গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা সংশোধন, কমবে কম দামে জমি-গৃহ কেনার প্রবণতা
Published: 12th, January 2025 GMT
সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে গৃহীত ঋণ মূল্যেও তুলনায় কম মূল্যে দলিল সম্পাদন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ‘গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ এর কিছুটা সংশোধন করেছে। এর ফলে একদিকে সরকারি রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা কমবে অন্যদিকে ঋণ গ্রহীতারা ও হয়রানি হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
জানা গেছে, প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ সংক্রান্ত পরিপত্র বিগত ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই জারি করা হয়। বিগত ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর উক্ত নীতিমালায় কতিপয় সংশোধন আনা হয়।
নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.১ গ(২) অনুযায়ী ঋণ প্রদানের জন্য ডেট-ইক্যুইটি অনুপাত হবে ৯০:১০। এর অর্থ হচ্ছে ঋণদানকারী ব্যাংক ফ্ল্যাটের/সম্পত্তির মূল্যের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ দেবে এবং ঋণগ্রহীতা কমপক্ষে ১০ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করবে। উক্ত ঋণ-ইক্যুইটি অনুপাত অনুসরণ করে ঋণ সংক্রান্ত ব্যাংকের কাগজপত্র (যেমন-মঞ্জুরিপত্র, রিপেমেন্ট সিডিউল) যাচাই করে সঠিক প্রাপ্তি সাপেক্ষে ঋণ আবেদন নিস্পত্তি করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও টিডিএম) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণ ও সুদ ভর্তুকি মঞ্জুরের আবেদন প্রক্রিয়াকালে ঋণগ্রহীতা/বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছে বায়নানামা, বন্ধকি দলিল ও ক্রয় দলিল দাখিলের অনুরোধ করা হচ্ছে। সুদ ভর্তুকি মঞ্জুরের আবেদন প্রক্রিয়াকালে প্রাপ্ত উক্ত দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের অঙ্কের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে; মৌজা মূল্যে ফ্ল্যাট/জমি রেজিস্ট্রি করার সুযোগ থাকা এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করায় এমনটি ঘটছে।
সূত্র জানায়, ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক/হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন প্রদত্ত ঋণের অংক দলিল মূল্যে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে কাগজপত্র সঠিক পেলে ঋণ প্রদান করে আসছে। চলমান প্র্যাকটিস অনুযায়ী মৌজা মূল্যে রেজিস্ট্রিকৃত ফ্ল্যাট/জমির ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণ ঋণ চালু হবার পর হতে অর্থাৎ জুলাই, ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত দলিল মূল্য নির্বিশেষে ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের ওপর মাসিক ভিত্তিতে সরকারি সুদ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তবে গৃহীত ঋণের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি হলে পুরো ঋণের ওপর সুদ ভর্তুকি পাওয়া যাবেনা এমন বিষয়টি সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ এ উল্লেখ নেই। কিন্তু ঋণের সাময়িক অনুমোদন দেওয়ার পর নভেম্বর ২০২৪ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনকালে প্রকৃত ঋণ মূল্যের ভিত্তিতে সুদ ভর্তুকি প্রদানের শর্ত আরোপ করায় ঋণ গ্রহীতাগণ ঋণের মঞ্জুরি আদেশ ও সুদ ভর্তুকি প্রাপ্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে আবেদনে জানিয়েছেন। এতে করে তারা ব্যাংকের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না।
বিষয়টি পর্যালোচনায় করে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, যারা সরকারি সুদ ভর্তুকি পাবেন, তাদের কাছ থেকে জমিসহ তৈরি বাড়ি। ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনকালে সরকার যথাযথ রাজস্ব পাবে এবং এ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হবে-
(ক) সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ সংশোধন করে উক্ত নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.১(গ) এর উপানুচ্ছেদ (১)-এ নিম্নবর্ণিত বাক্যটি সংযোজন করা যেতে পারে-
‘এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় ঋণগ্রহীতা অন্ততপক্ষে ঋণের প্রকৃত মূল্য দলিলে প্রদর্শন করবে’
(খ) উক্ত সংশোধনটি ‘প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’ এবং ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’ তেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
(গ) অর্থ বিভাগ ইতোমধ্যে যেসব ঋণের ক্ষেত্রে প্রদেয় সুদ ভর্তুকির সাময়িক মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত আদেশ জারি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৫(ক) এর শর্ত প্রযোজ্য হবে না অর্থাৎ আদেশ জারির তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে।
৬। উপর্যুক্ত পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হলে তিনি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন দেওয়ার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা দূর হবে পাশাপাশি দলিলে কম মূল্যে গৃহ ক্রয় বা নির্মাণ দেখনোর প্রবণতা কমবে এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ে সুবিধা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য ৫ হাজার বডিক্যাম পাচ্ছে বিএসএফ
ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে কর্তব্যরত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের পাঁচ হাজার বডিক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে। ছোট এসব ভিডিও ক্যামেরা শরীরে সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। কাজগপত্রবিহীন বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর দৃশ্য ও তথ্যপ্রমাণ রেকর্ড রাখা এবং কর্তব্যরত বিএসএফ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার একাধিক সূত্র বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নির্দিষ্ট কিছু সীমান্তচৌকিতে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতিও দেওয়া হচ্ছে। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশিদের আঙুলের ছাপ নেওয়া ও চোখ স্ক্যান করে তা বিদেশি নিবন্ধন দপ্তরে পাঠানো হবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে এ দুটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে একটি ‘সমন্বনিত পর্যালোচনার’ পর বিএসএফ সদর দপ্তরের প্রস্তাবিত এ দুটি উদ্যোগ অনুমোদন দিয়েছে।
বিএসএফ সদস্যদের জন্য দুটি ধাপে প্রায় পাঁচ হাজার বডিক্যামেরা পাঠানো হচ্ছে। সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, ক্যামেরাগুলো দিনে–রাতে সমান কার্যকর এবং একটানা প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম।
আরও পড়ুনশেরপুর সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ২১ রোহিঙ্গা ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ২৫ জুলাই ২০২৫সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই বডিক্যামগুলো বিএসএফ যখন কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো বা মাদক, গরু ও জাল ভারতীয় মুদ্রা পাচার, মানব পাচার এবং অনুপ্রবেশ রোধের মতো অপরাধ প্রতিরোধে সীমান্তে অপরাধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবেন, তখন সেসব ঘটনার তথ্যপ্রমাণ রেকর্ডে সাহায্য করবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ফোরামে অভিযোগ করে আসছে, তাদের নাগরিকদের ওপর ভারতীয় পক্ষ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও অন্যায় আচরণ করছে। তবে বিএসএফ বারবার বলেছে, তারা সৈন্যদের প্রাণ রক্ষার প্রয়োজনে শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।
আরও পড়ুনআরও দুই সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ০৫ জুলাই ২০২৫