কানাডায় এবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতিকে খুন করল বিষ্ণোই গ্যাং
Published: 29th, October 2025 GMT
ভারতের কুখ্যাত সন্ত্রাসী লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং কানাডায় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা গত সোমবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক অ্যাবটসফোর্ড–ভিত্তিক এক শিল্পপতিকে হত্যা এবং একজন পাঞ্জাবি গায়কের বাড়িতে গুলি করার দায় স্বীকার করেছে।
রাজস্থান পুলিশ যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় এই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য জগদীপ সিং ওরফে জগ্গাকে গ্রেপ্তারের ঠিক এক দিন পরেই এই দুটি ঘটনা সম্পর্কে জানা গেল।
শিল্পপতিকে হত্যাবিষ্ণোইয়ের সন্ত্রাসী দলের সদস্য গোল্ডি ঢিলোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি দর্শন সিং সাহাসিকে তারাই হত্যা করেছে।
বিষ্ণোইয়ের সন্ত্রাসী দলের দাবি, ৬৮ বছর বয়সী সাহাসি একটি বড় মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিষ্ণোই গ্যাং তাঁর কাছে অর্থ দাবি করেছিল। কিন্তু তিনি অর্থ না দেওয়ায় তারা তাকে খুন করে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার সকালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যাবটসফোর্ডে নিজের বাড়ির বাইরে সাহাসিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাড়ির বাইরে সড়কের পাশে দাঁড়ানো সাহাসির গাড়ির কাছে সন্দেহভাজন খুনি তাঁর অপেক্ষায় ওত পেতেছিল।
৬৮ বছর বয়সী শিল্পপতি সাহাসি তাঁর গাড়িতে উঠতেই খুনি তাঁকে নিশানা করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহাসিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
এ ঘটনার সময় সতর্কতা হিসেবে কাছাকাছি থাকা তিনটি স্কুলকে ‘শেল্টার-ইন-প্লেস’ প্রোটোকলের আওতায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়নি বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের বিষ্ণোই গ্যাংকে কেন কানাডায় ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করা হলো০১ অক্টোবর ২০২৫১৯৯১ সালে সাহাসি কানাডায় যানসাহাসি ছিলেন বিখ্যাত টেক্সটাইল রিসাইক্লিং কোম্পানি ক্যানাম ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট।
১৯৯১ সালে সাহাসি কানাডায় পাড়ি জমান। প্রথম দিকে তিনি সেখানে ছোটখাটো কাজ করতেন। পরে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত একটি টেক্সটাইল রিসাইক্লিং ইউনিটের একাংশ কিনে নেন। সেটিকে তিনি বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেন।
সাহাসি কেবল একজন সফল শিল্পপতিই ছিলেন না, একজন সমাজসেবীও ছিলেন। তাঁর মৃত্যু অ্যাবটসফোর্ড এবং কানাডার পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের মধ্যে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
অনেক কমিউনিটি নেতা এই ঘটনাটিকে কানাডার ভারতীয় অভিবাসীদের নিরাপত্তার জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং পুলিশের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গায়কের বাড়িতে গুলিলরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের দ্বিতীয় অপরাধটি হলো পাঞ্জাবি গায়ক চান্নি নাট্টানের বাড়ির বাইরে গুলি চালানো।
সন্ত্রাসী দলের সদস্য ঢিলোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে লিখেছে, নাট্টান গায়ক সর্দার খেরার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এই গুলি চালানো হয়।
ঢিলোঁ জানিয়েছে, নাট্টানের সঙ্গে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তবে তারা সতর্ক করে দিয়েছে, খেরার সঙ্গে কাজ করা যেকোনো গায়ক তাদের ক্ষতির জন্য নিজেদেরই দায়ী থাকবে।
আরও পড়ুনকানাডায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ভারতীয় বিষ্ণোই গ্যাংকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি১০ আগস্ট ২০২৫লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং আসলে কীকানাডা সরকারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী কাজ করা ৭০০ জনের বেশি শুটারের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।
এই গ্যাংটি র্যাপার এবং রাজনীতিবিদ সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যা, বলিউড অভিনেতা সালমান খানকে হুমকি দেওয়া এবং খালিস্তানপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি হাই প্রোফাইল মামলার সঙ্গে যুক্ত।
আরও পড়ুনগ্রামের কিশোর থেকে আন্তর্জাতিক গ্যাং লিডার—জেলে বসেও নিয়ন্ত্রণ করেন অন্ধকার জগৎ০৯ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ত র স শ ল পপত র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।