চাঁদপুরের মতলবে সাবেক স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে থাকা সন্তানকে নিজের দাবি করে না পেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। আজ সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে মতলব দক্ষিণ উপজেলার সারপাড় গ্রামে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে উদ্ধার করে।

সরেজমিন জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার লাকী বেগমের সাবেক স্বামী কুমিল্লার তিতাসের জগৎপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়া (৩৫)। সোমবার তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তাঁর পেটেও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর সাবেক স্ত্রীর নিথর দেহের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি এবং মোস্তফাকে আটক করেছে। নিহত লাকী সারপাড় গ্রামের আন্দী প্রধানীয়া বাড়ির মৃত নজরুল প্রধানীয়ার মেয়ে। তাঁর ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। মোস্তফার ভাষ্য, তিনি চট্টগ্রামে ট্রাকচালক হিসেবে চাকরি করেন। সোমবার সকালে আসেন তাঁর সন্তানকে নেওয়ার জন্য।

লাকীর মামা সারপাড় গ্রামের টুকু প্রধান ও খিলমেহের গ্রামের খালাতো ভাই মো.

রাসেল জানান, লাকী গার্মেন্টসে কাজের জন্য প্রায় আট বছর আগে চট্টগ্রামে যান। সেখানে মোস্তফার সঙ্গে পরিচয় হলে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। কয়েক বছর পর তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। এর পর লাকীর গৌরীপুরে বিয়ে হয়।

কয়েক মাস আগে সেই বিয়েও ভেঙে যায় লাকীর। এক মাস আগে থেকে সারপাড় গ্রামের মামুন প্রধানের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন বলে তারা জানান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লাকী বেগমের ছেলে জুনায়েদ (৬) জানায়, তার মায়ের মুখে ও গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে মোস্তফা।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী লাকীর ফুপাতো বোন প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার বলেন, সকাল ৮টার দিকে লাকী চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বের হন। তিনি আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন, তাঁর গলা ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। এ অবস্থায় মোস্তফা ঘর থেকে ছুরি হাতে বেরিয়ে লাকীর ওপর পড়ে যান।

জেসমিনের ভাষ্য, মোস্তফার সন্তান নয় জুনায়েদ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে এমনই মনে হয়েছে। লাকীর তিনটি বিয়ে হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সোমবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় মোস্তফাকে সারপাড় গ্রামে দেখা যায়। এর আগে তাঁকে কখনও কেউ দেখেননি। তিনি সুস্থ হলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য জেনে তাঁর শাস্তি দাবি করেছেন পরিবারের সদস্য ও এলাকার লোকজন।

এ বিষয়ে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেহ আহমেদ বলেন, মোস্তফাকে আহত অবস্থায় আটক করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ওসি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।

শ্রমবাজারে দুর্বলতা

পাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।

মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।

ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।

পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নীতিসুদ কী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।

কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।

নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।

সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ