যেমন খুব শুরু থেকেই দেশপ্রেমবোধ জাগ্রত হবে, ঠিক তেমনিভাবে তারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে জেনে নিজেদের আলোকিত করতে পারবে।
ছিন্নমূল শিশুদের সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে ঢাকা শহরে বিভিন্ন ট্র্যাফিক পয়েন্টে শিশুরা ফুল ও অন্যান্য দ্রব্য বিক্রি করে। তাদের জন্য বিভিন্ন এনজিও নানা কার্যক্রম চালায়। কিন্তু সরকারিভাবে তাদের জন্য ব্যাপকভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। এই বস্তিবাসীকে যদি তাদের নিজ নিজ জেলায় কর্মের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা যায় তাহলে ঢাকার ওপর অতিরিক্ত মানুষের চাপ কমবে।
কৃষিবাংলাদেশের প্রাণ কৃষি। কৃষিকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঠিক পরিকল্পনা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বহুলাংশে বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশে কৃষকদের নিয়ে একটি বড় রাজনৈতিক দল অলরেডি একটি ইউনিক কর্মসূচির কথা বলছে। ফারমার্স কার্ড, যা বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ও কার্যকর উদ্যোগ হবে বলে মনে করি।
কৃষকদের জন্য সঠিক সময়ে সারের নিশ্চিত করা এবং এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা শুধু ওয়াদার মধ্যে না রেখে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত গার্মেন্টস। কিন্তু এখন আমাদের রপ্তানি খাতকে নতুনভাবে পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। কৃষিজাত অনেক পণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি এবং ক্ষেত্র উন্মোচন করতে পারি। কৃষকদের ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয় এবং ব্যাংকঋণ দেওয়া হয়, যার আওতা অনেক অনেক বাড়ানো প্রয়োজন।
আর এসব ডেটা সংরক্ষণের জন্য বিবিএসের পাশাপাশি একটি ডেটা সেন্টার করা খুব প্রয়োজন, যে ডেটা সেন্টার প্রতিনিয়ত আপডেটেড থাকবে।
এ লেখার উদ্দেশ্য এ–ই নয় যে একটি ইশতেহারের সবকিছু লিখে দেওয়া। এই লেখার উদ্দেশ্য, ইশতেহার নিয়ে নতুন অনেক ইনোভেটিভ কাজের সুযোগ আছে। আমাদের আগামীর বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে, বাংলাদেশের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কারওয়ান বাজার, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সচিবালয়কে ঢাকা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে কীভাবে ঢাকাকে বাসযোগ্য এবং ঢাকার বাতাসকে নিশ্বাস নেওয়ার মতো নিরাপদ করার দিকে নজর দিতে হবে।
প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়হান লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক