চট্টগ্রামের রাউজানে প্রকাশ্যে গুলি করে যুবদল কর্মী আলগীর আলম (৪৫) হত্যার দুই দিন পর মামলা হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাতে রাউজান থানায় মামলাটি হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হয়।

নিহত আলমগীর আলমের বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। এতে ২১ জনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ঘটনায় আরও ৬–৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এ মামলার এজাহারে নাম থাকা দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ দুপুরে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন রাউজান সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমত পাড়ার বাসিন্দা মুহাম্মদ হৃদয় (৩৫)।

এ ঘটনায় মুহাম্মদ রাসেল খানকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি ছাত্রদল ও যুবদলের একাংশের নেতা-কর্মীদের। এ মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে আজ সকালে রাউজান সদর এবং বিকেলে পাহাড়তলী চৌমুহনী এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর এজাহারভুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেওয়া হয়েছে। পরে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন।’

আরও পড়ুনরাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আরও এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা২৫ অক্টোবর ২০২৫

গত শনিবার খুন হয়েছিলেন যুবদল কর্মী আলমগীর আলম। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনেরা জানান, যুবদল কর্মী আলমগীর আলম মোটরসাইকেলে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় উপজেলার কায়কোবাদ জামে মসজিদের কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমগীরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুনরাউজানে একের পর এক খুন, ধরা পড়ছে না অস্ত্রধারীরা২৭ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল আলমগ র র আলম

এছাড়াও পড়ুন:

বাস্তবের ‘জীবন নিয়ে খেলা’

সাধারণত এ ধরনের ঘটনা দেখা যায় সিনেমাতে। যেমনটি দেখা গিয়েছিল রঞ্জিত মল্লিক অভিনীত ‘জীবন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এবার বাস্তবেই ধরা দিল সেই ঘটনা।

পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ‘গরীবের ডাক্তার’ খ্যাত আলমগীর হোসেনের বদলি বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় মানুষ।

সেই সঙ্গে নানা অনিয়ম, চিকিৎসা বাণিজ্য এবং রোগী হয়রানির অভিযোগে একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুলকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এক্ষেত্রে জীবন নিয়ে খেলা সিনেমার দুটি চরিত্রের কথা মনে পড়ে। রঞ্জিত মল্লিক অভিনয় করেছিলেন ডা. শুভঙ্কর সান্যালের চরিত্রে। আর ডা. নারায়ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মনোজ মিত্র।

যেখানে শুভঙ্কর স্যানালকে পাওয়া যায় রোগ-শোকে আক্রান্ত গরিব, দুঃখী মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে। তার উল্টো চরিত্র ডা. নারায়ণ, যাকে দেখা যায় চিকিৎসকের নামে গরিবের রক্ত চোষা হিসেবে।

পাবনার চাটমোহরেও স্থানীয় মানুষদের মানববন্ধনের মাধ্যমে সামনে এসেছে এমন দুটি চরিত্র। যেখানে আলমগীরকে হাসপাতালে রাখার জন্য রাস্তায় নেমেছে জনতা। সেখানে ডা. ওমর ফারুককে বিতাড়িত করতে দাবি তুলেছে তারা।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন নাগরিক সমাজ, চাটমোহরের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় দাপ্তরিক কাজে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা পাবনার সিভিল সার্জনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আসাদুজ্জামান লেবু, মোতালেব হোসেন, তানভীর জুয়েল লিখন, শাহীন হোসেন, ফুলচাঁদ হোসেন শামীম, হাসানুজ্জামান সবুজ, ফয়সাল কবীর, সাজেদুর রহমান সেজান, ইমরান হোসেন, হাসিনুর রহমান, জান্নাতুন নাঈম জুঁই প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে পাবনা সদর হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। ভর্তি রোগীরাও সঠিক সেবা পান না। এছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে দুর্নীতি, চিকিৎসা বাণিজ্য ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে।

তারা বলেন, ডা. আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। তিনি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখতেন না এবং কোনো কমিশনভিত্তিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যে কারণে গরীবের ডাক্তার হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তার এই মানবিক আচরণ ও সততা হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ও টেস্ট সিন্ডিকেটের স্বার্থে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণে তাকে মাত্র এক বছরের মাথায় বদলি করা হয়েছে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, আর এসবের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে থাকায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার মনমতো না চললে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। নানা অনিয়মে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। তার কারণে ভাল কোনো চিকিৎসক এখানে বেশি দিন থাকতে পারেন না।

বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে ডা. আলমগীর হোসেনের বদলি বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখা এবং ডা. ওমর ফারুক বুলবুলকে চাটমোহর থেকে অপসারণেল দাবি জানান।

সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে ডা. আলমগীর হোসেনকে চাটমোহর হাসপাতাল ফেরানো হবে। একইসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওমর ফারুক বুলবুলের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’’

অভিযোগের বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল বলেন, ‘‘সকালে হাসপাতালে ছিলাম না। আমার ডিউটি বিকেলে ছিল। তাই ওই সময়ে কি হয়েছে জানি না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। ডা. আলমগীরকে বদলির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’’

ঢাকা/শাহীন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মির্জা ফখরুলের সঙ্গে মঙ্গোলিয়ার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, আশা মির্জা ফখরুলের
  • এক ডাক্তারের বদলি বাতিল, আরেকজনের অপসারণ চাইলেন চাটমোহরবাসী
  • বাস্তবের ‘জীবন নিয়ে খেলা’