মূল্যস্ফীতি ও আগের পে স্কেল বিবেচনায় মূল প্রস্তাবিত নবম জাতীয় পে স্কেলে মূল বেতন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি, নবম গ্রেডের পরিবর্তে সপ্তম গ্রেডে প্রভাষক নিয়োগসহ একাধিক প্রস্তাব করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে বেতন প্রস্তাবনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নবম পে কমিশনের কাছে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী যাত্রা শুরু ২৮ অক্টোবরের রক্তাক্ত তাণ্ডব দিয়ে: রিজভি

ঢাবিতে দিনব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য মেলা

অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো- ২ হাজার কোটি টাকার এনডোমেন্ট ফান্ড প্রদান, ন্যুনতম ২ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান, ১ হাজার কোটি টাকার গবেষণা অনুদান ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য আরেক হাজার কোটি টাকা অ্যানডোমেন্ট ফান্ড গঠন। 

প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম গ্রেডের সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডের বেতন ১ লাখ ৮৮ হাজার থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৭০ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। তৃতীয় গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। চতুর্থ গ্রেডের কর্মচারীরা পাবেন ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩০০ টাকার বেতন। পঞ্চম গ্রেডে এই পরিমাণ হবে ১ লাখ ২৯ হাজার থেকে ২ লাখ ১১০ টাকা।

এ ছাড়া সপ্তম গ্রেডে কর্মরতদের বেতন ৮৭ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০ টাকার মধ্যে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বনিম্ন অর্থাৎ ২০তম গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ২৫ হাজার থেকে ৬৮ হাজার ৯৭৫ টাকা পর্যন্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন ও গ্রেড প্রস্তাব করা হয়েছে- প্রভাষক সপ্তম গ্রেড, সহকারী অধ্যাপক পঞ্চম গ্রেড, সহযোগী অধ্যাপক তৃতীয় গ্রেড, অধ্যাপক দ্বিতীয় গ্রেড, মোট অধ্যাপকের ২৫ শতাংশ প্রথম গ্রেড পাবেন।

প্রস্তাব অনুযায়ী, বিশেষভাবে প্রথম গ্রেডের অধ্যাপকের মধ্যে ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ২০ জন ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক হয়ে বাড়তি বেতন এবং গৃহ ও গবেষণা সহকারী পাবেন; তিনজন ‘বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক’ পদ পাবেন, তারা সার্বক্ষণিক গাড়ি, গৃহ ও গবেষণা সহকারী সুবিধা পাবেন। এগুলো গবেষণা, প্রকাশনার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

কোষাধ্যক্ষ এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ যখন আরও উন্নত হবে, তখন আমাদের ভালো শিক্ষক রাখা কঠিন হবে। তারা আমাদের তিন থেকে পাঁচ গুণ বেতন অফার করছে।”

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিসর বৃদ্ধিতে অধ্যাপক ১০ লাখ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৫ লাখ টাকা, সহকারী অধ্যাপক ৩ লাখ টাকা এবং প্রভাষককে ২ লাখ টাকা বাৎসরিক গবেষণা অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গবেষণা কিউ১, কিউ২, কিউ৩ পর্যন্ত জার্নালে প্রকাশে ১ লাখ টাকা, ৭৫ হাজার টাকা, ২৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া; বিদেশে সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ বাবদ প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব হয়েছে।

কোষাধ্যক্ষ বলেন, “আমরা ওই প্রস্তাব করেছি, এসব টাকা শুধু গবেষণা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হবে। কেউ ব্যক্তিগত ব্যয়ে এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। গবেষণা না করলে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।”

মূল বেতনের সমপরিমাণ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ভাতা; ২৫ শতাংশ ডিন, প্রাধ্যক্ষ এবং হাউস টিউটর (বর্তমানে ১৫০০ টাকা পান) ভাতা, ২০ শতাংশ চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও গবেষণা সেন্টারের পরিচালক ভাতা, ৫০ শতাংশ প্রক্টর ভাতা; অফিস প্রধানদের ২৫০০ টাকা বিদ্যুৎ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কমিটি।

ভাতার মধ্যে উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২০০ শতাংশ হারে বছরে দুইটি, ৫০ শতাংশ নববর্ষ ভাতা, ২০ শতাংশ হারে ঢাকা সিটি ভাতা, ১০ শতাংশ শিক্ষা উপকরণ ভাতা; ৬ হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তান প্রতি মাসিক ২ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়ক ভাতা, শিক্ষকদের বই ভাতা ২০ হাজার টাকা, নবম গ্রেড পর্যন্ত টেলিফোন ভাতা, কর্মকর্তাদের তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ বলেন, “প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো প্রমিনেন্ট হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। আমাদের যদি প্রতিযোগিতায় থাকতে হয়, তাহলে উচ্চ শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানে কলেজের শিক্ষক বছরে দুইবার ফুল কনফারেন্স ফান্ডিং পান। আমরা সেটি করতে পারিনি। দক্ষিণ এশিয়ায় সাইটেশনযোগ্য অ্যাকাডেমিক আর্টিকেল প্রকাশে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে।”

তিনি বলেন, “উন্নত সব ইউনিভার্সিটির অ্যানডোমেন্ট ফান্ড রয়েছে, আমাদের নেই। সরকার আজকে টাকা দেওয়া বন্ধ করলে ইউনিভার্সিটি চালানো যাবে না। যতদিন ফাইনান্সিয়াল ফ্রিডম অর্জিত না হবে, ততদিন প্রকৃত স্বায়ত্ত্বশাসন অর্জিত হবে না।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শহীদুল জাহিদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মনিনুর রশিদ, সদস্যসচিব বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শাফী মুস্তফা।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র প রস ত ব তম গ র ড আম দ র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইতিবাচক মনে করছে এনসিপি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জমা দেওয়া সুপারিশকে ইতিবাচকভাবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণভোটের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) কার্যকারিতা না রাখা, পুরো সনদকে “হ্যাঁ”, “না” ফরম্যাটে গণভোটে দেওয়া এবং গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে আদেশ জারি করা—এ বিষয়গুলোকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি।’

এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘২৭০ দিনের জন্য সংবিধান সংস্কার পরিষদ রাখার বিষয়টিও ইতিবাচক। কিন্তু আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপিটা আমরা এখনো পাইনি। তবে আমরা সংস্কারকৃত সংবিধানকে সংশোধিত সংবিধান, ২০২৬ নামকরণের কথা বলেছিলাম।’

ঐকমত্য কমিশনের জমা দেওয়া সুপারিশ নিয়ে বিএনপির অসন্তুষ্টি প্রসঙ্গে এনসিপির নেতা আরিফুল ইসলাম আদীবের মন্তব্য হচ্ছে, যে বিষয়গুলো বিএনপির বিপক্ষে যায়, তারা সেগুলোকে অনৈক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে দেখে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অধিকাংশ দল যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, বিএনপি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির ক্ষেত্রে ২৫টি দল একমত, বিএনপি আর এনডিএম একমত হয়নি।

এনসিপির নেতা বলেন, মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে ৩০টি দলের মধ্যে ২৫ থেকে ২৮টি দল একমত হয়েছে, সেখানে বিএনপি ও তাদের সমমনা কয়েকটি দল দ্বিমত করেছে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়াকে ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি। কারণ, গণভোটের মাধ্যমে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত ফয়সালা হয়ে যাবে। এরপরই সংস্কারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে।

আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, আজকালের মধ্যে এনসিপির দলীয় সভা হতে পারে। সেখানে আলোচনা করে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ