দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনে পাহাড়িদের বাঁশনৃত্য বেশ জনপ্রিয়। বাঁশের বাজনার তালে তালে নৃত্যের ছন্দে মোহিত হন দর্শকেরা। বম জনগোষ্ঠীর এই নৃত্যে মানুষ এখন পুলকিত হলেও এর উৎপত্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শোক। বম সমাজে অপঘাত আর প্রসবজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির সৎকার না হওয়া পর্যন্ত তাঁর ঘরের উঠানে এই নৃত্য করা হয়।
বমদের সমগোত্রীয় লুসাই ও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যেও বাঁশনৃত্যের প্রচলন রয়েছে। কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও দেশের বাইরে উত্তর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে বাঁশনৃত্য রয়েছে।
বম ভাষায় বাঁশনৃত্যকে বলা হয়—রোখা ত্লা। এর অর্থ, বাঁশের মাঝে পা ফেলে শোকের নাচন। বমরা বাঁশনৃত্যের সঙ্গে করুণ সুরে গান করেন। করুণ এই গানের একটি—‘রোখা ত্লা হেন রোখা ত্লা হে/ আই কালান কান পু লুচু; যার অর্থ অসময়ে তোমার চলে যাওয়া আমার জন্য অসহনীয়।
বান্দরবানের বম জনগোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে অপঘাতে বা প্রসবজনিত জটিলতায় মৃত্যুর কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে অসহনীয় শোক তৈরি হয়, তা লাঘবের চেষ্টা করা হয় বাঁশনৃত্যের মাধ্যমে। তরুণ-তরুণীরা পালাক্রমে এই নৃত্য পরিবেশন করেন। এর মাধ্যমে শোকাহত পরিবারের সদস্যরা মানুষের সমবেদনা ও সহমর্মিতা খুঁজে পান। এ ছাড়া বাঁশের তালে তালে নৃত্য আর গানে তাঁদের শোকের লাঘব হয়। স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই নৃত্য করা হয় না।
বোম রামলিয়ান বলেন, বিগত শতকের মধ্যভাগে গিটার বাজিয়ে এই শোকনৃত্য করার চেষ্টা হয়েছে। তবে বাঁশের বাজনায় প্রকৃতির যে সুর পাওয়া যায় তা গিটারের তালে খুঁজে পাওয়া যায় না।বোম রামলিয়ান আমলাই বম, সংস্কৃতিকর্মীবান্দরবানের তরুণ সংস্কৃতিকর্মী বোম রামলিয়ান আমলাই বম বলেন, বাঁশনৃত্যে সাধারণত তরুণেরা গানের সুরে এক জোড়া বাঁশের মাধ্যমে বাদ্যের তাল তোলেন। এর সঙ্গে তালে তালে তরুণীরা জোড়া বাঁশের ফাঁকে পা ফেলে নৃত্য পরিবেশন করেন। বাঁশ দিয়ে বাদ্যের তাল তোলা এবং নাচের জন্য সাধারণত শিল্পীর সংখ্যা ৪ থেকে ৮ জন হয়। তবে শিল্পীর সংখ্যা বেশিও হতে পারে।
বাঁশের বাজনার সঙ্গে নাচ পরিবেশন করছেন চার তরুণী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ন ত য
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাম্পিয়ন পেলেন গরু, খাসি রানার–আপের
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কলাকান্দি গ্রামের মাঠে ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার হোমনা, মেঘনা, তিতাস, দাউদকান্দি উপজেলার হাজারো মানুষ রাতভর এ খেলা উপভোগ করেন।
হোমনা উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের কলাকান্দি গ্রামের সমাজকল্যাণ সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে আজ শনিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত এ কুস্তি খেলা চলে। রাতে বেলুন উড়িয়ে কুস্তি খেলার উদ্বোধন করেন হোমনা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলাম।
আয়োজকেরা জানান, প্রতিবছর কলাকান্দি গ্রামের মাঠে এই কুস্তির আয়োজন করা হয়। এবার কুমিল্লার হোমনা, মেঘনা, তিতাস, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, কালাপাহাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রাজশাহীর পবা উপজেলা থেকেও কুস্তি খেলোয়াড়েরা খেলায় অংশ নিয়েছেন।
চট্টগ্রামের আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলায় দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া হোমনা উপজেলার বাঘা শরীফ, ডিপজল, নয়ন, টাওয়ার শরীফ, দাউদকান্দির হাসনাবাদের টারজান দিপু, মেঘনার লায়ন সাত্তার, সোনারগাঁয়ের সরকার শরীফ, বাঞ্ছারামপুরের ওমর বাহার, সিংহ শাহীন, রাজশাহীর পবার ফয়সালসহ মোট ১৫০ জন খেলোয়াড় অংশ নেন।
খেলায় অংশ নেওয়া সবাইকে উপহার দেওয়া হয়েছে। তবে হোমনা উপজেলার মনিপুর গ্রামের বাঘা শরীফকে কৌশলগত ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন ও মেঘনা উপজেলার লায়ন সাত্তারকে রানার-আপ ঘোষণা করা হয়। বাঘা শরীফকে একটি গরু ও লায়ন সাত্তারকে একটি খাসি উপহার দেওয়া হয়।
খেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিলখী ইউনিয়নের সাবেক কুস্তিবীর মোহাম্মদ আলী। সঞ্চালনা করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনির হোসেন।
কুস্তি খেলায় প্রতিযোগীরা নিজেদের শক্তি, কৌশল ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগান