দুটো ব্যালটে গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে: আমীর খসরু
Published: 28th, October 2025 GMT
দুটো ব্যালটের মাধ্যমে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি পুরো আলোচনায়। বিএনপির অবস্থান ছিল যে, গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে দুটো ব্যালটের মাধ্যমে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এই ব্যাপারে আলোচনার কোনো সুযোগ নাই। নির্বাচনের দিন দুইটা ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট হবে।”
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঐকমত্যের বদলে অনৈক্যের চেষ্টা করছে কমিশন: সালাহউদ্দিন
ধর্মকে বিকৃত করে নির্বাচন বানচাল জনগণ মানবে না: ফারুক
এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রদূত সারাহ কুক বৈঠক করেন।
বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, “আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড, বিএনপির প্রস্তুতি এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এর মধ্যে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়টি বৈঠকে উঠে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদল’ দিয়ে এটা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, “ইন্টেরিম সরকারের ভেতরে যে কিছু কিছু লোক আছে, যারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে; শুধু বিএনপি কর্তৃক প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকারের মধ্যে যারা আছে যারা যারা একটু বিতর্কিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যে এবং যে কাজগুলো হয়েছে সে কাজগুলো আবার রিভিউ (পর্যালোচনা) করার প্রশ্ন আসছে। সুতরাং সেই ক্ষেত্রে (তত্বাবধায়ক সরকার) এই আলোচনাটা উঠে আসছে। আমরা বলেছি এটা যে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন,“এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে উনি তার দেশে ফেরার বিষয়টা তো সবসময় আলোচনার মধ্যে থাকে। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু আলোচনা হয়নি, কারণ বাংলাদেশে উনি কবে ফিরবেন সেটা তার সিদ্ধান্ত। এবং উনি সঠিক সময়ে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে ফিরবেন-এটা পরিষ্কার। দিনক্ষণ তার পক্ষ থেকে বলা হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র সরক র গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। সিইসির তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জোয়াল ভেঙে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার যে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই হবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেন। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। নির্বাচনের যে রোডম্যাপ তিনি ঘোষণা করেছেন, সে অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, বাছাই, আপিল নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে আগামী ২১ জানুয়ারি। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, আইনবিধি সংস্কার, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ ও বড় কাজগুলো শেষ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত কেনাকাটা, পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন শেষ করেছে। বর্তমানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশে বড় রদবদল হয়েছে। সব মিলিয়ে তফসিল–পূর্ব ইসির প্রস্তুতিকে সন্তোষজনকই বলা যায়। তবে আমাদের নির্বাচনী ইতিহাস বলে, তফসিল ঘোষণার পরই মূল চ্যালেঞ্জটা দেখা যায়। এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পুলিশ এখনো পুরোপুরি আগের সক্রিয়তায় ফিরতে পারেনি। যদিও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব কটি বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ সংখ্যা নিশ্চিত করেই বিপুল কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা কতটা সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন, তা অনেকখানি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিচক্ষণ ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর। ইতিমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও) সংশোধন আনা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আগের চেয়ে ক্ষমতায়িত হয়েছে। আমরা আশা করি, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগে সাহসী ও নিরপেক্ষ থাকবে।
জাতি আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালেও যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না। পরপর তিনটি জালিয়াতির নির্বাচন ও কর্তৃত্ববাদী শাসনে শেখ হাসিনা সরকারের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নেমেছিল। গত বছরের জুলাই ও আগস্টে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
অর্থনীতি, বিনিয়োগ, জাতীয় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সবকিছুর বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর। সশস্ত্র বাহিনীরও এ ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি।