আম্পায়ার শাফিন শরীফ লাইট মিটারটা এনে রাখলেন স্টাম্পের ওপর। পাশে মাঠের আরেক আম্পায়ার অমিত মজুমদার ও চতুর্থ আম্পায়ার নাজমুল হাসান।

এক প্রান্তে আলো পরিমাপ করার পর শাফিন আরেক প্রান্তে গিয়েও একই কাজ করলেন। এরপরই ডেকে নিলেন আফগান অধিনায়ক মাহবুব খানকে। সেখানে জড়ো হলেন আরও কয়েকজন আফগান খেলোয়াড়। পাশে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রিজান হোসেন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে আম্পায়াররা ম্যাচের ইতি টানার ঘোষণা দিলেন, দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মেলাতে শুরু করলেন।

কিন্তু বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপচে পড়া দর্শক তা যেন কিছুতেই মানতে পারলেন না। দর্শকদের বেশির ভাগই নিজেদের মুঠোফোনের টর্চলাইট ধরলেন মাঠের দিকে। ১০০ ওভারের ম্যাচে ৯৬ ওভার দেখার পরও যেন তাঁদের মন ভরল না!

ভরবে কী করে, এ ম্যাচ দিয়েই যে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট ফিরেছে উত্তরবঙ্গের শহরটিতে! বগুড়াবাসী তাই ম্যাচের এমন সমাপ্তি দেখতে চাননি। তবে আলোকস্বল্পতায় খেলায় ৪ ওভার বাকি থাকতে শেষ হলেও আনন্দ নিয়েই তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। ডাকওয়ার্থ–লুইস–স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল যে ৫ রানে আফগান যুবাদের হারিয়েছে।
এ জয়ে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১–০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী শুক্রবার বগুড়াতেই।

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের দারুণ স্পোর্টিং উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬৫ রান করে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দল। ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ১৩৭ বলে ১৪০ রানে অপরাজিত থাকেন উজাইরউল্লাহ নিয়াজাই। দলের ৫২.

৮৩ শতাংশ রান উজাইর একাই করেন।
আফগানদের সংগ্রহ আরও বড় হতে পারত। কিন্তু শুরুটা দারুণ হলেও শেষটা আশানুরূপ হয়নি। একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১৩৫ রান তুলে ফেলা আফগানদের রানের গতি আটকাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের পেসার ইকবাল হোসেন। ৫৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ইকবাল, যা যুব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা বোলিং।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাওয়াদ আরবার ১০ ও রিফাত বেগ ২৬ রান করলেও অধিনায়ক আজিজুল হাকিম মারেন ‘ডাক’।
এরপরই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। রিজান হোসেনকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩৯ রান যোগ করেন কালাম সিদ্দিকী। কালাম যুব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও পেয়ে যান। ১১ চারে ১১৯ বলে তিনি ১০১ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।

এরপর মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন রিজান (৭৫*)। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিল ৩৫ রান। হাতে ৬ উইকেট থাকায় ম্যাচটা স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। আলোকস্বল্পতায় খেলা থামার সময় বাংলাদেশ ডিএলএস পদ্ধতিতে এগিয়ে থাকায় তাদেরকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোরআফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দল: ৫০ ওভারে ২৬৫/৯ (উজাইরউল্লাহ ১৪০*, খালিদ ৩৪, ফয়সাল ৩৩; ইকবাল ৫/৫৭, রিজান ২/৫৪, আজিজুল ১/২৩, সবুজ ১/৩০)।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল: ৪৬ ওভারে ২৩১/৪ (কালাম ১০১, রিজান ৭৫*, রিফাত ২৬, আবদুল্লাহ ১২*; ওয়াহিদউল্লাহ ২/৪৭, জয়তুল্লাহ ১/৩৪, নুরিস্তানি ১/৩৬)।
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল ৫ রানে জয়ী (ডিএলএস পদ্ধতিতে)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কালাম সিদ্দিকী (বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল)।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ১–০ তে এগিয়ে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম প য় র আফগ ন উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানদের হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেলেন বাংলাদেশের যুবারা

আম্পায়ার শাফিন শরীফ লাইট মিটারটা এনে রাখলেন স্টাম্পের ওপর। পাশে মাঠের আরেক আম্পায়ার অমিত মজুমদার ও চতুর্থ আম্পায়ার নাজমুল হাসান।

এক প্রান্তে আলো পরিমাপ করার পর শাফিন আরেক প্রান্তে গিয়েও একই কাজ করলেন। এরপরই ডেকে নিলেন আফগান অধিনায়ক মাহবুব খানকে। সেখানে জড়ো হলেন আরও কয়েকজন আফগান খেলোয়াড়। পাশে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রিজান হোসেন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে আম্পায়াররা ম্যাচের ইতি টানার ঘোষণা দিলেন, দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মেলাতে শুরু করলেন।

কিন্তু বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপচে পড়া দর্শক তা যেন কিছুতেই মানতে পারলেন না। দর্শকদের বেশির ভাগই নিজেদের মুঠোফোনের টর্চলাইট ধরলেন মাঠের দিকে। ১০০ ওভারের ম্যাচে ৯৬ ওভার দেখার পরও যেন তাঁদের মন ভরল না!

ভরবে কী করে, এ ম্যাচ দিয়েই যে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট ফিরেছে উত্তরবঙ্গের শহরটিতে! বগুড়াবাসী তাই ম্যাচের এমন সমাপ্তি দেখতে চাননি। তবে আলোকস্বল্পতায় খেলায় ৪ ওভার বাকি থাকতে শেষ হলেও আনন্দ নিয়েই তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। ডাকওয়ার্থ–লুইস–স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল যে ৫ রানে আফগান যুবাদের হারিয়েছে।
এ জয়ে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১–০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী শুক্রবার বগুড়াতেই।

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের দারুণ স্পোর্টিং উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬৫ রান করে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দল। ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ১৩৭ বলে ১৪০ রানে অপরাজিত থাকেন উজাইরউল্লাহ নিয়াজাই। দলের ৫২.৮৩ শতাংশ রান উজাইর একাই করেন।
আফগানদের সংগ্রহ আরও বড় হতে পারত। কিন্তু শুরুটা দারুণ হলেও শেষটা আশানুরূপ হয়নি। একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১৩৫ রান তুলে ফেলা আফগানদের রানের গতি আটকাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের পেসার ইকবাল হোসেন। ৫৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ইকবাল, যা যুব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা বোলিং।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাওয়াদ আরবার ১০ ও রিফাত বেগ ২৬ রান করলেও অধিনায়ক আজিজুল হাকিম মারেন ‘ডাক’।
এরপরই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। রিজান হোসেনকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩৯ রান যোগ করেন কালাম সিদ্দিকী। কালাম যুব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও পেয়ে যান। ১১ চারে ১১৯ বলে তিনি ১০১ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।

এরপর মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন রিজান (৭৫*)। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিল ৩৫ রান। হাতে ৬ উইকেট থাকায় ম্যাচটা স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। আলোকস্বল্পতায় খেলা থামার সময় বাংলাদেশ ডিএলএস পদ্ধতিতে এগিয়ে থাকায় তাদেরকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোরআফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দল: ৫০ ওভারে ২৬৫/৯ (উজাইরউল্লাহ ১৪০*, খালিদ ৩৪, ফয়সাল ৩৩; ইকবাল ৫/৫৭, রিজান ২/৫৪, আজিজুল ১/২৩, সবুজ ১/৩০)।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল: ৪৬ ওভারে ২৩১/৪ (কালাম ১০১, রিজান ৭৫*, রিফাত ২৬, আবদুল্লাহ ১২*; ওয়াহিদউল্লাহ ২/৪৭, জয়তুল্লাহ ১/৩৪, নুরিস্তানি ১/৩৬)।
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল ৫ রানে জয়ী (ডিএলএস পদ্ধতিতে)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কালাম সিদ্দিকী (বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল)।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ১–০ তে এগিয়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ