জুলাই সনদের যেসব বিষয় নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন সম্ভব
Published: 28th, October 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজ মঙ্গলবার দুপুরে মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে এই সুপারিশ তুলে দেন। মুহাম্মদ ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি।
সুপারিশ হস্তান্তরের সময় উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
সুপারিশগুলোর মধ্যে ৯টি সুপারিশ নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করে কমিশন। ৯টি সুপারিশ কী কী তা দেখে নিন—
উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ: যে সকল উপজেলা জেলা সদরে অবস্থিত (সদর উপজেলা), সে সকল উপজেলা আদালতসমূহ জেলা জজ কোর্টের সাথে সংযুক্ত রেখে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বিদ্যমান চৌকি আদালত, দ্বীপাঞ্চল ও ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা আদালতসমূহ বহাল রেখে এর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে নতুন আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই (প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা সমাপ্ত করে)। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াত ব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা হবে।
অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে।
বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি: বিচার বিভাগের সকল স্তরে বিচারক ও সহায়ক জনবল বৃদ্ধি এবং বিশেষায়িত আদালত স্থাপন করা হবে।
আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা: মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি নিরসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, মামলার খরচ হ্রাস ও বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশনা জারির মাধ্যমে আদালত ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও ডিজিটাইজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আইনজীবীদের আচরণবিধি: আইনজীবীদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণ, জেলা পর্যায়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং এর প্রধান হিসেবে একজন বিচারককে দায়িত্ব প্রদান করা হবে। অপরদিকে আদালত প্রাঙ্গণে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হবে।
গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন: জুলাই গণ অভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।
কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন: ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে ২ (দুই)টি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করা হবে।
দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন: রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করে ন্যায়পালের কার্যালয়কে এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত করা হবে।
পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা: সেবা প্রদানকারী সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষত, থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সকল সেবা-পরিষেবা খাতের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।
ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া: বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হতে হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যেসব সুপারিশের বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলোর বিষয়ে সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। দ্বিতীয় ভাগে অনেকগুলো সুপারিশ সরকারি নির্দেশ বা অফিস আদেশ দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করার জন্য কমিশন সরকারকে বলেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এ দুটো বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনরকম ভিন্নমত নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন য পর য য় উপজ ল সরক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ঐক্যমত কমিশন অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়–সম্পর্কিত যেসব সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে কার্যক্রম শেষ করায় ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে সেই স্বাক্ষরিত সনদ বহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ৮৪টি দফা সম্ভবত, সেখানে বিভিন্ন দফায় আমাদের এবং বিভিন্ন দলের কিছু ভিন্ন মত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে। পরিষ্কারভাবে সেখানে উল্লেখ করা আছে যে, এই সমস্ত নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলসমূহ যারা দিয়েছে, তারা যদি নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয় তাহলে তারা সেইভাবে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন। সেটা এই প্রিন্টেড জাতীয় জুলাই সনদের যে বই এখানে আপনারা পাবেন সমস্ত দফায় দফায় যেখানে যেখানে ডিসেন্ট আছে সেখানে আছে। অথচ বিশ্বয়করভাবে আজকে যে সংযুক্তিগুলো দেওয়া হলো সুপারিশমালার সাথে, সেখানে এই নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখ নাই।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হয়তোবা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমস্যাটা নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে। এখানে একটা নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে যে, সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে একটা আইডিয়া এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কখনো টেবিলে ছিল না, আলোচিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।’