সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির-চুমকির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
Published: 22nd, January 2025 GMT
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ (চুমকি) ও মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একই অভিযোগে কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা দায়ের করা হয়।
বিকালে সেগুনবাগিচার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক মো.
তিনি বলেন, “মামলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজের বিরুদ্ধে সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে ৫ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, নিজ নামে নয়টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ১২ কোটি ৩২ লাখ ১৯ হাজার ১১৭ টাকা জমা হওয়ার তথ্য মিলেছে। সম্পদের উৎস গোপন করাসহ তা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।”
এদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ ১২ কোটি ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া, তার নিজ নামের নয়টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
সাবেক সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে চার কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার স্ত্রী মাহমুদা সিদ্দিকার নামেও মামলা করেছে দুদক। ওই মামলায় স্ত্রীর সঙ্গে আসামি হয়েছেন সরওয়ার জাহান। মাহমুদার নামে এক কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫