প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, ডিজিটাল রূপান্তর ও ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার চাপে কর্মীদের মানসিক চাপ দ্রুত বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে তাঁদের উৎপাদনশীলতা ও কাজের স্থায়িত্বে। এই প্রেক্ষাপটে শুধু বেতন বা সুবিধা নয়, কর্মীদের মানসিক সুস্থতা, নেতৃত্বের বিকাশ ও যত্নবান সংস্কৃতি তৈরি করাই প্রতিষ্ঠানের জন্য টিকে থাকার মূল কৌশল হয়ে উঠেছে।

মেটলাইফ বাংলাদেশের করা ‘এমপ্লয়ি বেনিফিট ট্রেন্ড স্টাডি ২০২৫’ শীর্ষক এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়, গ্রামীণফোনের (জিপি) সিইও ইয়াসির আজমান ও সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এইচ এম ফাইরোজ, মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ।

অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে কর্মীদের ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের সৃষ্টিশীলতা বাড়াতে এবং তাদের অনুপ্রাণিত করে রাখতে অনেক কিছু করতে হয়। বিশ্ববাজার এখন খুব অনিশ্চিত। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও এই পরিবর্তনের প্রভাবে পড়েছে। রাজনৈতিক, আর্থিক ও নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ফলে কর্মীদের জন্য চাকরির নিরাপত্তা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই শুধু কর্মী ধরে রাখা নয়, বরং তাঁদের সামগ্রিক কল্যাণ দেখাও এখন অপরিহার্য।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের শিল্প খাত নানা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, ডিজিটাল রূপান্তর ও জটিল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অনেক সময় কর্মীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আবার উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব ফেলছে।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘কর্মীদের দক্ষতা ও মূল্যবোধ—দুটোই মূল্যায়ন করতে হবে। আমরা ঠিক করেছি, প্রতিষ্ঠানের কোনো আচরণ গ্রহণযোগ্য, আর কোনোটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ আমরা দেখেছি, অতীতে মানুষ মূল্যবোধগুলো মুখস্থ করত, কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ বুঝত না। মূল্যবোধের চর্চা কীভাবে করতে হয়, সেটা উপলব্ধি করত না। উদাহরণ হিসেবে সততার কথা বলা যায়। অনেকেই আগে ভাবতেন এটি কেবল আর্থিক সততার ব্যাপার। কিন্তু এটি তার চেয়ে অনেক বিস্তৃত। ’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, নিয়োগের সময় প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মী নারী হলেও, মিড লেভেলে এসে তাঁদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এর পেছনে নানা সামাজিক কারণ আছে—বিয়ে, সন্তান, পরিবার ইত্যাদি। এসব ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে আমরা চেষ্টা করি যেন প্রতিষ্ঠানে সুযোগের অভাব বা অনুকূল পরিবেশের ঘাটতির কারণে কেউ কর্মজীবন থেকে পিছিয়ে না পড়েন।’

নাসের এজাজ আরও বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, নতুন প্রজন্মের মানসিকতা। আমি সম্প্রতি লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম, যেখানে দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্ম এখন সম্পত্তি কিনছে না, বিয়ে করছে না, সন্তান নিচ্ছে না। তাদের জীবনের ধারা অনেকটাই বদলে গেছে। তারা স্বাধীনভাবে থাকতে চায়, তাই তাদের “রিটেনশন” বা প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার বিষয়টি এখন আরও কঠিন হয়ে উঠছে।’

মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক চাপ ও পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মনোবলকে দুর্বল করে দেয়। এখন নিয়োগদাতাদের সামনে দারুণ সুযোগ রয়েছে। কর্মীদের ব্যাপক সুবিধা প্রদান, তাঁদের জন্য যত্নবান সংস্কৃতি তৈরি এবং যোগাযোগ উন্নত করার মাধ্যমে নিয়োগদাতারা একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন। এই উদ্যোগ একই সঙ্গে বিশ্বস্ততা বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।’

গ্রামীণফোনের (জিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, জরিপে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ কর্মী তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নিজের ভূমিকা বা কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে ৪২ শতাংশ কর্মী অন্যদের কাছে নিজের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন। নিজের কাজে সন্তুষ্ট থাকার পরও প্রতিষ্ঠান নিয়ে এত কম সুপারিশ কেন করছেন, সেটি যাচাই করে দেখা যেতে পারে।

সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এইচ এম ফাইরোজ বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্রের নমনীয়তা, আর্থিক চাপ প্রভৃতি বিষয়ে জেন-জি বা নতুন প্রজন্মের তরুণেরা বেশি চিন্তা করেন। সুতরাং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও চাপ নিয়ে ভাবা লাগবে। তবে তাঁরা কেন চাপ সামলাতে পারছেন না, সেটিও খুঁজে দেখা যেতে পারে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত অন ষ ঠ ন ক ত গত আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন গান, নতুন ভিডিও, নতুন ফারিয়া

বিনোদন অঙ্গনে নুসরাত ফারিয়ার শুরুটা হয় বেলাল খানের গাওয়া একটি গানের মডেল হিসেবে। এরপর অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে আসেন আলোচনায়। একটা সময় টেলিভিশন নাটক হয়ে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে ‘আশিকী’ দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর যাত্রাটা সবার চোখে পড়ে। একটা পর্যায়ে এসে সিনেমার অভিনয়কে পুঁজি করে গান প্রকাশেও মনোযোগী হন ফারিয়া।

অভিনয় আর সংগীত—দুই অঙ্গনেই নিজেকে আলোচনায় রাখেন তিনি। কিছুদিনের বিরতির পর নতুন গান নিয়ে আবারও ফিরছেন এই তারকা। ইতিমধ্যেই তিনি ফুয়াদ আল মুক্তাদির, সঞ্জয়সহ কয়েকজন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ শেষ করেছেন। বলছেন, এবার শ্রোতাদের উপহার দিতে চান ভিন্নধর্মী ও উন্নতমানের গানের ভিডিও।

নুসরাত ফারিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ