পরিকল্পনার কথা জানালো শিক্ষার্থীরা
Published: 12th, January 2025 GMT
তরুণদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) ময়মনসিংহ জেলা আয়োজন করে সলিউশন হান্ট ২.০। সম্প্রতি দুই দিনব্যাপী এই ইভেন্ট ময়মনসিংহের শাপলা রিসোর্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
ইভেন্টের প্রথম দিন শাপলা রিসোর্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে আটটি ফাইনালিস্ট টিমকে স্বাগত জানানো হয়। দিনের শুরুতে আয়োজন করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সারা দিন প্রতিযোগীদের জন্য বিভিন্ন ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, স্কিল শেয়ারিং এবং মেন্টাল হেলথ অ্যাওয়ারনেস সেশনের আয়োজন করা হয়। ভিবিডি ময়মনসিংহ বিভাগের প্রেসিডেন্ট নুর আলম নাহিদ মানসিক সুস্থতার গুরুত্ব নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন। একঘেয়েমি দূর করতে এবং প্রতিযোগীদের আনন্দ দিতে আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ।
সন্ধ্যায় অ্যালামনাই নাইটে ভিবিডি ময়মনসিংহের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেজর শাফায়াত চৌধুরী অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব এবং বিজনেস মডেল ডিজাইনের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেন। ডেক্কো-ইশো ভেঞ্চারের তারিফ মোহাম্মদ খান এবং গাঙচিল.
দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনফারেন্স হলে প্রতিযোগীদের আইডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়। বিচারকমণ্ডলী প্রতিযোগীদের আইডিয়া বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। অনলাইনে যুক্ত হন জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাকশান্দ ধ্রুব, যিনি প্রতিযোগীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে সাধুবাদ জানান।
দুপুরে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মো. শহীদুল হক। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল স্টার্টআপ মেন্টর তারিফ মোহাম্মদ খান, ভিবিডি খুলনা বিভাগের সভাপতি মো. সানজিদ আহমেদ সজীব এবং অন্য নেতৃবৃন্দ।
বিজয়ী তিনটি দল হলো ফুড সেফটি স্কোয়াড (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), গার্লস টক (নেত্রকোনা), টিম ত্রয়ী (বরিশাল)। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট, মেডেল এবং প্রতীকী চেক। দুই দিনব্যাপী এ কর্মব্যস্ত এবং সৃজনশীল কর্মশালা শেষ হয় একটি আনন্দময় ফটোসেশনের মাধ্যমে। সলিউশন হান্ট ২.০ ছিল তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণের এক অনন্য উদাহরণ। ভিবিডি ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি তানভীর আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, তরুণদের মেধা বিকাশে এ ধরনের আয়োজন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সলিউশন হান্ট ২.০ প্রমাণ করেছে, তরুণরা সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে দেশ গঠনে অসাধারণ অবদান রাখতে সক্ষম। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’